ইউরোপের মধ্যে ইংল্যান্ড বাদে খুব বেশি লোকজনের কাছে ক্রিকেট পরিচিত কোনো খেলা না। ইতালির কথা বললে এখানে লোকজন ‘ক্রিকেট’ নামের খেলাটার অস্তিত্বই থাকার কথা না। চার বিশ্বকাপজয়ী এই দেশের লোকজনের কাছে খেলা মানেই ফুটবল।
সেই ইতালির এক গ্রেট ফুটবলার বলছেন, তিনি ক্রিকেটার হতে পারতেন এবং সে ক্ষেত্রে তিনি ক্রিস গেইল হতেন! কেবল এটুকুই নয়; তিনি ক্রিকেটের খুটিনাটি নিয়ে আলাপ করেছেন। সেই ফুটবলারটি হলেন সাবেক ইতালিয়ান স্ট্রাইকার ক্রিস্টিয়ান ভিয়েরি।
ক্রিস্টিয়ান ভিয়েরি সাবেক ইতালিয়ান স্ট্রাইকার। ইতালির হয়ে খেলছেন দুইটি বিশ্বকাপ ফুটবল।এছাড়াও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, ইন্টার মিলান, জুভেন্টাসের মত ক্লাবের হয়ে খেলছেন পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে।
কিন্তু ভিয়েরি এমন ক্রিকেট প্রেমী হলেন কেমন করে!
এটা জানতে তার জীবনের শুরুতে ফিরে যেতে হবে। ভিয়েরির জীবনের প্রথমদিকের অংশ কেটেছে অস্ট্রেলিয়াতে। চার বছর বয়সে বাবা মার সাথে পাড়ি জমান অস্ট্রেলিয়াতে। সেখানে অবস্থান করেন ১০ বছর। সেখানে থাকাকালীন সময়ে ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেটও খেলতেন তিনি। সেখানেই তৈরি হয় তার ক্রিকেট প্রেম। এখন পর্যন্ত সেই ক্রিকেট প্রেমে মজে আছেন তিনি।
ক্রিস্টিয়ান ভিয়েরি স্ট্যাট পারফর্ম নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানান, ‘এটা একটু আশ্চর্যজনক যে আমি অস্ট্রেলিয়াতে বড় হয়েছি এবং ক্রিকেট ভালোবেসেছি। সেখানকার স্কুলে আমি ক্রিকেট,ফুটবল এবং আরো বিভিন্ন ধরনের খেলায় অংশগ্রহণ করতাম। আমি ক্রিকেটের অনেক বড় ভক্ত ছিলাম।’
ভিয়েরি আরো জানান, ‘যখন আমার বয়স ১৩-১৪ বছর বয়স তখন আমি সিডনিতে টেস্ট ম্যাচ এবং ওয়ানডে ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলাম।আমি ক্রিকেট অনেক বড় ভক্ত।’
যদিও ভিয়েরির ক্যারিয়ার শেষ পর্যন্ত রান করা নয় গোল করার দিকে গিয়েছি। এরপরও তিনি জানান তিনি হতে পারতেন শীর্ষ মানের কোনো ক্রিকেটার হতে পারতেন। আর তিনি সাদা বলের ক্রিকেটে আরো অনেক বেশি মানিয়ে নিতে পারতেন।
তিনি নিজের ক্রিকেট খেলা সম্পর্কে জানাতে গিয়ে বলেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল বাঁহাতি ব্যাটসমান। আমি টেস্ট ম্যাচ খেলার মত ক্রিকেটার ছিলাম না। আমি বল স্টেডিয়ামের বাইরে পাঠাতে পছন্দ করতাম।আমার মনে হয় আমি গেইলের থেকেও ভালো খেলতে পারতাম।’
নিজের ক্রিকেটপ্রেম নিয়ে ভিয়েরি বলছিলেন, ‘আমি ক্রিকেট খেলতে ভালোবাসতাম।স্কুলে থাকতে সম্ভবত আমি ফুটবলের থেকে ক্রিকেটই বেশি খেলতাম। আপনি জানতে চান আমরা কিভাবে খেলতাম? টেনিস বলের উপর টেপ প্যাচানো হত। এতে করে অনেক বেশি দ্রুত গতির হত। এছাড়া টেপ প্যাচানোর ফলে বলে ভালো সুইং হত। আমার মনে হয় আমি যদি ক্রিকেট খেলতাম তাহলে আমি সেরা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একজন হতাম। আমি অলরাউন্ডার হিসেবে বেশ ভালোই ছিলাম।’
এখনো ক্রিস্টিয়ান ভিয়েরি ইউটিউবে আশির দশকের কিংবদন্তী স্যার ভিভ রিচার্ডস, জোয়েল গার্নার, ক্লাইভ লয়েডেদের মত তারকাদের খেলা দেখেন।
ভিয়েরি বলেন, তিনি প্রচুর ক্রিকেট খেলা দেখতেন। তার স্ত্রী সবসময় বলে, ‘তুমি সবসময় কি দেখো? এটা কি?’
ক্রিকেট দেখার গল্প করছিলেন ভিয়েরি, ‘১৯৮৪ থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত আমি নিয়মিত তিনঘন্টা করে ক্রিকেট দেখতাম। তখন আমার স্ত্রী বলতো, তোমার কি হয়েছে? তুমি কেন স্বাভাবিক নও। তখন আমি তাকে বলতাম, শোনো আমি অস্ট্রেলিয়াতে বড় হয়েছি। সেখানে আমি নিয়মিত ক্রিকেটকে দেখতাম। পরবর্তী বছরগুলোতে আমি আবার সেখানে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু করোনা মহামারীর জন্য যাওয়া হয়নি। পরিস্থিতির উন্নতি হলে যাবো আশা করি।’
ক্রিস্টিয়ান ভিয়েরি বলেন, ‘যখন একটু গরম পরবে এবং পরিস্থিত কিছুটা স্বাভাবিক হবে আমি ইতালিয় দলের সাথে অনুশীলনে যাবো। দেখবো বল কতটা দ্রুত আসে। আমার মনে হয় এটা খুব ভালো অভিজ্ঞতা হবে।’
ক্রিস্টিয়ান ভিয়েরি ফুটবলার হিসেবে ক্যারিয়ারে অনেক সফল ছিলেন। ইতালিয়ান জাতীয় দলের হয়ে ৪৯ ম্যাচে ২৩ গোল করেছেন। এছাড়াও ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় খেলেছেন ইন্টার মিলানের হয়ে।