ব্রিসবেন থেকে মেলবোর্ন হয়ে হোবার্টের ট্রানজিট প্রায় সাত আট ঘন্টার। এমন দীর্ঘ পথ ভ্রমণের আগের দিন যদি আপনাকে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানানো হয় আপনি যেতে চাইবেন? বিনয় সুরে সেটি প্রত্যাখ্যান করার সম্ভাবনাই বেশি। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের তো সেই স্বাধীনতা নেই। দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক বিসিবি’র নির্দেশনার বেড়াজালে বন্দী তারা। তাই প্রবাসী বাংলাদেশিদের এক অনুষ্ঠানে ব্রিসবেনে উপস্থিত হতে হয়েছিল সাকিবদের, বাধ্য হয়ে।
সর্বশেষ খবর হল, অনুষ্ঠানটির আয়োজক বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ইন ব্রিসবেনের (ব্যাব) শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা সাকিবদের আচরণের উপর বেজায় চটেছেন ৷ তাদের দাবি, ভিক্টোরি চার্চ বেলবার্ড পার্কের সংবর্ধনা ও নৈশভোজ অনুষ্ঠানে এসে ক্রিকেটারদের কেউ কেউ রীতিমতো অপমান করে গিয়েছেন তাঁদের।
নির্দিষ্ট করে সাকিবের প্রতিই অভিযোগের তীরটা তুলেছেন তারা। ব্যাটে ক্রিকেটারদের অটোগ্রাফ দেওয়ার কথা থাকলেও অন্য ক্রিকেটাররা অটোগ্রাফ দিলেও সেই ব্যাটগুলোতে নাকি সাকিব অটোগ্রাফ দেননি। এ ছাড়া, নিজের বক্তব্যের বেলায় সাকিব এক বাক্যেই শেষ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
ব্যাবের সব অভিযোগ না হয় সত্য হিসেবেই ধরে নেওয়া হলো। তবে এমন পরিস্থিতিতে দায়টা কি শুধুই ক্রিকেটারদের? দু’দিন বাদে বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ। এর মধ্যে আপনাকে এক শহর থেকে আরেক শহরের লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে। এখানে ক্রিকেটারদেরও তো মানসিক ব্যাপারটা বিবেচনা করতে হয়।
তাছাড়া বাংলাদেশ দলের ভিতর থেকে জানানো হয়, তারা নাকি আগে থেকে এ ব্যাপার জানতেনই না। তাদেরকে অবগতও করা হয়নি আগে থেকে। হঠাৎ করেই এ অনুষ্ঠানের ব্যাপারে জানতে পারেন সাকিবরা। ব্যাব আগে থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকে অনুমতি নিয়ে রেখেছিল। তাই সেই নির্দেশনায় বাংলাদেশ দলকে অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও যেতে হয়েছিল ব্রিসবেন প্রবাসীদের অনুষ্ঠানে।
প্রতিটা বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের আগেই বাংলাদেশ দলকে এমন প্রবাসীদের অনুষ্ঠানে যেতে হয়। সমস্যা সেটা না। কারণ প্রবাসীদের আবেগ ভালবাসা আছে বলেই, তারা বাংলাদেশ দলকে সংবর্ধনাসহ একটু কাছাকাছি সময় কাটানোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকে। তবে ক্রিকেটাররা কিন্তু কোনো যান্ত্রিক যন্ত্র নয়। কিংবা তাঁরা চিড়িয়াখানার জন্তুও নন, যে তাঁদের দেখার জন্য এরকম একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে, যেখানে টিকেট কেটে যাওয়ার সুযোগ থাকবে।
নয়টা-পাঁচটা অফিস করা একজন লোকেরও কিন্তু দিনশেষে ক্লান্তি আসে, বিরস মুখে বিরক্তির ছাপ বেরিয়ে আসে। ক্রিকেটাররাও সেটির বাইরে নয়। প্র্যাকটিস, এক শহর থেকে আরেক শহরে ম্যাচের জন্য লম্বা ট্রানজিটে যাওয়া- সব কিছু মিলিয়ে তাদেরও ক্লান্তি আসে, বিরক্তি আসে। কিন্তু ব্যাপারটা হলো, আমরা ক্রিকেটারদের একটা সাধারণ মানুষ হিসেবে বিবেচনা করি না। নিজেদের ভালবাসার বহিঃপ্রকাশে তাদের প্রতিফলন, প্রতিক্রিয়া দেখার অপেক্ষায় থাকি।
আবার সেটির বৈপরীত্য ঘটলে তাদেরকে সমালোচনায় ভাসিয়ে দিই। কিন্তু দিনশেষে, ক্রিকেটাররাও সাধারণ একজন মানুষ। সাধারণের মতো আনন্দ, উচ্ছ্বাসের অনুভূতি যেমন তাদের থাকে রাগ, বিরক্তির অনুভূতিও তাদের মধ্যে বিদ্যমান।
ব্রিসবেনে থাকা প্রবাসীদের উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আশাহত হওয়ার মধ্যে ভুল কিছু নেই। তবে এ ক্ষেত্রে দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা বিসিবির অপেশাদারিত্ব নিয়েও কথা হচ্ছে কম। সাকিবদের সমালোচনার অন্তরালে থেকে যাচ্ছে তাদের অপরিণামদর্শীতা। অথচ ক্রিকেটারদের মানসিকসহ সার্বিক ব্যাপার নিয়ে সচেষ্ট থাকা উচিত ছিল তাদেরই।
বারবারই তাদের অপেশাদারিত্বের ভার কেন ক্রিকেটারদের বয়ে নিয়ে বেড়াতে হয় সেটি প্রশ্ন সাপেক্ষ। তবে স্থান, কাল, পাত্র বিবেচনায় বিসিবি যদি এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতো তাহলে ক্রিকেটার-সমর্থকদের যোগসূত্রে এতটা ভুল বোঝাবুঝির মত পরিস্থিতি তৈরি হতো না।