শিশু বেলা থেকে বেশ সম্ভাবনাময় একজন ক্রিকেটার ছিলেন ক্রেগ উইশহার্ট। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করতে উইশহার্টের লেগে যায় ১৮টি টেস্ট। এই ১৮টি টেস্ট খেলতেও কতটা পথ পারি দিতে হয়েছে। কত বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে সেটার হিসেব করেও শেষ করা যাবে না হয়ত।
পুরো নাম ক্রেগ ব্রায়ান উইশহার্ট জন্মেছিলেন জিম্বাবুয়েতে ১৯৭৪ সালের জানুয়ারির নয় তারিখে। ছেলে বেলা থেকেই ক্রিকেটের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠতে থাকে তাঁর। কেননা তাঁর বাবা ছিলেন স্থানীয় একজন বিখ্যাত খেলোয়াড়। ডিএনএতেই ছিল ক্রিকেট খেলাটা। আর তাইতো তিনি ছিলেন একটা লম্বা সময় ধরে জিম্বাবুয়ের সম্ভাবনাময় তরুণ তুর্কি।
মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই পেশাদার ক্রিকেট দীক্ষা নিতে শুরু করেন তিনি, জিম্বাবুয়ের সাবেক তারকা ক্রিকেটার মারি গুডউইনের বাবা জর্জ গুডউইনের কাছ থেকে। তিনি ছিলেন সে সময়ে জর্জের কোচিং ব্যাচের সর্বকনিষ্ঠতম ক্রিকেটার। ক্রেগের চাইতে বাকিরা বয়সে বেশ বড় হলেও তা ক্রেগের প্রতিভা প্রকাশে কোন ধরণের বাঁধার সৃষ্টি করেনি। অবশ্য তাঁর প্রতিভা প্রথম দেখেছিলেন জর্জ।
পারিবারিক বন্ধু হওয়ার খাতিরে তিনি ক্রেগ উইশহার্টের খেলা দেখিছিলেন। তাঁর মনে হয়েছিল উইশহার্ট বেশ সম্ভাবনাময়। তাঁর শুধু দরকার ছিল সঠিক দিকনির্দেশনার। তিনি সে কাজটাই করে দিয়েছিলেন। খানিক দীক্ষা পেয়েই যেন ক্রেগ উইশহার্ট নিজের প্রতিভার সম্পূর্ণটা উজার করে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি তাঁর স্কুল ক্রিকেট দলে নিয়মিত পারফরম করে যাচ্ছিলেন।
এমনকি তাঁর বয়সের থেকে বড়দের সাথেও অনায়াসে পারফরম করছিলেন নিয়মিত। তাঁর ধারাবাহিকতা নিয়ে একটা আলোচনার বন্দোবস্ত হয়ে যায় জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটাঙ্গনে। তিনি রীতিমত বিবেচিত হতে থাকেন অত্যন্ত প্রতিভাবান তরুণ ক্রিকেটার হিসেবে। তেমনটা হওয়াও স্বাভাবিক। তিনি ব্যাট হাতে রান পেতেন। আর তাছাড়া ওই যে ডিএনএ-এর একটা প্রভাব।
তাঁর খেলা দেখে মুগ্ধ হওয়া যেন ছিল অবধারিত। তিনি খেলার ধরণ নজর কেড়ে নেওয়ার মতই ছিল। আর তাঁর জন্যে সবচেয়ে ইতিবাচক বিষয়টি ঘটেছিল একই সময়ে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের টেস্ট ক্রিকেটে পদার্পণের দিকে এগিয়ে যাওয়া। উইশহার্ট যখন একজন খেলোয়াড় হিসেবে পরিণত হতে শুরু করেছিলেন ঠিক তখনই ক্রিকেটের বনেদি ফরম্যাটের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে যেতে শুরু করছিল জিম্বাবুয়ে।
যে বছর জিম্বাবুয়ে আইসিসির পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করে সে বছরই উইশহার্ট শুরু করেন নিজের প্রথম শ্রেণি ক্যারিয়ার। অর্থ্যাৎ ১৯৯২ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পায় জিম্বাবুয়ে। ঠিক তখনই শুরু হয়ে উইশহার্ট হারারে স্পোর্টস ক্লাবের হয়ে প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলতে নামেন প্রথমবারের মত। এর পরের দুই বছর বেশ ব্যস্ত সময় পার করেছিলেন উইশহার্ট। তাঁকে রীতিমত দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াতে হয়েছে।
জাতীয় দলের নির্বাচকদের একটা সুনজর ছিল তাঁর দিকে। তাই তাঁকে পরিণত করেই জাতীয় দলে নিয়ে আসার একটা প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন নির্বাচকরা। তারই ধারাবাহিকতায় জাতীয় দলের আশেপাশে থাকা দলগুলোর হয়ে ক্রেগ উইশহার্ট বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার পাশপাশি ‘এ’ দলের হয়ে সফরকারী দলেও থাকতেন। সেখানে নিজেকে প্রমাণের সুযোগ হাতছাড়া খুব একটা করতেন না।
নির্বাচকদের আস্থা অর্জন করে তিনি অবশেষে জায়গা করে নেন জিম্বাবুয়ের টেস্ট দলে। তবে প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে অন্তত একটি শতকেরও দেখা পাননি ক্রেগ উইশহার্ট। তাছাড়া টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে তাঁকে খানিক খাবিও খেতে হয়েছে। বাঘা-বাঘা বোলারদের সামলাতে হিমশিম খেয়েছেন তিনি। নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম ছয় টেস্ট ম্যাচে কেবল বলার মত একটি হাফ সেঞ্চুরি ছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। তবুও লঙ্কান স্পিনারদের বিপক্ষে তাঁর খাবি খাওয়া যেন ছিল চোখে লাগার মত।
তিনি যেন দেখছিলেন ক্রমশ তাঁর জায়গাটা জাতীয় দলে নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। তাঁর ব্যাটিং পজিশনের হেরফের ঘটলেও তিনি খুব করে চাইছিলেন জাতীয় দলে আরেকটু বেশি সময় কাটাতে। পরবর্তীতে একমাত্র ওপেনিং পজিশন ছাড়া তাঁর দলে থাকাটা খানিক হুমকির মুখে পড়ে যাওয়ার মত অবস্থা ছিল। তিনি তাই ঠিক করলেন ওপেনিংই করবেন তিনি। মিডল অর্ডারের জন্যে আদর্শ একজন ব্যাটার হওয়া সত্ত্বেও তিনি ওপেনিংয়ে ব্যাটিং শুরু করলেন।
তবুও ঠিক যেন নিজের সেরাটা দিতে পারছিলেন না। মূলত তাঁর শট সিলেকশনে ছিল ব্যাপক সমস্যা। তিনি নিজের সে দূর্বলতা ঠিক করে ফিরে আসার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন। তবে নিজেকে ফিরে পাওয়াটা আর তাঁর হয়ে ওঠে না। তাতেই তিনি হারান ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ। প্রবল সম্ভাবনার অকাল প্রয়ান হতে দেখে সবাই। তবে নিজেকে কার্য্যকর একজন খেলোয়াড় প্রমাণের আশায় তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে বোলিংও শুরু করেন। তাতেও খুব একটা দীর্ঘায়িত হয়নি তাঁর ক্যারিয়ার।
মাত্র ২৭ টেস্টে থমকে যায় তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ার। বলার মত শুধু একটা শতকই রয়েছে। অথচ সম্ভাবনার উজ্জ্বল মশাল নিয়েই তিনি পা রেখেছিলেন ক্রিকেটের ময়দানে। তবে সময়ের সাথে জ্বালানির সংকটে আলো স্তিমিত হয়েছে আর তিনি বনে গেছেন খসে যাওয়া তারকা।