‘অপয়া’ কিংবা ‘পয়া’, মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামকে যেকোন কিছুই বলা যায়। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ঘরবাড়ি মিরপুর। এই মাঠটিতেই যেন সকল সাফল্যের গল্প লেখা। এই মাঠটিতেই তো টাইগার ক্রিকেটের যত বড় বড় অর্জন। এই মাঠেই তো তারকা হয়েছেন সাকিব, মুশফিক, রিয়াদ, তামিমরা। তবে মিরপুরের বাইশ গজ নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই।
‘স্লো উইকেট’, মিরপুরে ক্রিকেট আর এই শব্দগুচ্ছ কেউ শোনেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। এই উইকেট নিয়ে দেশ থেকে দেশান্তরে সমালোচনার শেষ নেই। স্লো এই উইকেট ব্যাটারদের জন্যে এক বিভীষিকা। রান তো হয়ই না। স্পিনাররা পিচ থেকে ফায়দা তুলে নিজেদের পকেট ভারি করেন। ‘বাজে উইকেট, এই নিন্দা সইতে না পেরে ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখিয়েছে মিরপুরের বাইশ গজ।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের নবম আসরে এসে নিজের খোলস ছেড়ে বেড়িয়েছে মিরপুরের বাইশ গজ। দিনের দ্বিতীয় খেলায় রানের বন্যা হয়েছে হোম অব ক্রিকেটে। তাছাড়া ব্যাটারদের দূর্বলতায় দিনের প্রথম ম্যাচগুলোতে স্বল্পতেই থেমেছে দলগুলো। স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্তই দিয়েছে মিরপুর। তাইতো প্রত্যাশা বেড়ে গেছে বহুগুণে।
অন্যদিকে ঢাকার প্রথম পর্ব শেষে বিপিএল এবার চলে গেছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে। সেখানকার উইকেট নিয়ে অবশ্য কারো কোন অভিযোগ নেই। চট্টগ্রামের উইকেট বরাবরই স্পোর্টিং। সেখানে রান যেমন হয়, তেমনি বোলাররাও সুযোগ পেয়ে থাকেন। সেখানে বিপিএলের লড়াইটা আরও জমজমাট হতে চলেছে সেটা তো নির্দ্বিধায় বলে দেওয়া যায়। মিরপুর নিত্যদিনের গল্প থেকে বেড়িয়ে এসেছে। স্বভাবজাতভাবেই চট্টগ্রামের উপর তাই প্রত্যাশাটা বেড়েছে।
সমুদ্র পাড়ের নগরে আছড়ে পড়বে রান স্রোত। সেটাই তো চায় দর্শকরা। টি-টোয়েন্টির মূল উপজীব্যই তো চার-ছক্কার ছড়াছড়ি। দর্শকদের বিনোদনের সবটুকুই তো পূরণ করবার লক্ষ্য টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের। সেই সাথে এই ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট গুলোর ভাবনা দর্শকদের স্বস্তি দেওয়া। সারাদিনের ক্লান্তি দূর করবার একটা রাস্তা করে দেওয়া। মিরপুর সেটা দিয়েছে। এবার পালা চট্টগ্রামের।
তবে সবসময়ই যে ক্রিকেট নামক খেলাটার ফলাফল নির্ভর করে উইকেট কিংবা মাঠের উপর তা কিন্তু নয়। খেলোয়াড়দের সক্ষমতাও তো প্রয়োজন। রান বন্যা বইয়ে দিতে হলে তো বলকে আছড়ে ফেলতে হবে বাউন্ডারির বাইরে। সেই কাজটা অবশ্য শুরু করে দিয়েছে চট্টগ্রামে পৌঁছে যাওয়া প্রতিটি দল। বিশেষ করে ঘরের দল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। দলটির খেলোয়াড়রা ব্যস্ত পাওয়ার হিটিং অনুশীলনে।
চট্টগ্রামের স্পোর্টিং উইকেটের ফায়দাটা তুলতে চায় সব দল। সেখানে হাতখুলে খেলার সুযোগটা হেলায় হারিয়ে যেতে দিতে নারাজ চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ও বাকি দলগুলো। তবে ঘরের মাঠে পারফরম করবার বাড়তি চাপ নিশ্চয়ই রয়েছে চ্যালেঞ্জার্সের খেলোয়াড়দের মধ্যে। খুব একটা সুখকর পরিস্থিতিতে নেই দলটি। দুই ম্যাচের মধ্যে একটিতে হেরেছে শুভাগত হোমের দল। তাইতো ঘরের মাঠে, ঘরের দর্শকদের সামনে জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় আফিফ হোসেন ও তাঁর সতীর্থরা।।
আগামী একটা সপ্তাহ পুরো চট্টগ্রামে ছড়িয়ে যাবে বিপিএল উন্মাদনা। সেই উন্মাদনার ঢেউয়ের সাথে রানের বৃষ্টিপাত হবে। লড়াই হবে জম্পেশ। শীত উপেক্ষা করে আলোচনার বিষয়বস্তু হবে বিপিএল। এমন প্রত্যাশাতেই অপেক্ষমান বাংলার ক্রিকেটে সমর্থকরা।