ক্যারিয়ারের শুরু থেকে তার প্রতিভা নিয়ে সংশয় ছিল না কারো। তবে নিবেদন দিয়ে প্রতিভার সদ্ব্যবহার করতে পারছেন কিনা হার্দিক সে নিয়ে টুকটাক আলোচনা ছিলো ভারতের ক্রিকেট পাড়ায়। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর হার্দিককে প্রায় বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়েছিলো সেদেশের সংবাদ মাধ্যম। এবছরের আইপিএল থেকে বদলে যাওয়া হার্দিক যেন সব সমালোচনায় জল ঢেলে দিয়েছেন তার পারফরম্যান্স দিয়ে।
২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের আগেই আইপিএল থেকে নজরে আসেন হার্দিক। আধুনিক ক্রিকেটের চাহিদার যেন সবটুকু নিজের মধ্যে গড়ে নিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন তিনি।
ইনিংসের শেষদিকে নেমে তার ঝড়ো ব্যাটিং, কব্জির জোরে সীমানা পার করার ক্ষমতা, দুর্দান্ত ফিল্ডিং আর ‘স্ট্রিট স্মার্ট’ মিডিয়াম পেস বোলিং এর জন্য তার জাতীয় দলে জায়গা পাঁকা করতে খুব বেশি সময় লাগে নি। এর আগে তিনি মুম্বাইকে তাদের দ্বিতীয় আইপিএল শিরোপা জেতাতে অসামান্য ভূমিকা রাখেন। ভারতীয় গণমাধ্যমে তখন জোর আলোচনা, ভারত কি কপিল দেবের পর একজন আদর্শ পেস বোলিং অলরাউন্ডার পেতে চলেছে?
২০১৬-২০১৮, ক্যারিয়ারে দুর্দান্ত সময় পার করেন হার্দিক। এরপরেই হানা দেয় ইনজুরি।মাঝে বেশ কিছুদিন বোলিং করতে পারেননি তিনি ব্যাক ইনজুরির কারণে। তখন ভারতীয় দল তিনি খেলেছেন শুধুমাত্র একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে।গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও হার্দিক শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবেই দলে খেলেছেন। চোটে পড়া আর এরপর অস্ত্রোপচার হার্দিককে তার সেরা ফর্মের কাছাকাছিও থাকতে দেয়নি।
তার বাজে ফর্মের কারণে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর তার ক্যারিয়ারের শেষ দেখে ফেলেছিলেন অনেকেই। বিশ্বকাপের আগের সিরিজগুলো থেকেই লাগাতার ব্যর্থ হচ্ছিলেন।ভারতীয় দলে তার অন্তর্ভুক্তি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকে। চোট-আঘাত,অস্ত্রোপচার করে হার্দিক শুধু ফিরেই আসেননি,সমালোচকদের মুখে কুলুপ এটে দিয়েছেন।
হার্দিকের অফফর্মের কারণে আইপিএল এ তার দল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সও তাকে ছেড়ে দেয়। এরপরেই বোধহয় নিজেকে বদলে ফেলার পণ করেন হার্দিক। নতুন দল গুজরাট টাইটান্স এর অধিনায়কত্বই শুধু করেননি,দলকে শিরোপা জেতাতে ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং,অধিনায়কত্ব কোনদিক থেকেই কমতি রাখেননি তিনি। আইপিএল এ সবচেয়ে চোখে পড়ার মত বিষয় ছিলো তার ব্যাটিং অর্ডারে উপরে উঠে আসা।
পুরো আইপিএল এর বেশিরভাগ সময় ৪ নাম্বারে ব্যাট করেন হার্দিক,সফলও হয়েছেন। বল হাতেও প্রায় প্রতি ম্যাচেই অবদান রেখেছেন। তবে এবারের আইপিলে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব নতুনভাবে আবিষ্কার করেছে ‘অধিনায়ক হার্দিক’কে। নেতৃত্বগূণ দিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেছেন তিনি,জিতেছেন অধিনায়ক হিসেবে প্রথম আর খেলোয়াড় হিসেবে পঞ্চম আইপিএল শিরোপা। ফাইনালেও দলকে জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। ব্যাট হাতে ৩৪ রান এবং বল হাতে ৩ উইকেট নেন। তার ফাইনালের পারফরম্যান্স যেন পুরো আইপিএল আসরের তার প্রতীকী পারফরম্যান্স।
আইপিএলের পর আবারো ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ‘মধুচন্দ্রিমা’ পার করছেন হার্দিক। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ভারতকে প্রথমবারের মত নেতৃত্ব দেন তিনি। এরপর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে প্রথম ভারতীয় হিসেবে একই ম্যাচে ব্যাট হাতে অর্ধশতরান আর বল হাতে ৪ উইকেট নেন তিনি।
হার্দিক জানিয়েছেন,কি করতে চান সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়ে যাওয়ার কারণে তার ফর্মে ফিরতে সুবিধা হয়েছে। জানিয়েছেন, ‘যে কোনো বিষয়ে বরাবরই স্বচ্ছতা রাখতে ভালোবাসি। যখন কোনো বিষয়ে স্বচ্ছতা দেখব না,তখন বিশ্রাম নিয়ে দুর্বল জায়গা খুঁজে নিয়ে উন্নতি করার চেষ্টা করব। তাড়াহুড়ো করে কোনো কাজ করার চেষ্টা করব না।’
যার ভারতীয় দলে জায়গা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়ে গিয়েছিলো, সেই পান্ডিয়াই এখন ভারতের টি-টোয়েন্টি দলের অপরিহার্য খেলোয়াড়। ব্যাট, বল, অধিনায়কত্ব সব দিক থেকেই দলকে সেরাটা দিয়ে চলেছেন।মাত্র এক বছরের কম সময়ে নিজেকে বদলে ফেলে এখন ভারত দলের ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁস’ হার্দিক। নিজেকে যেভাবে প্রতিনিয়ত ছাড়িয়ে যাচ্ছেন তাতে ভারতীয় গণমাধ্যম এখন বলতেই পারে যে, কপিল দেবের পর তারা একজন আদর্শ পেস বোলিং অলরাউন্ডার পেয়েছে।