‘আইপিলের ধারের কাছেও কেউ নেই’

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাথে খুব ঘনিষ্টভাবে জড়িয়ে ছিলেন একটা সময়। ক্রিকেটে বাংলাদেশের উত্থানের অন্যতম বড় কারিগর তিনি। শুধু বাংলাদেশ নয়, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও জিম্বাবুয়ে দলেরও কোচিং করিয়েছেন, পেয়েছেন সাফল্য। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ও ভারতের বয়সভিত্তিক দলেও কাজ করেছেন ডেভ হোয়াটমোর।

বিরাট কোহলি প্রথমবারের মত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাফল্যের স্বাদ পান কোচ ডেভ হোয়াটমোরের তত্ত্বাবধায়নে, ২০০৮ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারত তাঁর নেতৃত্বেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। সেই জয়ে বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা, যিনি ওই দলে সহ-অধিনায়ক ছিলেন।

প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় পর সেই কোহলির উত্থানে বিন্দুমাত্র বিস্মিত নন হোয়াটমোর। হোয়াটমোর ক্রিকেট বিষয়ক গণমাধ্যম ক্রিকবাজের সাথে কথা বলেছিলেনন আইপিএলের ইতিবাচক প্রভাব, বিরাট কোহলি এবং ভারতের বিদেশের মাটিতে জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে।

আপনি তিন বছর ধরে আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের সাথে জড়িত ছিলেন। দশ বছরে পদার্পণ করার এই মুহুর্তে টুর্নামেন্টটা কতটা বিস্তৃত হয়েছে বলে আপনার মনে হয়?

এটা ঘরোয়া ক্রিকেট হওয়া সত্ত্বেও ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে বেশি কিছু। শুধু খেলোয়াড় নয়, কোচ, সাপোর্ট স্টাফ এবং আম্পায়ারদের জন্যও এটা বিশেষ কিছু। বেশ কিছু দেশ আইপিএলের সাফল্য দেখেছে এবং এরকম কিছু করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আইপিএল একেবারে অন্য ধাঁচের, এর ধারেকাছেও যেতে পারেনি কোনোটা।

ভারতীয় ক্রিকেটাররাই কি সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে এই টুর্নামেন্ট থেকে?

নিঃসন্দেহে। আপনি আইপিএলে সেরা সব ক্রিকেটারদের সাথে কাঁধে কাধ মিলিয়ে লড়ছেন। শুধু অন্য দেশের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়রাই নয়, ভারতীয় সব বড় খেলোয়াড়দের সংস্পর্শে আসার সুযোগ হচ্ছে। দশ বছর ধরে ভারতীয় ক্রিকেটাররা এই সুযোগ পেয়ে আসছে। বর্তমানে ভারতের নতুন প্রজন্মটার এমন ‘ফিয়ারলেস ক্রিকেট’ খেলার পিছনে রহস্য সম্ভবত এটাই। আর তাছাড়া, আইপিএলে কিন্তু শুধু ভারতীয়রাই লাভবান হয়নি!

আপনি বিরাট কোহলিকে অনুর্ধ্ব-১৯ দলে দেখেছেন। তখনকার কোহলি আর এখনকার কোহলির মধ্যে মূল পার্থক্যটা কি বলে মনে করছেন? সে কি একটুও বদলেছে?

ওর অ্যাপ্রোচে আমি কোনো পার্থক্য খুঁজে পাই না। সে সবসময়ই শারীরিকভাবে শক্তিশালী, আগ্রাসী এবং সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে চায়। সে যখন কোনঠাসা হয়ে গিয়েছিলো, সে খুব সচেতনভাবে ওজন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। এটা করার মাধ্যমে সে দারুণ একটা মেসেজ দিতে পেরেছিল সবাইকে, ‘পারফরম্যান্সের উন্নতি নিশ্চিত করার জন্য আমি আমার পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব করে যাচ্ছি।’ এর আগে বিপক্ষ দল তাঁকে অফ স্ট্যাম্পের বাইরে খেলানোর চেষ্টা করতো। (২০১৪ সালে) ইংল্যান্ডে বিরাটের সিরিজটা তেমন ভালো যায়নি। কিন্তু এখন ওকে অফসাইডে খেলতে দেখি যখন, ব্যাটটা সোজা হয়ে আসে এবং ব্যাটের উপরের দিকটা দিয়ে বলকে হিট করে। সে তাঁর ব্যাটিংয়ের দুর্বল দিকগুলো নিয়ে বেশ কাজ করেছে এবং তার ফলটা এখন আমাদের চোখের সামনেই। বিরাট রীতিমত দুর্ধর্ষ এক ক্রিকেটার হয়ে উঠেছে।

কিন্তু মাঝেমধ্যে মনে হয় না, আগ্রাসী হতে গিয়ে মাঝে মাঝে সে কিছুটা সীমা অতিক্রম করে ফেলে?

সে এখনো তরুণ, কাজটা সে এখনো শিখছে। আমি মনে করে, সে তাঁর নিজের মতই আর তাঁর কাজটা মোটেই খুব সহজ কিছু নয়। আমার মনে হয়, সময়ের সাথে সাথে তাঁর নেতৃত্বগুণ আরো শাণিত হবে।

সাম্প্রতিক ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ নিয়ে বেশ বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে কিছু বলুন…

খেলোয়াড়দের কিছু কিছু ব্যাপার সীমা অতিক্রম করেছে, দু দলের খেলোয়াড়েরাই বেশি বেশি কথাবার্তা বলে ফেলেছে। আমার মনে হয় আইসিসির বরং সবসময় মাইক্রোফোনটা অন করে রাখা উচিত। খেলোয়াড়েরা কি বলাবলি করছে সেটা মানুষকে শুনতে দেওয়া উচিত। ব্যাপারটা কিন্তু বেশ ইন্টারেস্টিং হবে!

আপনার মনে হয়, ভারতের এই দলটা বিদেশের মাটিতে নিয়মিত জিততে সক্ষম…

হ্যা, সে সম্ভাবনা তাঁদের মধ্যে রয়েছে। তাঁদের পেস অ্যাটাক, স্পিন, ব্যাটিং গভীরতা সবই আছে। এই সবকিছুই একরকম কন্ডিশন থেকে অন্যরকম কন্ডিশনে বয়ে নিয়ে যাওয়াটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ বছরের শেষের দিকে ওরা দক্ষিণ আফ্রিকায় যাচ্ছে, নিঃসন্দেহে এটা ওদের জন্য বেশ কঠিন একটা সিরিজ হবে বলেই মনে হচ্ছে আমার। আমার পরামর্শ, ওরা বাইরে খেলতে গেলে আগেভাগেই সেখানে চলে গিয়ে ওই কন্ডিশনের সাথে অভ্যস্ত হয়ে নেওয়া উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link