পশ্চিম ইউরোপিয়ান দলগুলোর সাথে বরাবরই বিবর্ণ ছিল ব্রাজিল। চোখ কপালে ওঠার মত তথ্য হল, শেষ ২০ বছরে তাদের বিপক্ষে বিশ্বকাপে সেলেসাওদের জয় সংখ্যা ছিল শূন্য। সেই যে ২০০২ বিশ্বকাপ ফাইনালে জার্মানিকে হারিয়েছিল রোনালদো, কাফুরা, এরপর এই অঞ্চলের দেশগুলোর সাথে ৭ বার মুখোমুখি হয়েছিল ব্রাজিল। তাতে মাত্র দুই ড্রয়ের সাথে মিলেছিল ৫ টি হার। তবে অবশেষে ফারা কাটাতে পেরেছে ব্রাজিল। ৮৩ মিনিটে সুইসদের জালে বল জড়িয়ে ম্যাচটি জিতে নিয়েছে সেলেসাওরা।
এ জয়ের মধ্য দিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই শেষ ১৬ নিশ্চিত করল ব্রাজিল। তবে ম্যাচটিতে জয় বের করতে বেশ খানিকটা ঘামই ঝরাতে হয়েছিল সেলেসাওদের। তিতের এ দলটায় আক্রমণভাগ ছিল রীতিমত দুর্দান্ত। কিন্তু এ দিনে সুইসদের বিপক্ষে নায়ক রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন এক ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। তিনি ক্যাসেমিরো।
ব্রাজিল ফুটবলে বিগত বেশ ক’বছর ধরেই ক্যাসিমেরো একটি আশীর্বাদের নাম। ক্যারিয়ারে যতবার ব্রাজিলের হলুদ জার্সি গায়ে মাঠে নেমেছেন একটি ম্যাচ বাদে কোনো ম্যাচেই হারের মুখ দেখেনি ব্রাজিল। ব্রাজিলের দুর্ভেদ্য রক্ষণভাগের পেছনে ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই দারুণ অবদান রেখেছেন তিনি। এ ছাড়া মধ্যমাঠে তাঁর নিয়ন্ত্রণ সব সময়ই ছিল চোখে পড়ার মত। আর ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হয়েও বড় টুর্নামেন্টে গোল করার দক্ষতাও ছিল ক্যাসেমিরোর নামের পাশে।
২০১৯ কোপা, ২০২১ কোপাতে গোল করার ধারাবাহিকতায় এবার কাতার বিশ্বকাপেও গোল পেলেন ক্যাসিমেরো। যদিও আগের বিশ্বকাপেও খেলেছিলেন তিনি। তবে বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথম গোলটা পেলেন এবারের বিশ্বকাপে এসে। এবং গোলটা ঠিক তখনই পেলেন যখন ব্রাজিলের খুব বেশি করে দরকার ছিল।
ব্রাজিলের জন্য ক্যাসিমেরোর এ গোল আরেকটা কারণেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মাঠে এসেছিলেন ২০০২ বিশ্বকাপ জয়ী দলের রোনালদো, কাফুরা। সাথে ছিলেন কাকাও। সে বারের বিশ্বকাপে যাদের নান্দনিকতায় মুগ্ধ হয়েছিল পুরো বিশ্ব, সেই গ্রেটদেরই এক ধরনের পুনর্মিলনী হয়েছিল ব্রাজিল-সুইজারল্যান্ড ম্যাচে। তাই এমন এক নস্টালজিক আবহে ম্যাচটা খুব করে জেতার দরকার ছিল সেলেসাওদের। আর ৮৩ মিনিটে গোল করে এমন একটি উপলক্ষ্য এনে দেন ক্যাসেমিরো।
রড্রিগোর বাড়ানো বল থেকে দারুণ এক শটে ডিফেন্স ভেদ করে সুইজারল্যান্ডের জালে বল জড়ান ক্যাসেমিরো। অমন এক শটে বিধ্বস্ত হয়ে যান স্বয়ং সুইস গোলরক্ষম ইয়ান সোমারও, যিনি পুরো ম্যাচ ধরেই ছিলেন চীনের প্রাচীর হয়ে।
আর ক্যাসিমেরোর গোলের পরেই উল্লাসে ফেটে পড়ে ৯৭৪ স্টেডিয়ামের গ্যালারী। সাথে তিতেও পান স্বস্তি। কারণ নেইমার, দানিলো বিহীন দলটাকে নিয়ে এ ম্যাচটায় তাঁকে বড় একটা পরীক্ষার মধ্যেই পার করতে হয়েছে। তাঁর ট্যাক্টিস নিয়ে সমালোচনা হতেই পারে। তবে আপাতত ক্যাসিমেরোর গোলে সে পরীক্ষায় উতরে গেছেন তিতে।
বিশ্বকাপে এর আগে ব্রাজিল দুইবার মুখোমুখি হয়েছিল সুইসদের সাথে। সে দুই দেখায় প্রত্যেকবারই মাঠ ছাড়তে হয়েছে ড্রয়ের ফল নিয়ে। অবশেষে বহুল প্রতীক্ষিত সেই জয়টা আসল। আর সে ম্যাচ জয়ের নায়ক হয়ে থাকলেন ক্যাসিমেরো। এমন ব্যক্তিগত ব্রিলিয়ান্সই তো ব্রাজিলের প্রয়োজন। আগের ম্যাচে রিচার্লিসন, এ ম্যাচে ক্যাসিমেরো- এ ভাবে ব্যক্তি নৈপুণ্যে আর ৫ টা ধাপ টপকালেই বিশ্বকাপ শিরোপা উঠবে নেইমার, ক্যাসিমেরোদের হাতে।
কাফু, রোনালদোরা পেন্টাজয় করেছিল। এবার তিতের শিষ্যদের পালা হেক্সাজয়ে ব্রাজিলের নাম লেখানোর দিকে। সেটা কি পারবে নেইমাররা? আপাতত সে প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষা করতে হচ্ছে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত।