কার্লোস কাইজার, দ্য গ্রেটেস্ট কনম্যান অব ফুটবল!

সাংবাদিকদের সাথেও বেশ ভালো সম্পর্ক রাখতেন কাইজার। যারা কাইসারকে নিয়ে বিভিন্ন ফিকশনাল স্টোরি লিখতেন। এমনকি তখন পত্রিকায় এমনও লিখা হয়েছিল যে পুয়েব্লার হয়ে অসাধারণ সিজন পাড় করার পর তাঁকে মেক্সিকো জাতীয় দলেও খেলার অফার করা হয়েছিল। অথচ, ক্লাবটির হয়ে একটিও ম্যাচ খেলেননি তিনি। এছাড়া বিভিন্ন বড় ক্লাবের সাথে ভুয়া চক্তিপত্র বানিয়েও তাঁর সাংবাদিক বন্ধুদের দিয়ে প্রচার করাতেন তিনি। এভাবেই কোনো ম্যাচ না খেলেও বেশ আলোচনায় থাকতেন কার্লোস কাইজার। ভাবুন, কি একটা অবস্থা!

ব্রাজিলের ফুটবলে এসেছিল এক বিচিত্র চরিত্র। যিনি কখনোই ফুটবল ম্যাচ খেলতে চাইতেন না। তবে তাঁর জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ফুটবলার হওয়া। ম্যাচ খেলবেন না বলে আজীবন কত রকমের অভিনয় করে গিয়েছেন। ব্রাজিলের ক্লাব ফুটবলের বেশ নামী-দামী দলও তাঁকে দলে ভিড়িয়েছে। তবে আজও আমরা জানিনা তিনি কী আদৌ ফুটবলার ছিলেন কিনা। তিনি হচ্ছেন ব্রাজিলের তথাকথিত স্ট্রাইকার কার্লোস কাইজার।

কার্লোস কাইজারের জন্ম হয় ১৯৬৩ সালের ২ এপ্রিল। কাইজার তাঁর কিশোর বয়সে ব্রাজিলের ফুটবল ক্লাব বোটাফোগোর হয়ে পেশাদার ফুটবলে যাত্রা শুরু করেন। ১৯৭৯ সালে একটি ট্রেনিং সেশনে কাইসারকে দেখে মেক্সিকান ক্লাব পুয়েব্লা তাঁকে দলে ভিড়ায়। এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। তবে ওই যে বললাম কাইজার কখনো ফুটবল খেলতেই চাইতেন না। পুয়েব্লার হয়ে একটা ম্যাচে খেলেননি তিনি।

কয়েক মাস পর পুয়েব্লা তাঁকে ছেড়ে দিলে সে আবার ব্রাজিল ফিরে আসে। ব্রাজিলের কিছু শীর্ষ ফুটবলারের সাথে এই সময়ে বন্ধুত্ব করেন কাইজার। তাঁর বন্ধুর তালিকায় ছিল কিংবদন্তি ফুটবলার জিকোর নামও। যারা তাঁকে বিভিন্ন ক্লাবগুলোতে কেনার জন্য সুপারিশ করতেন। যেহেতু তাঁর ওই ক্লাবগুলোর হয়ে খেলার মত স্কিল ছিল না তাই সে প্রথম সপ্তাহ ফিটনেস ট্রেনিং করেই কাঁটিয়ে দিতেন।

তারপর অন্য ফুটবলারদের সাথে অনুশীলন করার সময় এলেই তিনি হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির বাহানায় বসে থাকতেন। কিছুদিন পরপর এমন ভাবেই বিভিন্ন দলে কন্ট্রাক্ট সাইন করতেন কিন্তু ,ম্যাচ আর খেলতেন না তিনি। যেহেতু এখনকার মত টেকনোলজি ছিল না তাই তাঁর এই ভুয়া ইনজুরিও তখন ক্লাব গুলো ধরতে পারতো না।

এছাড়া সাংবাদিকদের সাথেও বেশ ভালো সম্পর্ক রাখতেন কাইজার। যারা কাইসারকে নিয়ে বিভিন্ন ফিকশনাল স্টোরি লিখতেন। এমনকি তখন পত্রিকায় এমনও লিখা হয়েছিল যে পুয়েব্লার হয়ে অসাধারণ সিজন পাড় করার পর তাঁকে মেক্সিকো জাতীয় দলেও খেলার অফার করা হয়েছিল।

অথচ, ক্লাবটির হয়ে একটিও ম্যাচ খেলেননি তিনি। এছাড়া বিভিন্ন বড় ক্লাবের সাথে ভুয়া চক্তিপত্র বানিয়েও তাঁর সাংবাদিক বন্ধুদের দিয়ে প্রচার করাতেন তিনি। এভাবেই কোনো ম্যাচ না খেলেও বেশ আলোচনায় থাকতেন কার্লোস কাইজার। ভাবুন, কি একটা অবস্থা!

তারপর তিনি ১৯৮৬ সালে ইউরোপে চলে যান। সেখানে তিনি ফ্রান্সের দ্বিতীয় ডিভিশনের একটি ক্লাবের সাথে কন্ট্রাক্ট সাইন করেন। ক্লাবটি তাঁকে স্বাগত জানাতে ফ্যানদের সাথে একটি ট্রেনিং সেশনের আয়োজন করে। সেখানে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে কাইসার সব গুলো বল দর্শকদের দিকে কিক করেন। খুব স্বাভাবিক ভাবে না তাল-বাহানায় ওই ক্লাবটির হয়েও কোনো ম্যাচ না খেলেই আবার দেশে ফিরে আসেন কাইজার।

ব্রাজিল ফিরে এসে বাঙ্গু ক্লাবে যোগ দেন তিনি। সেখানেও তিনি তাঁর এই ইনজুরির অভিনয় করেন। ক্লাবটি তাঁর এই ইনজুরি দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে একদিন তাঁকে জোর করেই মাঠা নামানোর চেষ্টা করে। তাঁকে । কাইজারকে যখন ওয়ার্ম আপে পাঠানো হয় তখন তাঁর দল ২-০ গোলে হারছিল। তাই দর্শকরা তাঁর দলের ফুটবলারদের গালা-গালি শুরু করলে কাইসার গ্যালারিতে গিয়ে দর্শকদের মারতে থাকেন। সাথে সাথে রেফারি তাঁকে রেড কার্ড দিলে সেই ম্যাচও তাঁকে আর খেলতে হয় না।

এভাবেই ফটবল না খেলেও সারাজীবন ফুটবলারের চরিত্রে অভিনয় করে গিয়েছেন কার্লোস কাইসার। ২০১৫ সালে তাঁকে নিয়ে সিনেমাও বানানো হয়। ২০১৮ সালে তাঁকে নিয়ে একটি বই লিখা হয় যার নাম – কাইজার, দ্য গ্রেটেস্ট ফুটবলার নেভার টু প্লে ফুটবল। স্রেফ দিনের পর দিন ধোঁকা দিয়ে এমন খ্যাতি পৃথিবীতে এর আগে পরে কেউ পাননি!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...