করিডোর অব আনসার্টেনিটি

তৃতীয় তালিকাটি আরম্ভ যে বোলারকে দিয়ে করবো তিনি হচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকার শন পোলক। অ্যালান ডোনাল্ড বা ডেল স্টেনের জায়গায় পোলকের নাম দেখে অনেকের ভুরু কুঁচকে যেতে পারে। ভুরু সোজা করে ফেলুন কারণ দক্ষিণ আফ্রিকার এই আণ্ডাররেটেড বোলার একদিনের ক্রিকেটে ভীষণ কার্যকারী ছিলেন।

পোলকের সময়কাল ২০০০ সাল। মোট ৩০৩ ম্যাচে ৩৯৩ উইকেট নিয়েছেন, গড় ২৪.৫১। তবে পোলকের সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হচ্ছে অসাধারণ ইকনমি রেট – ৩.৬৮। কপিল দেব, ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস – সবার চেয়ে বেটার। আর যেহেতু এখনও পর্যন্ত আলোচ্য বোলারদের মধ্যে তার সময়কাল সবচেয়ে পরের, কার্টলি অ্যামব্রোসের সঙ্গেও অনায়াসে তাঁর ইকোনমি রেটের তুলনা করা যেতে পারে।

পোলক মোট এগারো বছর আইসিসির তালিকা অনুযায়ী শীর্ষস্থানীয় একদিনের বোলার ছিলেন। তার সর্বাধিক পয়েন্ট ৯১৭ – একমাত্র গারনার আর হ্যাডলির স্থান তার ওপরে। মোট উইকেটের মাত্র ১৭.৮% টেল এণ্ডারদের – এই ব্যাপারে গারনার আর পোলক একই জায়গায়।

সব মিলিয়ে আমাদের ফাইনাল তালিকায়ও পোলকও থাকবেন। ভুলে গেলে চলবে না যে ব্যাট হাতেও পোলক যথেষ্ট কার্যকারী ছিলেন। সেই জন্য একদিনের ক্রিকেটে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ অলরাউন্ডারদের আলোচনাতেও তাঁর নাম উঠে আসে।

আর মাত্র দুটো নাম বাকি। একটা নাম মোটামুটি সবাই জানেন – গ্লেন ম্যাকগ্রা – সর্বকালের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার। অন্যটা দেখে একটু আশ্চর্য হবেন হয়তো অনেকে – শেন বন্ড। ম্যাকগ্রার সময়কাল ২০০১, তার দখলে ২৫০ ম্যাচ খেলে ৩৮১ উইকেট।

চোটের কারণে বন্ডের ক্যারিয়ার সংক্ষিপ্ত হলেও তার মধ্যেই সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একদিনের বোলার হওয়ার ইংগিত তিনি রেখে গেছেন। উইকেট প্রতি দেওয়া রানের গড়ে তিনি একমাত্র জোয়েল গার্নারের পেছনে – ২০.৮৮। আর স্ট্রাইক রেটে সবার চেয়ে এগিয়ে – প্রতি ২৯.২২ বলে একটা করে উইকেট নিয়েছেন বন্ড। এর আগে ভুল করে লিখেছি, ওয়াকারের স্ট্রাইক রেট সবচেয়ে ভালো। আসলে তখনও বন্ডের পরিসংখ্যান দেখিনি।

বন্ডের ইকনমি রেট অন্যদের চেয়ে একটু বেশি (৪.২৯) হলেও মনে রাখতে হবে বন্ড আমাদের লিস্টের আধুনিকতম বোলার হওয়ায় ব্যাটসম্যানদের দাপটও সবচেয়ে বেশি সহ্য করেছেন। একবার আইসিসির ক্রমের শীর্ষে ছিলেন বন্ড, তার সর্বাধিক পয়েন্ট ৮০৯।

সব মিলিয়ে তবু গ্লেন ম্যাকগ্রা এগিয়ে থাকবেন বন্ডের চেয়ে। তার গড় ২২.০২, ইকনমি ৩.৮৮। আইসিসির শীর্ষে তার অবস্থান ছয় বছর, সর্বাধিক পয়েন্ট ৯০৩।

অফ স্ট্যাম্পের সামান্য বাইরে – আধুনিক ক্রিকেটে যাকে ‘করিডোর অব আনসার্টেনিটি’ বলে – সারাদিন ধরে বল করে যাওয়ার ক্ষমতা ছিল ম্যাকগ্রার। সেই সঙ্গে প্রয়োজন মতো স্যুইং এবং বাউন্স – ব্যাস, আর কিছুর দরকার পড়েনি ম্যাকগ্রার পৃথিবীর বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানদের ঘায়েল করতে।

আকরাম বা হ্যাডলির বৈচিত্র্য হয়তো ছিল না তাঁর বোলিংয়ে কিন্তু তার সাফল্য কোন অংশে কম নয়। আর সাফল্যের সঙ্গে তর্ক চলে না। তবে শুধু ম্যাকগ্রা নয়, শন পোলকও করিডোরে বল করে যথেষ্ট সাফল্য লাভ করেছিলেন।

পোলক আর ম্যাকগ্রার মধ্যে যে কোন একজনকে বেছে নেওয়া মুশকিল। স্ট্রাইক রেট আর গড়ে ম্যাকগ্রা এগিয়ে, ইকনমিতে পোলক। আবার তিনি সবচেয়ে বেশি বছর আইসিসি তালিকার চুড়ায়ও ছিলেন।

এই অধ্যায় শেষ করার আগে ওয়াকার ইউনুসের সম্বন্ধে ছোট্ট একটা আলোচনা সেরে ফেলা যাক। এই শতাব্দীর গোড়ার দিকে কিছু লিস্ট বের করে উইজডেন – টেস্ট এবং একদিনের ক্রিকেটের গত শতাব্দীর সেরা ১০০ পারফর্মেন্স। একদিনের ক্রিকেটে বোলারদের লিস্টে সর্বাধিক বার এন্ট্রি রয়েছে, না, আকরাম বা ম্যাকগ্রা নয়, ওয়াকার ইউনুসের – মোট নয় বার। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন তিনজন – ম্যাকগ্রা, আকরাম আর গার্নার – তিন বার করে।

এই লিস্টের বোলারদের মধ্যে ইনিংসে চার বা তার বেশি উইকেট সবচেয়ে বেশিবার পেয়েছেন ওয়াকারই – মোট ২৭ বার। অর্থাৎ নিজের পিক ফর্মে ওয়াকার ইউনিস ছিলেন একদিনের ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বিধ্বংসী বোলার। তবে এটা খেয়াল রাখবেন যে এই তালিকা গত শতাব্দীর হওয়ায় পোলক, ম্যাকগ্রা বা বন্ডের বেশ কিছু পারফর্মেন্সের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য বিবেচিত হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link