চরিত্রহীন অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট!

গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট। আর যুগে যুগে ক্রিকেটের এই অনিশ্চয়তার গৌরব বাড়িয়ে গেছেন এক ঝাঁক আলোক বিস্ফোরণকারী চরিত্র। তবে, যত দিন যাচ্ছে, সেই সব চরিত্র পাওয়াটাই যেন এখন পড়ছে ঘোরতর অনিশ্চয়তার মুখে।

গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট। আর যুগে যুগে ক্রিকেটের এই অনিশ্চয়তার গৌরব বাড়িয়ে গেছেন এক ঝাঁক আলোক বিস্ফোরণকারী চরিত্র। তবে, যত দিন যাচ্ছে, সেই সব চরিত্র পাওয়াটাই যেন এখন পড়ছে ঘোরতর অনিশ্চয়তার মুখে।

একটু ভেঙে বলা যাক। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপের সেই ইমরান খান, যিনি নেতৃত্বগুনে একাই মাঠে পার্থক্য গড়ে দিতে জানতেন। যিনি জানতেন কোণঠাসা বাঘ হয়ে কিভাবে দলকে উজ্জীবিত করে ফিরতে হয় খাঁদের  কিনারা থেকে। কিংবা, আশির দশকের সেই ভিভ রিচার্ডস, যার জন্য মেজাজটাই আসল রাজা।

আচ্ছা, সেকাল বাদ দেওয়া যাক। নব্বই দশকেও শেন ওয়ার্ন বা অর্জুনা রানাতুঙ্গারা ছিলেন। শেন ওয়ার্ন একাধারে মাঠে পারফর্ম করে গেছেন, মাঠের বাইরে হাজার বার হাজারো রকমের ‘অপকর্ম’ করে খবরের শিরোনাম বনে গেছেন। অর্জুনা রানাতুঙ্গা ছিলেন আরেক কাঠি সরেস। তিনি আম্পায়ারিংয়ের প্রতিবাদ করে দল নিয়ে মাঠ থেকে বের হয়ে যেতে পারতেন।

বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান কিংবা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইলকে এই প্রজাতির সর্বশেষ দলের একজন বলা যায়। কিংবা বিরাট কোহলি। কিং কোহলির জন্য বিশ্বজুড়ে যে পরিমাণ উন্মাদনা, কিংবা মাঠে তিনি যে পরিমান আগ্রাসন দেখিয়েছেন ক্যারিয়ারের মধ্য গগনে তাতে সাবেক এই ভারতীয় অধিনায়ককে সহজেই এই তালিকায় রাখা যায়। এক মাত্র এমন চরিত্র ছিল না বলেই বাবর আজম কখনও বিরাট কোহলি হতে পারবেন না।

যদিও, এর পরের জায়গাটা শূন্য। এমনকি সাকিব ও বিরাটও নিজেদের এই অবস্থান থেকে নিজেদের অনেকটাই সরিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু কেন? কেন ক্রিকেট এমন চরিত্রহীন হয়ে পড়ছে? কারণ, পেশাদার ক্রিকেট দিনে দিনে তাঁর রং বদলাচ্ছে।

ক্রিকেটাররার লড়াইয়ের চেয়ে অনেক বেশি কর্পোরেট কালচারের চার দেয়ালে বন্দী। ঠিক নয়টা-পাঁচটা না হলেও তাঁদেরও একটা কেতাদুরস্ত ও শৃঙ্খলে আবদ্ধ চাকরিই করতে হচ্ছে। সেই জীবনে বেতন, বোনাস, প্রমোশন, ডিমোশন, অব্যাহতি প্রাপ্তি – সবই আছে। সেটা জাতীয় দল বা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট – সব জায়গাতেই হতে পারে। ক্রিকেটারদের মধ্যেও তাই ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা কমে গেছে অনেকটাই।

আর ক্রিকেট ক্যারিয়ারটাই তো অতটকু ‘যতদিন ব্যাট চলবে’ – ব্যাট যেদিন আপনার হয়ে খেলবে না, বল যেদিন আপনার কথা শুনবে না – তখন আপনি আসলে কেউ না। যতদিন যৌবন আছে, ততদিনই খেলতে পারবেন – আয় করতে পারবেন। এরপর সবটাই শূন্যতা।

তাই তো বিরাট কোহলি আগ্রাসন দেখান বুঝেশুনে। ম্যাচ শেষে জড়িয়ে ধরেন গৌতম গম্ভীরকে। না জড়িয়ে ধরে উপায়ও নেই, বিসিসিআই বা আইপিএলের অফিসিয়াল কাঠামো তাঁকে সেটা করতে বাধ্য করেছে। সাকিবও সব জায়গায় আর স্ট্যাম্প ভাঙেন না, দলকে মাঠ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন না।

হার্দিক পান্ডিয়া হয়তো এ যুগে এসেও কিছু আন-অর্থোডক্স। কিন্তু, দুধের স্বাদ কি আর ঘোলে মেটে ? ক্রিকেট তাই এখন চরিত্রহীন অনিশ্চয়তার খেলা!

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link