ফিক্সিংয়ের গোপন কুঠুরি ও দ্য বিগ ফিশ

যেহেতু স্পট ফিক্সিং খেলার নির্দিষ্ট অংশে করা হয়, তাই এক্ষেত্রে খেলার ফলাফলে কোনো প্রভাব না পড়ার সম্ভাবনাই বেশি! তাছাড়া, স্পট ফিক্সিং শেষ হয়ে গেলে খেলোয়াড়রা তাদের ইচ্ছেমত খেলতে পারে! ওভারপারফর্মের থেকে আন্ডারপারফর্ম সহজ বিধায় খেলোয়াড়দের খারাপ খেলাকেই প্রাধান্য দেয়া হয়! ‘নো-বল’ স্ক্যান্ডাল ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে স্পট ফিক্সিং এখন সাধারণত ব্যাটসম্যানদের দিয়েই করানো হয়!

জীবনকে কখনো কখনো তুলনা করা হয় সিনেমার সাথে! সিনেমায় যেমন প্রতিটি ঘটনা পরিচালকের ইচ্ছে অনুযায়ী ঘটে, তেমনি জীবনের মঞ্চে যে সিনেমার আবির্ভাব, সেই জীবন নামক সিনেমার সকল ঘটনাও স্ক্রিপ্টেড থাকে ওই উপরে যিনি বসে আছেন তার ইশারায়! অনেকের কাছেই জীবনের এক বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে ক্রিকেট! অনেকের কাছে তার থেকেও বেশি!

অনেকের কাছে ক্রিকেটই তার ধ্যান-জ্ঞান, ক্রিকেটই তার সাধনা! জীবন যদি হয় বিস্তীর্ণ আকাশ, আকাশে যে  রঙধনুর বিচরণ, সেই রঙধনুর সাত রঙের একটি ক্রিকেট! অন্যভাবে জীবন যদি হয় বিস্তীর্ন আকাশ, অন্যান্য নক্ষত্র ছাপিয়ে ক্রিকেট এখানে জীবন আকাশের চাঁদ! এখানেই অনন্য ক্রিকেট! চাঁদের যেমন কলঙ্ক আছে, ক্রিকেটের গায়েও মাঝে মাঝে লেগেছে কলঙ্কের কালিমা! সেই কলঙ্ক হচ্ছে ফিক্সিং!

বর্তমান সময়ে পৃথিবীতে মহামারী আকার ধারণ করেছে করোনা ভাইরাস! বিশ্ব ক্রিকেটেও  এক ভাইরাস মহামারী আকারে বিস্তৃতি ঘটিয়েছে!  বিশ্ব ক্রিকেটের সেই মহামারীর নামই ফিক্সিং! সহজ ভাষায় যাকে আমরা বলি ম্যাচ পাতানো!  ভারত থেকে অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইংল্যান্ড থেকে পাকিস্তান, কিংবা শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ  ফিক্সিংয়ের যে ডাল-পালা গজিয়েছে তা ছড়িয়ে পড়েছে ক্রিকেট খেলুড়ে সকল দেশে। ক্রিকেটকে বরাবরই চিহ্নিত করা হয় ভদ্রলোকের খেলা হিসেবে!

ভদ্রলোকের খেলা যদি হয় পূর্ণিমা, ক্রিকেটের অমাবস্যা হচ্ছে তার ফিক্সিং! পাতানো ম্যাচের জন্য অনেকবার অনেক দেশের নামে কালিমা লেগেছে। নিষিদ্ধ হয়েছেন অনেক তারকা ক্রিকেটাররা। তবুও ফিক্সিং বন্ধ হয় নি, অর্থের প্রলোভনে পড়ে নৈতিকতার বিসর্জন দিয়ে ম্যাচ গড়পেটার সঙ্গে যুক্ত হন ক্রিকেটাররা!

  • ফিক্সিং কি?

ফিক্সিং হলো কোনো ম্যাচের ফল বা ম্যাচের নির্দিষ্ট অংশের ফল আগেই নির্ধারণ করা! সহজ ভাষায় খেলার যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো অংশ ফিক্সড করে খেলা!  ফিক্সিংয়ের প্রধান কারণ হলো ফিক্সার ওরফে  জুয়াড়িদের মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা! এই অর্থের প্রলোভন যে এতটাই শক্তিশালী যে লোভ সংবরন করা তখন হয়ে যায় খুবই দুস্কর!

ফিক্সিংয়ের মূল কলকাঠি যখন নাড়ানো হয় পর্দার অন্তরালে থাকা প্রফেশনাল জুয়াড়িদের মাধ্যমে, তখন ফিক্সিং হাজির হয় ক্রিকেট মাঠের বিষফোঁড়া রূপে!    তখন খেলোয়াড়, টিম ম্যানেজমেন্ট এমনকি  ম্যাচ অফিশিয়াল-গ্র্যাউন্ডসম্যানদের  সঙ্গেও জুয়াড়িরা যোগাযোগ করে-অর্থের লেনদেন করে!

ফিক্সিং সাধারণত দুই ধরনের। ম্যাচ ফিক্সিং ও স্পট ফিক্সিং!

প্রথমত, ম্যাচ ফিক্সিংয়ে পুরো ম্যাচের ফলাফল পূর্ব নির্ধারিত থাকে। ম্যাচ ফিক্সিংয়ের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র দুটো অপশন থাকে, উইন অর লস! টেস্ট ম্যাচে শুধুমাত্র ড্রয়ের একটা সম্ভাবনা থাকে! আশি-নব্বইয়ের দশকে এমন ফিক্সিংয়ের ঘটনা হরহামেশাই দেখা যেত! তখন যেকোন দলের গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটারদের নিজেদের পক্ষে নিয়ে এই ফলাফল নির্ধারণ এর পরিকল্পনা করতো ফিক্সাররা!

ধরা যাক, অস্ট্রেলিয়া এবং জিম্বাবুয়ের মধ্যে খেলা হচ্ছে, স্বাভাবিকভাবেই যে কোনো নিরপেক্ষ দর্শকই এখানে তাদের বাজি অস্ট্রেলিয়ার পক্ষেই ধরবে! ধরা যাক এখানে ৭:১ অনুপাতে বাজি চলছে, অস্ট্রেলিয়া জিতলে যে টাকা জুয়াড়িরা পাবে, তার সাতগুন  টাকা পাবে জিম্বাবুয়ে জিতলে! এখানেই অস্ট্রেলিয়ার গুটিকয়েক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে হাত করে খেলার ফলাফল জিম্বাবুয়ের পক্ষে আনা গেলেই জুয়াড়িদের পকেটে ঢুকবে কোটি-কোটি টাকা! তবে এখন আধুনিক যুগে আইসিসির কড়া নজরবন্দিতে এধরনের ফিক্সিং প্রায় অসম্ভব!

দ্বিতীয়ত, স্পট ফিক্সিং হলো যেকোনো ম্যাচের যেকোনো ছোটঅংশে কিংবা কোন নির্দিষ্ট অংশে জুয়াড়ি কর্তৃক ফিক্সড  করা! স্পট ফিক্সিং ম্যাচের চূড়ান্ত ফলাফলকে খুব বেশি প্রভাবিত করতে পারে না। জুয়াড়িদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী প্রায় ৬০/৭০% ম্যাচেই স্পট ফিক্সিং হয়।

দেখা গেলো কোনো এক ম্যাচের মধ্যে একটা সময়ে হঠাৎ রানরেট অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেল, অবচেতন মন ভেবে নিবে ব্যাটসম্যানের বীরত্ব, অথবা আকস্মিক রান রেট কমে গেলে অজান্তেই কল্পনা করবেন বল হাতে বোলারের গড়িমা! তবে যখন শুনবেন এমনটা ঘটেছে জুয়াড়িদের ইশারায়, তখন হয়তো ক্রিকেটের প্রতি আপনার যে বিশ্বাস তা এক নিমিষেই উড়ে যাবে কর্পূরের মতো!

ফিক্সিংয়ের সব থেকে স্মার্ট অপশন স্পট ফিক্সিং। এখানে স্বল্প সময়ে, স্বল্প ঝুকিতে আয় করা যায় কোটি-কোটি টাকা! তাছাড়া ম্যাচ ফিক্সিংয়ে যেখানে সুযোগ থাকে মাত্র একবার, এখানে সুযোগ আসে বারবার! যেকোনো কিছু নিয়ে বাজি ধরা যায় এখানে! যেকোনো একটা সেশনের বাজি ধরা হয় এখানে! ধরা যাক ১০ ওভারের সেই সেশনে ৪০-৪৫ রান উঠবে, এক্ষেত্রে এমন বাজির পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নেয় বাজিকররা। এক্ষেত্রে ফিক্সড করা ব্যাটসম্যান-বোলার যদি ক্রিজে থাকেনই, তাহলেই তাদের ব্যবসা রমরমা!

অনেকসময় বাজি ধরা হয় সেশনের শেষ ওভারের ঘটনা নিয়ে, বলা হয় শেষ ওভারে এক-দুই রানের বেশি উঠবে না, এমনকি মেডেন হবে! সাধারণত যেকোনো ব্রেকের আগে কিংবা পরের ওভারে ব্যাটসম্যানরা খুব বেশি ঝুঁকি নেন না, ফলে তখন রানও ওঠে না খুব বেশি! সুতরাং, এক্ষেত্রে ধরা পড়ে যাওয়ার সুযোগও খুবই কম!

যেহেতু স্পট ফিক্সিং খেলার নির্দিষ্ট অংশে করা হয়, তাই এক্ষেত্রে খেলার ফলাফলে কোনো প্রভাব না পড়ার সম্ভাবনাই বেশি! তাছাড়া, স্পট ফিক্সিং শেষ হয়ে গেলে খেলোয়াড়রা তাদের ইচ্ছেমত খেলতে পারে! ওভারপারফর্মের থেকে আন্ডারপারফর্ম সহজ বিধায় খেলোয়াড়দের খারাপ খেলাকেই প্রাধান্য দেয়া হয়! ‘নো-বল’ স্ক্যান্ডাল ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে স্পট ফিক্সিং এখন সাধারণত ব্যাটসম্যানদের দিয়েই করানো হয়!

মাঝে মাঝেই আমরা ক্রিকেট মাঠেই দেখতে পাই, ব্যাটসম্যান ওভারের মাঝেই প্যাড খুলে ফেলেছে কিংবা গ্লোভস খুলেছে, ক্রিকেটীয় মস্তিষ্কের যেকোনো মানুষ হয়তো সহজাত ঘটনা হিসেবেই দেখবে ঘটনাটা, কিন্তু এটাও হতে পারে জুয়াড়িদের  জন্য একটা ইশারা-সঙ্কেত! হাফ হাতা ছেড়ে ফুল হাতা জার্সি গায়ে জড়ানোও হতে পারে একধরনের ইশারা! ক্রিকেটের সবচেয়ে কমন ঘটনা বোলারের দৌড় শুরু করার পর ছন্দপতনের পর দৌড় থামিয়ে দেওয়া কিংবা অপ্রস্তুত ব্যাটসম্যান বোলারকে ইশারায় থামিয়ে দেওয়া!  হতে পারে ঈশারাটা শুধুই বোলারের জন্য, হতে পারে জুয়াড়িদের জন্য!

  • ডি কোম্পানির আগমন

শাহরুখ খান অভিনীত ‘ডন’ সিনেমায় একটা সংলাপ ছিল – ডন কো পাকাড়না মুশকিল হি নেহি, না মুমকিন হ্যায়!”

তার বেলায়ও এই ডায়লগটা একদম পুরোপুরিভাবেই মিলে যায়। সবাই জানে তিনি আছেন, এফবিআই-ইন্টারপোল কিংবা ভারতের ‘র’ জানে তার অবস্থান, কিন্ত তাকে ধরা যায় না, ছোঁয়াও যায় না! পৃথিবীর সবচেয়ে ওয়ান্টেড পার্সন হয়ে, কতশত অপরাধ করেও তিনি থেকে যান সবার নাগালের বাইরে! সবাই তাকে ভয় পায়। কথিত আছে তার নামে নাকি বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জলও খায়! শোনা যায় সে অমুক জায়গায় আছে-তমুক জায়গায় আছে, অথচ তার খোঁজে সেখানে হানা দিলে লোকটার চুলের নাগালও পাওয়া যায় না! এতটাই ক্ষমতাধর এই ব্যাক্তি!

তিনি দাউদ ইব্রাহিম কসকার। ভারত থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যের আন্ডারওয়ার্ল্ডের কিং!  আমরা সবাই জানি, সবাইই মানি ঈশ্বর নামে কেউ আছেন। কিন্তু ঈশ্বরকে আমরা কেউই চোখে দেখি নি। সবাই জানি ঈশ্বর আছেন কোথাও না কোথাও, সকলের নাগালের বাইরে তিনি আছেন, একদম অনুভবে! দাউদও আছেন কাছাকাছি কোথাও না কোথাও,সবার নাগালের বাইরে, ধরাছোঁয়ার বাইরে! তবে অনুভবে নয়, অসম্ভবে! একারনেই তিনি আন্ডারওয়ার্ল্ডের অবিসংবাদিত ঈশ্বর! ‘ডন’ শব্দটা তার নামের পাশেই সবচেয়ে মানানসই!

১৯৫৫ সালে মুম্বাইয়ের ডংরি এলাকায় অপরাধজগতের যে রূপকথার জন্ম হয়েছিল, সেই রূপকথা আজ ভারতীয় উপমহাদেশের সীমানা পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বিশ্বে! অত্যন্ত সৎ-নিষ্ঠাবান ও ভীষন ধর্মভীরু  পুলিশ কনস্টেবল বাবা, ছেলেকে বিখ্যাত বানানোর স্বপ্নে নাম রেখেছিলেন দাউদ! বিখ্যাত দাউদ ঠিকই হয়েছে, তবে নিজের অপরাধমূলক কাণ্ডকীর্তিতে জগদ্বিখ্যাত নয়, কুখ্যাতই হয়েছে সে। পুলিশ বাবার ঘরে জন্ম নিয়ে অপরাধ জগতের মাস্টার মাইন্ড বনে যাওয়া, সিনেমাকে হার মানিয়ে দেয়া চিত্রনাট্য দাউদের জীবনের!

রেলস্টেশনে বড় ভাই শাবিরের সঙ্গে চুরি করে অপরাধ জগতে হাতেখড়ি দাউদের! তখন মুম্বাইয়ের ত্রাস ছিল বাসু দাদার গ্যাং! দুই ভাই শাবির-দাউদ মিলে বাসু দাদা গ্যাংকে ঠেকাতে তখন গড়ে তুলেন ‘ইয়ং কোম্পানি’ নামে একটি গ্রুপ ! এই ইয়ং কোম্পানি পরে পরিচিতি পায় ‘ডি-কোম্পানি’ রূপে। এই ‘ডি-কোম্পানি’ পরবর্তীতে মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমের পরিচালনায় আন্তর্জাতিক সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র হিসেবে গড়ে ওঠে। যুগযুগ ধরে কন্ট্রাক্ট কিলিং,  গুম, অপহরণ, মাদক চোরাচালান, চাঁদাবাজি, হুন্ডি ব্যবসা সবই নিয়ন্ত্রণ করে আসছে এই ‘ডি-কোম্পানি’।

এই ‘ডি-কোম্পানির’ মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে নিজের অপরাধের ঘাঁটি গড়ে তোলেন দাউদ ইব্রাহিম। দাউদ ইব্রাহিমের ‘ডি-কোম্পানির’ আছে কমপক্ষে পাঁচ হাজার প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত দক্ষ এজেন্ট, যাদের কাজই থাকে দাউদ ইব্রাহিমের সকল কাজ চালু রাখা, যার নিয়ন্ত্রণ করেন আবার স্বয়ং দাউদ ইব্রাহিম নিজেই!

অপরাধ জগতকে দাউদ দিয়েছিলেন এক প্রাতিষ্ঠানিক রূপ। ভারতীয় অপরাধ জগতকে আন্তর্জাতিক অপরাধ পরিমন্ডলে পরিচিত করিয়েছিলেন দাউদ ইব্রাহিম, সমীহ আদায় করেছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ জগতেও! অপরাধের কালো টাকা দিয়ে ইনভেস্ট করা শুরু করেন বলিউডে! একপর্যায়ে দাউদের নজর পরে ক্রিকেটে!

কথিত আছে, নব্বইয়ের দশকে একবার ভারতীয় ড্রেসিংরুমে প্রবেশ করেন দাউদ। তখনকার অধিনায়ক কপিল দেবকে সরাসরি প্রস্তাব করে বসেন ওই ম্যাচ হেরে যেতে, বিনিময়ে প্রচুর পরিমাণে অর্থের লোভ দেখান। কপিল দেব নাকি প্রচুর গালাগাল করে দাউদকে বের করে দেন ড্রেসিংরুম থেকে। দাউদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল ভারত-পাকিস্তান এমনকি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটারদেরও! অনেকেই নাকি দাউদের ইশারায় ফিক্সিং করতেন। অনেকে হয়তো টাকার লোভে করতেন, অনেকে হয়তো ভয়ে। কেউ কেউ স্বেচ্ছায় করলেও বেশিরভাগই যে বাধ্য হয়ে করেছেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না!

ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকায় পৃথিবীর অন্যতম ধনী ব্যক্তি দাউদ ইব্রাহিম। শোনা যায়, তার মোট অর্থের পরিমাণ সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলারেরও বেশি! তার এই বিপুল পরিমান অর্থের যোগানদানের অনেকাংশই আসে ক্রিকেট ম্যাচ ফিক্সিংয়ের মাধ্যমে। দাউদ ইব্রাহীমের হয়ে ম্যাচ ফিক্সিংয়ে  ভূমিকা রাখতে সদা প্রস্তুত দাউদের দক্ষ গ্যাং ‘ডি-কোম্পানি’!  ডি-কোম্পানি’র কিছু নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এজেন্টের  কাজই ম্যাচ ফিক্সিং জনিত সকল কাজের দেখভাল করা। তারা খুবই সুনিপুণ ভাবে এবং উচ্চস্তরের গোপনীয়তা রক্ষা করে ম্যাচ ফিক্সিং করে থাকেন।

ক্রিকেট মৌসুমে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে বসে বাজির আসর। সাধারণত বাজি ধরা হয় শখের বশে। কিন্ত শখের বাজিকররা সেই বাজি থেকে একবার নিয়মিত পয়সা কামাই করা শুরু করতে পারলে, মনের মধ্যে যে কু প্রবৃত্তি আছে সেই কু প্রবৃত্তিকে কাজে লাগিয়ে বনে যান পেশাদার বাজিকর। এখানেই বাজিমাত করে ডি-কোম্পানির এজেন্টরা।

একবার ভাবুন শখের বশে যেখানে অর্থ বিনিয়োগ করা হয়, সেখান থেকে যদি নিশ্চিত ভাবে অর্থ  পাওয়া যায় তাহলে আপনি কি আপনার ভিতরের লোভকে সংবরন করতে পারবেন? বাজিকর দের পক্ষে এই কাজটাই করে থাকে ডি-কোম্পানির এজেন্টরা, সহজ ভাষায় জুয়াড়িরা। সাধারণত প্রতিটা ম্যাচের পূর্বে দলের গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়ারদের সাথে পরিকল্পনা শেয়ার করা হয়। এখানে নির্দিষ্ট একটা খেলোয়াড়কে টার্গেট করে ডি কোম্পানির এজেন্টরা। সেই নির্দিষ্ট খেলোয়াড়কে অর্থের ফাঁদে ফেলে দলের ভেতরকার তথ্যগুলোই খুঁজে আনে ডি কোম্পানির এজেন্টরা। সেই তথ্য বাজিকরদের কাছে পৌঁছে দিয়ে লক্ষ-লক্ষ কোটি টাকা নিজেদের একাউন্টে জমা করে নেন ডি কোম্পানির এজেন্টরা!

‘ডি-কোম্পানি’ তথা দাউদ ইব্রাহিম এতটাই শক্তিশালী যে, তাদের হাতেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে আধুনিক ক্রিকেট! দাউদের টাকার কাছে যেন সবাইই নস্যি! কাতারভিত্তিক টিভি চ্যানেল আল-জাজিরার স্টিং অপারেশনে ধরা পড়া অনিল মনোয়ার তার জবানবন্দিতে বলেছেন, ‘ইফ ইউ হ্যাভ মানি, ইউ উইল ডু এনিথিং!’ একটা লাইনেই বোঝা যায় ডি কোম্পানির টাকার গড়িমা! তাদের নাকি ২৫-৩০ জন তাদের ভাষার তথাকথিত ‘বিগ ফিশ’ ধরাই থাকে, যাদের তথ্য সরবরাহ করে ফুলে ফেঁপে ওঠে ডি কোম্পানির পকেট!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link