নতুন দিনের ক্রাইসিসম্যান

আফিফ হোসেন ধ্রুব, নামের মত ব্যাটিং অর্ডারে তাঁর জায়গাটাও ধ্রুব। ওয়ানডে অভিষেকের পর থেকেই ফিনিশারের ভূমিকায় একাদশে আছেন আফিফ। অথচ বয়স ভিত্তিক দলগুলোতে তিনি ছিলেন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। আফিফ যে ফিনিশার নন, একজন সলিড ব্যাটসম্যান সেটি অবশ্য এতদিনেও বুঝতে পারছেনা বাংলাদেশ দল।

তবে নিজের সক্ষমতা প্রমাণে বারবার জ্বলে উঠেছে আফিফ হোসেনের ব্যাট। বিধ্বংসী কোন ইনিংস নয়; তিনি ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেছেন চাপের মুখে, রয়ে সয়ে। এই যেমন আফগানিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রামের সেই ম্যাচ কিংবা  আজ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডে। এমনিতেই সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে হেরে বাংলাদেশ  ব্যাকফুটে। লজ্জা বাঁচানোর ম্যাচে হঠাৎ ব্যাটিং বিপর্যয়ে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

আফিফ হোসেন যখন ক্রিজে এসেছিলেন তখন বাংলাদেশ ২৪.৪ ওভারে চার উইকেট হারিয়ে ১২৪ রান করেছিল। পুরো দল যতটা চাপে ছিল, তার চেয়ে বেশি চাপে ছিলেন অন্য প্রান্তের ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ। তাঁর ক্রমাগত ডট বলের চাপ স্বাভাবিকভাবেই আফিফের উপর এসেছিল। 

কিন্তু চাপের মুখে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে শেখা আফিফ হোসেনের কিসের ভয়। শুরু থেকেই মাঠের চারপাশে শটস খেলতে শুরু করেন তিনি; আর সেই সাথে নিয়মিত সিঙ্গেল বের করে সচল রেখেছিলেন রানের চাকা। 

ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করে ৬৯ বলে ৩৯ রান করে আউট হন মাহমুদউল্লাহ। দলীয় রান তখন ৩৪.১ বলে ১৭৩। স্বীকৃত ব্যাটসম্যান ছাড়াই বাকিপথ বাংলাদেশকে একা টেনে নিয়েছেন আফিফ হোসেন। মিরাজ, তাইজুলদের সাথে ছোট ছোট জুটি গড়ে বাংলাদেশে এনে দিয়েছেন লড়াইয়ের পুঁজি। 

শেষপর্যন্ত ৮৫ রানে অপরাজিত ছিলেন আফিফ হোসেন। ছয়টি চার আর দুই ছয়ে এই ইনিংস খেলেন তিনি। পুরোটা সময়ের কখনোই আফিফ হোসেনকে পাওয়ার হিটার মনে হয়নি। ক্রিজে সেট হওয়ার পর বাউন্ডারি বের করতে শুরু করেছিলেন। এসব বাউন্ডারিও এসেছে নিখুঁত টাইমিংয়ের জোরে। 

আফিফ হোসেন আসলে এমনই। তিনি কখনোই আন্দ্রে রাসেল, হার্দিক পান্ডিয়ার মত বলে কয়ে ছক্কা হাঁকাতে পারেন না। তিনি একজন টপ অর্ডার ব্যাটারের মতই; সেট হয়ে তারপর নিজের সেরারা দিতে পারেন৷ তাছাড়া নতুন মাঠে আসলেই একগাদা ডট বল দেয়ার বাজে স্বভাব নেই তাঁর মাঝে। 

এতকিছুর পরেও আফিফ হোসেনের জায়গা হয় না ব্যাটিং অর্ডারের উপরের দিকে। কোন এক অদৃশ্য সুতোর টানে আফিফকে থেকে যেতে হচ্ছে ছয়-সাত নম্বরে। অথচ তাঁর মত একজন ক্ল্যাসিক্যাল ব্যাটসম্যানের সেরাটা আদায় করতে চাইলে জায়গা দিতে হবে উপরের দিকে। এই বামহাতি ব্যাটার যত বেশি বল খেলতে পারবেন তত বেশি লাভবান হবে বাংলাদেশ দল। 

এর আগে চলতি বছরের শুরুর দিকে আফগানিস্তান সিরিজেও ক্যারিয়ার সেরা পারফর্ম করতে দেখা গিয়েছিল আফিফ হোসেনকে। সেদিনের ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলতে সক্ষম হয়েছিলেন। আর এর কারণ দ্রুত উপরের ব্যাটার আউট হওয়ায় তিনি অনেক আগে মাঠে এসেছিলেন। 

একই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল ঐতিহাসিক দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে আরো একবার প্রতিরোধ গড়েছিলেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। 

একটা সময় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে ক্রাইসিসম্যান ডাকা হতো। ২০১৯ সালের আগ পর্যন্ত প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্মও করেছিলেন তিনি। কিন্তু বয়সের ভারে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া রিয়াদ এখন দলের বোঝার মতই। সাম্প্রতিক ফর্ম অনুযায়ী দলের প্রকৃত ক্রাইসিসম্যান এখন তরুণ আফিফ। 

নিজের অবস্থা এবং আফিফের উত্থান দেখে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ চাইলে তাঁর আগে আফিফকে পাঠাতে পারেন ব্যাটিংয়ে। কিন্তু সেটা ঘটছে না, তাই আফিফের সেরাটা পেতে হলে অপেক্ষা করতে হয় আরো একটি ব্যাটিং বিপর্যয়ের জন্য।  

আফিফ হোসেন প্রথম ভক্ত-সমর্থকদের নজর কেড়েছিলেন ২০১৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো এক হাফসেঞ্চুরি দিয়ে। আফিফের প্রতিভার প্রথম প্রদর্শনীটা এভাবেই হয়েছিল। এই তরুণের প্রতিভা আলো বিচ্ছুরিত হতে শুরু করেছিল সেদিন। 

কিন্তু বিসিবির দূরদর্শীতার অভাবে এই প্রদীপের আলো পুরোপুরি পাচ্ছে না টিম টাইগার্স। দ্রুতই হয়তো আফিফ হোসেন নিজের পছন্দসই পজিশনে ব্যাট করবেন, ক্রাইসিসম্যান হয়ে সামাল দেবেন দলের বিপর্যয় – আপাতত এমনটাই প্রত্যাশা। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link