আইপিএল প্রতিভার আঁতুড়ঘর। নতুনদের তুলে আনে, বড় মঞ্চের জন্য প্রস্তুত করে।তবে, আইপিএল কেবল প্রতিভা তুলে আনে না, হারিয়ে যাওয়া প্রতিভাকে ফিরিয়েও আনে। অন্ধকার থেকে আলোয় ফিরিয়ে দেয়। ক্রিকেটের জীবনচক্রে হারিয়ে যাওয়া খেলোয়াড়দের নতুন করে সুযোগ দেয়।
বিশ্বাস না হলে চেতন সাকারিয়াকে দেখুন। সৌরাষ্ট্রের এই বাঁহাতি পেসার গত বছর কেকেআরের জার্সিতে খেলেছিলেন, কিন্তু এবারের নিলামে কোনো দল পাননি। শুধু তাই নয়, রাজ্য দলেও জায়গা হয়নি তার। এক দুর্ঘটনায় তার বল করার হাত প্রায় অকেজো হয়ে গিয়েছিল। এতটাই খারাপ অবস্থা ছিল যে, হাতই তুলতে পারছিলেন না। দিনের পর দিন পড়ে ছিলেন বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট একাডেমিতে। চিকিৎসা চলেছে, থেরাপি চলেছে। কিন্তু ফিরে আসার রাস্তা যেন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
তখনই সামনে এল কলকাতা নাইট রাইডার্স। বিশেষ করে নাইটদের বোলিং কোচ ভরত অরুণ। ভারতীয় পেস বোলিং বিপ্লবের অন্যতম কারিগর এই মানুষটিই চেতনের ক্রিকেট জীবন বাঁচিয়ে দিলেন।
চেতনকে আবিষ্কার করা হয় ডিওয়াই পাতিল টি-টোয়েন্টি লিগে। সেখানে তার বল করার গতি আগের মতো নেই, সুইংও হারিয়ে ফেলেছেন অনেকটা। কিন্তু ভরত অরুণ দেখলেন, চেতনের ইচ্ছাশক্তি অটুট। চেতন জানালেন, হাতের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো, বল করতেও স্বচ্ছন্দ লাগছে। তখনই ভরত বললেন— কেকেআরের শিবিরে আসো, নেট বোলার হিসেবে।
নেট বোলার? অনেকে ভাববেন, এ আবার কেমন প্রস্তাব! কিন্তু সেটাই ছিল তার জীবনের মোড় ঘোরানো সিদ্ধান্ত। কারণ, কেকেআরের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি যখন কাউকে আগলে নেয়, তখন সে নতুনভাবে জন্ম নেয়।
কেকেআর বরাবরই ক্রিকেটারদের পাশে দাঁড়ায়, যখন তারা সংকটে থাকে। সুনীল নারাইনের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল যখন, কেকেআর তাঁকে ছাড়েনি। নারাইনকে নতুনভাবে গড়ে তুলে আবার বিশ্বমঞ্চে ফিরিয়ে এনেছিল তাঁরা।
চেতনের ক্ষেত্রেও সেটাই হলো। ভরত অরুণ চেতনকে বলেছিলেন, ছোটখাটো টি-টোয়েন্টি লিগ খেলে সময় নষ্ট করো না। বরং বড় মঞ্চে আসো, বড় ক্রিকেটারদের সঙ্গে বোলিং করো। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে, অভিজ্ঞতা বাড়বে, নিজেকে ফিরে পাওয়ার সুযোগ পাবে।
আজ চেতন আবার ক্রিকেটের মূলস্রোতে ফিরছেন। হয়তো আগামী আইপিএলে কোনো দলও তাকে কিনবে। লোকে বলবে, আইপিএল মানেই ক্রিকেট-বিত্তের আসর। কিন্তু আসলে আইপিএল মাঝে মাঝে এমন গল্পও লেখে, যা টাকা দিয়ে মাপা যায় না। চেতন সাকারিয়ার গল্পও সেই টাকার পাহাড়কে হার মানাবে।