যোদ্ধা ফুটবলার বললে এই জেনারেশনের বেশিরভাগের মাথাতেই প্রথম নামটা আসে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো’র। তবে ক্রিস বাদেও যোদ্ধা আরো কয়েকজন আছে যারা অত সফলতা না পাওয়ায় ফ্রন্টে আসতে পারেনি। সব যোদ্ধা সমান ভাবে সফলও হতে পারে না। কিন্তু সফল না হলেও অনেক যোদ্ধা অনেক ফুটবল অজ্ঞের মনের কোণে গেঁথে থাকেন।
একটা সময় ছিল যখন মেসিকে পরিকল্পনা মত আটকে ফেললে আর্জেন্টিনা তা থেকে বের হতে পারবে কিনা নির্ভর করতো তেভেজের উপর। তিনি আর্জেন্টিনা থেকে উঠে আসা বিশ্ব ফুটবলের উদীয়মান খেলোয়াড়দের মধ্যে অন্যতম। আর্জেন্টিনায় একসময় প্রতিভাবান খেলোয়াড় এলেই তাকে নতুন ম্যারাডোনা নাম দেওয়া হত। ম্যারাডোনা একসময় তাকে আর্জেন্টিনার ২১ শতকের গুরু আখ্যা দিয়েছিলেন।
কিন্তু মানুষ দিন শেষে সফলতাকে মনে রাখে। তাই অনেকেরই মনে নেই আর্জেন্টিনাকে প্রথম অলিম্পিক সোনা জিতিয়েছিলেন কার্লোস তেভেজ এবং টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনি। এর আগে ক্রেসপো-ওর্তেগারা যেটা পারেননি, ২০০৪ সালে গ্রিস অলিম্পিকে সেটা করে দেখালেন তিনি। আর্জেন্টিনাকে প্রায় জিতিয়ে ফেলেছিলেন সেই বছরের কোপা আমেরিকাও, আদ্রিয়ানোর শেষ মুহূর্তের ঝলকে ভেস্তে যায় সেটা।
ম্যারাডোনার রেকর্ড ভেঙেই গড়েন সবচেয়ে কম বয়সে দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবলার অব দ্য ইয়ারের রেকর্ড। এরপর কি হল ? ব্রাজিলিয়ান ক্লাব কোরিন্থিয়ানস তাদের ক্লাবের পরিকল্পনায় আনলেন এক আর্জেন্টাইনকে। শত্রু দেশের একজন খেলোয়াড় কি করতে পারবে সে যতই ভালো খেলুক তা নিয়ে সবার মাঝেই চিন্তা ছিল। কিন্তু জিতলেন ব্রাজিলিয়ান লিগ। এখানে থেকেও হলেন দক্ষিণ আমেরিকার বর্ষ সেরা ফুটবলার।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের কথাই ধরুন। ল্যাটিন অঞ্চলের কেউ কিন্তু সেই অর্থে সফল নন সেখানে। ভেরন-ক্রেসপো ব্যর্থ। কিন্তু, তেভেজ সমান সফল ওয়েস্ট হ্যাম, ম্যানচেস্টার সিটি আর ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেডের হয়ে।
ল্যাটিনের ফুটবলাররা স্বাভাবিকভাবেই একটু দরিদ্র হয়। সেখান থেকে লড়াই করে অনেকে বের হয়ে আসেন। তেভেজও তেমনই একজন। দশ মাস বয়সে তার গায়ে গরম পানি পড়ে, এ সময় তার শরীরে তৃতীয় মাত্রার পোড়া ক্ষত সৃষ্টি হয় এবং এর ফলে তাকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে প্রায় ২ মাস থাকতে হয়। কিন্তু তাঁদের দারিদ্র এতটাই তীব্র ছিল যে দাগ মোছার জন্য সেভাবে চিকিৎসা করানো হয়নি। মুখের দাগটা আজও সেই দগদগে স্মৃতি বহন করে চলেছে।
এখন অবস্থা পাল্টেছে, কত টাকা, চাইলে প্লাস্টিক সার্জারির হাসপাতাল দিতে পারেন, তবু প্লাস্টিক সার্জারি করাতে রাজি নন। কেন? তাঁর ভাষায়, ‘এ দাগটা তো আমি কী ছিলাম, সেটা আমাকে মনে করায় সব সময়। আমি তো সেই মানুষই, দারিদ্র্যপীড়িত-সাধারণ। নিজের কাছে নিজেকে বদলাতে চাই না। মানুষের কাছেও বদলাতে চাই না।’
মানুষ তেভেজ বদলাতে চান না। দরকার নেই।
তো কিছু করেও তেভেজ কে কেন মানুষ সেভাবে মনে রাখে না? কারণ তেভেজ সাইড হিরো, সব সময় মূল নায়কের পাশেই যার পদচারণা। আর্জেন্টিনায় মেসির ছায়ায়, ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেডে রনের ছায়ায় ঢাকা পড়েছেন। পারফর্মেন্সটাও অবশ্য একসময় খেঁই হারিয়ে ফেলেছে।
আর্জেন্টিনার হয়ে ৭৬ ম্যাচে মাত্র ১৩ গোল কোনভাবেই তার প্রতিভার কথাটা বুঝাতে পারছে না। তবে আমার কাছে পারফর্মার তেভেজকে মনে রাখার প্রয়োজন নেই। পরিশ্রমী তেভেজই আমার মনে দাগ কেটে আছে।