পোর্ট সিটিতে ডেলপোর্ট তাণ্ডব

মোটামুটি একটা ভাল শুরুই পেয়েছিলো এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের অপরাজিত দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। যদিও শুরুতে তাঁরা তরুণ মাহমুদুল হাসান জয়ের উইকেটটি হারিয়ে ফেলে। কিন্তু প্রাথমিক বিপর্যয় সামলে নেন লিটন কুমার দাস ও অভিজ্ঞ ফাফ ডু প্লেসিস।

এই দুইজনের ব্যাট আজকে হেসেছে। তবে একজনের ব্যাট থেকে আগুনের ফুলকি বেড়িয়েছে ইনিংসের শেষের দিকে। দক্ষিণ আফ্রিকান খেলোয়াড় ক্যামেরন ডেলপোর্টোর ব্যাটিং তান্ডব দেখলো চট্টলাবাসী। দলীয় ৮৪ রানে দারুণ ছন্দে থাকা লিটন নাসুমের বলে আউট হওয়ার পর দলীয় অধিনায়ক ইমরুল কায়েস ডেলপোর্টের আগে এসেছিলেন ক্রিজে।

তবে, অভিজ্ঞ ইমরুল ব্যাট হাতে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। তিনি আউট হয়ে যান মাত্র এক রানেই। এরপর যা কিছু হয়েছে তাঁর কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন ক্যামেরন ডেলপোর্ট।

যেহেতু অভিজ্ঞ ফাফ ছিলেন এবং ভাল স্বস্তিজনক এক অবস্থায়ই ছিলেন। ব্যাটে রানও আসছিলো তাঁর। লিটনের সাথে জুঁটিটাও হয়েছিলো বেশ। সুতরাং সবাই হয়ত প্রত্যাশা করেছিলো যে ইনিংসের শেষের দিকে ফাফ হাত খুলে ব্যাট করবেন। কিন্তু তা আর হতে দেননি ডেলপোর্ট।

ফাফকে দর্শক বানিয়ে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স বোলারদের তুলোধুনো করলেন ডেলপোর্ট। নিজের ইনিংসের শুরু থেকেই মারমুখি ছিলেন তিনি। যেহেতু দল একটা ভাল অবস্থানে ছিলো। সাথে সাতটি উইকেট ছিলো। সুতরাং ডেলপোর্ট সম্পূর্ণ নির্ভার হয়ে চালিয়েছেন তাঁর ব্যাট।

কি অপূর্ব এক ব্যাটিং প্রদর্শন তাঁর! মাত্র ২৩টি বল খেলে পাড় করে ফেললেন অর্ধশতক রানের মাইলফলক। আর শেষের দিকে এক শরিফুল ইসলামের ওভারেই নিয়েছিলেন ২৩ রান। নিশ্চয়ই ইনিংসের শেষ ওভারে ডেলপোর্ট অমন বেধম পিটুনি শরিফুলকে মানসিক পীড়া দেবে দিনভর।

চারটি চার ও একটি ছয়। শেষ বলে একটি সিঙ্গেল। ব্যাস, এইটুকুই ছিলো শেষ ওভারে। কিন্তু এই ২৩ রান কুমিল্লাকে এনে  দিয়েছে ১৮৩ রানের এক বিশাল সংগ্রহ আর ফাস্ট বোলার শরিফুলকে উপহার দিয়েছে রাজ্যের বিষাদ।

প্রায় ২২১.৭৩ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন ডেলপোর্ট। ছোট্ট এক ইনিংসে তিনি চার মেরেছেন চারটি। তাছাড়া হাওয়ায় ভাসিয়ে বল মাঠ ছাড়া করেছিলেন তিন তিন বার। সবগুলোই ছিলো দারুণ টাইমিং এর সুবিশাল সব ছক্কা।

এমন বিধ্বংসী ব্যাটিং এর মাধ্যমে প্রোটিয়া ব্যাটার নিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তুলে নিয়েছেন ৩১তম অর্ধশতক। তবে বলতেই হচ্ছে ডেলপোর্টের জন্যে এই ভীত গড়ে দিয়েছিলো ফাফ এবং লিটন জুটি।

পুরো ম্যাচে অ্যাংকর রোলটা প্লে করেছেন ফাফ। প্রথমে তিনি জুঁটি বাঁধলেন লিটনের সাথে। এই জুঁটি থেকে কুমিল্লার বোর্ডে যুক্ত হয়েছে ৮০ রান মাত্র ৫০ বলে। ভাল ছন্দে থাকা লিটন হতাশ করেছেন সমর্থকদের। নতুবা তিনিও তুলে নিতে পারতেন অর্ধশতক।

৪৭ রানে আউট হয়ে গেলেও দলের রান সংগ্রহে তা প্রভাব ফেলেনি ফাফ ডু প্লেসিসের দক্ষতায়। তারপর ফাফ যে শুধু দাঁড়িয়ে থেকে ডেলপোর্টের ব্যাটিং দেখেছেন তা কিন্তু নয়। তিনিও চালিয়েছেন ব্যাট।

যার সুবাদে ফাফ-ডেলপোর্ট জুঁটিতে যুক্ত হয় আরো ৯৭ রান। যার অধিকাংশ রানই ছিলো ডেলপোর্টের। ৫১ রান এসেছিলো তাঁর ব্যাট থেকে। আর অপরপ্রান্ত আগলে রাখা ফাফ ডু প্লেসিস যুক্ত করেছেন আরো ৪৬ রান। ব্যাটারদের হাস্যজ্জ্বল দিনে কুমিল্লার বোলারদেরও আঁটসাঁট বোলিং এ নিজেদের তৃতীয় জয় তুলে নিয়ে বিপিএলে এখন অবধি নিজেদের অপরাজিত যাত্রা অব্যাহত রাখলো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link