হ্যাটট্রিক সেঞ্চুরির আভিজাত্য

ক্রিকেটের দুনিয়ায় রেকর্ডের অন্ত নেই। প্রতিনিয়তই কতোশতো রেকর্ড তৈরি হচ্ছে, আবার কতো রেকর্ড ভাঙছেও। এমনিতেও ক্রিকেটে সেঞ্চুরি মানেই তো বিশাল ব্যাপার। কিছু ক্রিকেটার তো সেঞ্চুরি করাকে অনেকটা ‘ছেলের হাতের মোয়া’-র মতো অনায়াস কাজ বানিয়ে ফেলেন।

এক ম্যাচে সেঞ্চুরির পর আরেক ম্যাচে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরির ঘটনা ঘটতেই পারে। কিন্তু যখন ব্যাপারটা হয়ে যায় ব্যাক টু ব্যাক তিন ম্যাচে টানা তিনটি সেঞ্চুরির ঘটনা, তা কিন্তু সচরাচর ঘটমান কোন বিষয় নয়। ক্রিকেটের ক্লাসিক বুক অব রেকর্ডে টানা তিনটি সেঞ্চুরির মতো অদ্ভুত ঘটনা খুঁজলেই পাওয়া যাবে।

যদিও ক্রিকেটে এই ধরণের ধারাবাহিক সেঞ্চুরির রেকর্ড কালের বিবর্তনে ম্লান হয়ে গেছে, বিশেষ করে নব্বই এর দশক থেকে টেস্টে এমন ঘটনা আর চোখে পড়ে না। তাঁর অন্তরালে নিহিত কারণ হলো আধুনিক যুগের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং পদ্ধতির প্রচলন। আগে যেখানে খেলায়, বিশেষ করে টেস্টে মূলত মাটি আঁকড়ে ধৈর্য সহকারে ব্যাটিং করে শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতার পরীক্ষা দেয়াই টেস্ট ক্রিকেটের মূলকথা ছিল।

এখন সেখানে ব্যাটিং ধরণ বদলেছে। ব্যাটাররা আক্রমণাত্মক স্টাইলকে আপন করে নিচ্ছেন। মাঠে কিভাবে দ্রুত রানের চাকাকে সচল রাখা চায় আজকাল ক্রিকেটে সেদিকে যতো মনোযোগ দেয়া হয়। টেস্টে সেঞ্চুরির হ্যাটট্রিক এই সময়ে এসে দেখা না গেলেও, ওয়ানডেতে এই মাইলফক বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার অর্জন করেছেন।

ক্রিকেট ইতিহাসে কিছু অভিজাত ক্রিকেটারের নাম স্বর্ণাক্ষরে খোদাই করা থাকবে যারা টানা তিনটি সেঞ্চুরির মালিক। এমন অভিজাত ব্যাটারদের নিয়েই আমাদের এবারের আয়োজন।

  • কুমার সাঙ্গাকারা (শ্রীলঙ্কা)

২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের মঞ্চে টানা চার ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন লঙ্কান এই সাবেক ব্যাটার। কুমার সাঙ্গাকারা সেঞ্চুরির শুরুটা করেছিলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে। এরপর ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং সবশেষ স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে শতক দিয়ে টানা চতুর্থ শতকের মাইলফলক অর্জন করেছিলেন।

আবার ২০১৮ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে এক ইনিংসেই ৩১৯ রান করে ত্রিপল সেঞ্চুরির রেকর্ডও করেছিলেন এই ব্যাটার। ত্রিপল সেঞ্চুরির পরের ইনিংসেই লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েছিলেন তিনি।

  • এবি ডি ভিলিয়ার্স (দক্ষিণ আফ্রিকা)

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন অধিনায়ক এবং টপ অর্ডার ব্যাটার এবি ডি ভিলিয়ার্স সম্পূর্ণ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে খেলেও টেস্ট ম্যাচে টানা তিনটি সেঞ্চুরি করেছেন। ২০১০ সালে যখন দক্ষিণ আফ্রিকা ভারতে টেস্ট ম্যাচ এবং ওডিআই খেলার জন্য এসেছিল, তখন ডি ভিলিয়ার্স আহমেদাবাদ এবং গোয়ালিয়র টেস্ট ম্যাচে টানা তিনটি সেঞ্চুরি করেছিলেন।

আহমেদাবাদ টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে এবি ডি ভিলিয়ার্স প্রথমে সেঞ্চুরি করেন এবং গোয়ালিয়রে পরের টেস্ট ম্যাচের প্রথম এবং দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি আরও বড় দুইটি সেঞ্চুরি করেছিলেন। যা তাঁকে টানা তিনটি টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ডের সম্মান এনে দেয়।

  • ডেভিড ওয়ার্নার (অস্ট্রেলিয়া)

বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে ডেভিড ওয়ার্নার ২০১৪ সালে কেপটাউন টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ব্যাকটুব্যাক সেঞ্চুরি করেছিলেন। এর মাত্র এক মাস পরে অস্ট্রেলিয়ান দল সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে পাকিস্তান দলের বিপক্ষে তিন টেস্ট বিশিষ্ট সিরিজ খেলতে যায়।

ওয়ার্নার তখন আবার প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছিলেন। যার দরুন টেস্টে টানা তিনটি সেঞ্চুরি করে অভিজাত ব্যাটারের তালিকায় নাম লিখিয়েছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার।

  • অ্যামি স্যাটারওয়েট (নিউজিল্যান্ড)

নারী ক্রিকেটে ওয়ানডে ফরম্যাটে টানা তিনটি সেঞ্চুরির রেকর্ড রয়েছে অ্যামি স্যাটারওয়েট এর নামের পাশে। নিউজিল্যান্ডের এই অলরাউন্ডার একমাত্র নারী ক্রিকেটার হিসেবে এই রেকর্ডের মালিক। ২০১৬ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে টানা তিনটি ওয়ানডে ম্যাচে তিনটি সেঞ্চুরি করেছিলেন অ্যামি।

  • জহির আব্বাস (পাকিস্তান)

১৯৮২ সালে কিংবদন্তি পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান জহির আব্বাস প্রথমবারের মতো ভারতের বিপক্ষে টানা তিন সেঞ্চুরি করে নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন অন্য উচ্চতায়। তাঁর রেকর্ড ছুঁতে অপেক্ষা করতে হয়েছে আরও ১১ বছর। পাকিস্তানের ইতিহাসেরই অন্যতম নান্দনিক ব্যাটার তিনি।

  • সাঈদ আনোয়ার (পাকিস্তান)

১৯৯৩ সালে আরেক পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান সাঈদ আনোয়ার ওয়ানডেতে টানা তিন সেঞ্চুরির হ্যাটট্রিকের কীর্তি গড়েন। তিনি জহির আব্বাসের রেকর্ডটির পাশে নিজের নাম লেখান।

নব্বই দশকে শচীন টেন্ডুলকারের সাথে পাল্লা দিয়েই সেঞ্চুরি করতেন সাঈদ আনোয়ার। তবে, লম্বা দৌড়ে আর শচীনের মত ধারাবাহিকতা রাখতে পারেননি সাঈদ আনোয়ার।

  • বাবর আজম (পাকিস্তান)

সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটারদের একজন এই বাবর আজম। তিনি বিশ্বের একমাত্র ব্যাটসম্যান যিনি একদিনের আন্তর্জাতিকে দুইবার টানা তিনটি ম্যাচে পরপর সেঞ্চুরির হ্যাটট্রিক করেছেন। ২০১৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টানা তিনটি ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন বাবর। এবার ২০২২ এর এপ্রিলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও সেঞ্চুরির হ্যাটট্রিক গড়লেন এই ক্রিকেটার।

  • রস টেলর (নিউজিল্যান্ড)

২০১৪ ভারতের বিপক্ষে টানা ২টি সেঞ্চুরির পর, দুবাই গিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি সেঞ্চুরি করে ওয়ানডে ফরম্যাটে টানা তিনটি সেঞ্চুরির মাইলফলক ছুয়েছিলেন রস টেলর।

  • হার্শেল গিবস (দক্ষিণ আফ্রিকা)

এই দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার তাঁর নিজের দেশের ইতিহাসের সেরা ব্যাটারদের একজন।  আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক ওভারে ছয় ছক্কা হাঁকানোর বিরল রেকর্ড আছে তাঁর। ২০০২ সালে পরপর তিন ইনিংসে তিনটি সেঞ্চুরি করেছিলেন।

  • কুইন্টন ডি কক (দক্ষিণ আফ্রিকা)

মাত্র বিশ বছর বয়সে ভারতের বিপক্ষে সিরিজে ওয়ানডেতে টানা তিন সেঞ্চুরি করে অভিজাত বযাটারের তালিকায় নাম লিখিয়েছিলেন ডি কক। সীমিত ওভারের ক্রিকেটেই কক বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। তাই কি না বিদায় বলে ফেলেছেন টেস্ট ক্রিকেটকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link