বাইশ গজ রাঙিয়ে রঙিন পর্দায়

বলিউড ও ক্রিকেট - ভারতে এই দু’টো ব্যাপারকে কোনো ভাবেই যেন আলাদা করার উপায় নেই। অনেক তারকা ক্রিকেটারকে হরহামেশাই দেখা গেছে রঙিন পর্দায়। প্যাড, গ্লাভস খুলে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন অ্যাকশন – কাটের জগতে।

বলিউড ও ক্রিকেট। একে অপরকে ছাড়া যেন অসম্পূর্ণ। বারবার ক্রিকেট এসেছে সিনেমায়। বলিউডের নায়িকারা প্রেমে পড়েছেন ক্রিকেটারদের। হয়েছেন তাদের লাইফ পার্টনার।

এটুকু হলে মানা যেত, তবে কিছু ক্রিকেটার এসেছেন সিনেমার পর্দাতেও। প্যাড, গ্লাভস খুলে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন অ্যাকশন – কাটের জগতে। বাদ পড়েননি তারকা ক্রিকেটাররাও।

সুনীল গাভাস্কার কিংবদন্তী ক্রিকেটার। তিনিও এককালে সিনেমায় নিজের ভাগ্য পরীক্ষা করেছিলেন। জাতীয় দলের ক্রিকেটার থাকা অবস্থায়ই মারাঠি সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। ‘সালভি প্রেমাচি’ শিরোনামের সে সিনেমা সাড়া ফেলতে পারেনি। তাঁকে দেখা যায় ফ্লপ সিনেমা ‘মালামাল’ – এও।

এরপর তিনি গান গাওয়ার চেষ্টা করেন। সেটিও মারাঠি সিনেমায়। তাঁর গানের জন্য তিনি প্রশংসা কুড়ালেও ফিরে আসেন মাঠে। ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষে সুনীল এখন শীর্ষস্থানীয় ধারাভাষ্যকার।

প্রতিভাবান হওয়ার পরও বড় ক্রিকেটার হতে না পারা বিনোদ কাম্বলি ক্যারিয়ার বড় করতে পারেননি বলিউডেও। বন্ধু শচীনের মতো ক্রিকেট ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিলো না তাঁর, না বাইশ গজে না সিনেমাতে। ২০০২ সালে বলিউডে অভিষেক হয় বিনোদের। সিনেমার নাম ‘অনর্থ’। এখানেও তাঁর ভাগ্য ফেরেনি।

২০০৯ সালে করেন ‘পাল পাল দিল কে সাথ’। ছিলেন অজয় জাদেজাও। কোনোটাই তেমন চলেনি বক্স অফিসে। ২০১৫ সালে একটা কান্নাড়া ছবিও করেন তিনি।

ক্রিকেটার সলিল আঙ্কোলার ক্রিকেট ক্যারিয়ার আলোকিত ছিলো না। শচীন টেন্ডুলকারের সাথে এক সাথে ওয়ানডে অভিষেক হওয়া বাদে তাঁর খুব বড় কোনো ক্রিকেটীয় অর্জন নেই। তাঁকে দেখা যায় ২০০৩ সালে ‘চুরা লিয়া হ্যায় তুমনে’ সিনেমায়। বক্স অফিসে সিনেমাটির নামের পাশে জুড়ে যায় ‘ফ্লপ’ তকমা।

যদিও সলিল এর আগে ২০০০ সালে ‘কুরুক্ষেত্র’ সিনেমায় অভিষিক্ত হন। সে সিনেমায় তাঁর সহশিল্পী ছিলেন সঞ্জয় দত্ত, মহিমা চৌধুরী প্রমুখ। পরবর্তীতে ছোটপর্দায় সরব হন এই সাবেক ক্রিকেটার।

অজয় জাদেজা ছিলেন অন্যতম নব্বই দশকের স্টাইলিশ ক্রিকেটার। কার্যকর ব্যাটিং ও ফিল্ডিংয়ে মাঠ মাতাতেন তিনি। ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে ক্যারিয়ারে ফুলস্টপ পড়ে যায় জাদেজার। পা রাখেন বলিউডে। যদিও, আগে থেকেই বলিউডে বিচরণ ছিল তাঁর। স্বয়ং মাধুরী দিক্ষিতের সাথে তাঁর সম্পর্ক ছিল বলে কাণাঘুষা শোনা যায়।

২০০৩ সালে মুক্তি পায় অজয় জাদেজা অভিনীত ‘খেল’। এ সিনেমায় ছিলেন সেলিনা জেটলি। ২০০৯ সালে করেন ‘পাল পাল দিল কে সাথ’। তবে মাঠের ফর্ম সিনেমায় আর দেখাতে পারেননি সুদর্শন জাদেজা। ফিরে যান মাঠে। এবার ধারাভাষ্যকার হিসেবে।

ভারতের প্রথম বিশ্বকাপ বিজয়ী অধিনায়ক কপিল দেবকেও দেখা গেছে বলিউডের সিনেমায়। তিনি অভিনয় করেন স্টাম্পড, ইকবাল, আরিয়ান ইত্যাদি সিনেমায়। সৈয়দ কিরমানি ও সন্দ্বীপ পাতিলকে দেখা যায় ১৯৮৫ সালের সিনেমা ‘কাভি আজনাবী থে’ সিনেমায়। তাঁদের সিনেমা ক্যারিয়ার আর দীর্ঘায়িত হয়নি।

শুধু ভারতীয় নন, বলিউডে পাকিস্তানি ক্রিকেটাররাও এসেছেন। পাকিস্তানের মহসিন খান একসময় পর্দায় এসেছিলেন। ১৯৮৯ সালে জেপি দত্ত’র ‘বাটওয়ারা’ সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। যে সিনেমায় তার সহশিল্পী ছিলেন ধর্মেন্দ্র, বিনোদ খান্না, ডিম্পল কাপাডিয়া, অমৃতা সিং, পুনম ধীলন, শাম্মি কাপুর, অমরিশ পুরি প্রমুখ।

তিনি পরবর্তীতে ‘ফাতেহ’, ‘সাথী’ ইত্যাদি সিনেমায় অভিনয় করেন। এখানেই শেষ নয়। মহসিন খান বিয়ে করেন অভিনেত্রী রিনা রয়কে। যদিও পারিবারিক জটিলতায় একটা সময় তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। মহসিন পাকিস্তানের কয়েকটি উর্দু সিনেমায়ও অভিনয় করেন।

বাঁহাতি অল-রাউন্ডার সেলিম দুরানি ছয় মারার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। বলা হয়, তিনি নাকি দর্শকচাহিদা অনুযায়ী ছক্কা হাঁকাতে পারতেন। আফগানিস্তানে জন্ম নেয়া এ ক্রিকেটার দেখতে সুদর্শন ছিলেন। তিনি ১৯৭৩ সালে অভিনয় করেন ‘চরিত্র’ সিনেমায়। যেখানে তাঁর বিপরীতে ছিলেন প্রয়াত অভিনেত্রী পারভিন ববি। দু’জনেরই সেটা ছিল অভিষেক ছবি। কোনো এক ভারতীয় পত্রিকা শিরোনা করেছিল – ‘সিক্সি সেলিম, সেক্সি পারভিন’।

কিংবদন্তি স্পিনার বিষেন সিং বেদির ছেলে আঙ্গাদ বেদি দিল্লীর হয়ে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলেন। বলিউডে ভাগ্য পরীক্ষা করান। ‘ফালতু’ সিনেমায় সৌভাগ্য আর ধরা দেয়নি তাঁর। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ওয়েব সিরিজ ‘ইনসাইড এজ’-এ তাঁকে অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্রে দেখা গেছে। এছাড়া সালমান খানের সাথে ‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’ কিংবা অমিতাভ বচ্চনের সাথে ‘পিংক’ ছবি করে তিনি হয়েছেন প্রশংসিত।

‘মুঝসে শাদি করোগি’ সিনেমায় ভারতীয় দলের কয়েকজন ক্রিকেটারকে দেখা যায়। তাদের মধ্যে আছেন ইরফান পাঠান, হরভজন সিং, পার্থিব প্যাটেল, কপিল দেব, মোহাম্মদ কাইফ, আশিষ নেহরা প্রমুখ। এ ছাড়াও ২০০৯ সালে হারমান বাওয়েজা অভিনীত ‘ভিক্টরি’ সিনেমায় ভারত ও অস্ট্রেলিয়া দলের অনেককেই দেখা যায়।

কেউ কেউ আবার আছেন, যাদের পর্দায় অভিষেক বাইশ গজের আগেই হয়েছে। সামান্য কয়েকজনই হয়তো জানেন যে, মাত্র ১১ বছর বয়সে যুবরাজ সিং পাঞ্জাবি একটি ছবিতে শিশুশিল্পীর ভূমিকায় অভিনয় করেন!

ভারতের হয়ে এক টেস্ট ও ছয় ওয়ানডে খেলা যোগরাজ সিং শুরুতে ক্রিকেটার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়লেও পরে অভিনেতা বনে যান। তিনি প্রায় ৩০টি পাঞ্জাবি ও ১০টি হিন্দি সিনেমায় অভিনয় করেন, এখনও তিনি পর্দায় নিয়মিত।  ‘ভাগ মিলখঅ ভাগ’ সিনেমায় মিলখা সিংয়ের কোচের ভূমিকায় দেখা যায় তাঁকে, প্রশংসিতও হন।

 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...