বয়স শুধুই একটা সংখ্যা- এই তত্বের সবচেয়ে বড় উদাহরণ জেমস অ্যান্ডারসন। ইংল্যান্ডের ৩৯ বছর বয়সী এই পেসার এই বয়সেও দলের বোলিং আক্রমণের প্রধান অস্ত্র। ব্যতিক্রম নন ক্রিস গেইলও। ৪২ বছর বয়সী ক্যারিবিয়ান এই ব্যাটিং দানব আসন্ন টি-টোয়েন্ট বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শিরোপা ধরে রাখতে বড় ভরসার নাম।
তবে সব ছাঁপিয়ে এই বয়স তত্বে নতুন মাত্রা যোগ করেছে চেন্নাই সুপার কিংস। কলকাতা নাইট রাইডার্সকে হারিয়ে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ১৪ তম আসরের শিরোপা জিতেছে মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য এবারের আসরে চেন্নাইয়ের হয়ে খেলা ক্রিকেটারদের গড় বয়স ছিল প্রায় ৩৩ বছর।
আইপিএলে চতুর্থ বারের মত শিরোপা জয়ের পথে চেন্নাইয়ের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন ১৬ জন ক্রিকেটার। চেন্নাইয়ের হয়ে মাঠে নামা ক্রিকেটারদের ভিতর মাত্র পাঁচ জনের বয়স ছিল ৩০ বছরের নিচে। এই পাঁচ জনের ভিতর আবার নিয়মিত ম্যাচ খেলেছেন শুধু ২৯ বছর বয়সী দীপক চাহার ও ২৪ বছর বয়সী রুতুরাজ গায়কড়।
বাকি তিন জনের একজনও দ্বিতীয় পর্বে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। ভারত পর্বে তিনটি করে ম্যাচ খেলেছেন ২৫ বছর বয়সী লুঙ্গি এনগিদি ও স্যাম কারান। আর মাত্র একটি ম্যাচে মাঠে নামার সুযোগ হয়েছিল ২৪ বছর বয়সী কেএম আসিফের।
অর্থ্যাৎ চেন্নাইয়ের একাদশে সংযুক্ত আরব আমিরাত পর্বে নিয়মিত খেলেছেন ১৩ জন ক্রিকেটার। এই ১৩ জনের গড় বয়স আবার ৩৪ বছরের বেশি। অথচ, তরুণদের খেলা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ইতিহাসে অন্যতম সেরা আসর আইপিএলের শিরোপা তাঁদেরই হাতে।
চেন্নাইয়ের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির বয়স ৪০ বছর। ফাইনালের ম্যাচ সেরা ফাফ ডু প্লেসিসের বয়স ৩৭ বছর। ফাইনালের অন্যতম সেরা দুই পারফরমার আম্বাতি রাইডুর বয়স ৩৬ বছর ও মঈন আলীর বয়স ৩৪ বছর।
৩৮ বছর বয়সী ডোয়াইন ব্রাভোও ধোনির প্রধান অস্ত্রের একজন ছিলেন। চেন্নাইকে ফাইনালে তুলতে বড় অবদান রাখা রবীন্দ্র জাদেজার বয়স ৩২ বছর।
সুরেশ রায়নার বয়স ৩৪ বছর। ফাইনালে দুর্দান্ত বল করা জশ হ্যাজলেউড ও শার্দুল ঠাকুরের বয়স ৩০ বছর। চেন্নাইয়ের হয়ে খেলা সবচেয়ে বেশি বয়সী ক্রিকেটার ছিলেন ইমরান তাহির। প্রোটিয়া এই স্পিনারের বয়স ৪২ বছর। কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ না পাওয়া চেতেশ্বর পূজারা ও করন শর্মার বয়স ৩৩। আর কৃষ্ণাপ্পা গৌতমের বয়স ছিল ৩২।
আইপিএলের এবারের আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ৩৭ বছর বয়সী প্লেসিস। যা সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তাঁরই সতীর্থ রুতুরাজ গায়কড়ের থেকে মাত্র ২ রান কম। ১৬ ম্যাচে ৪৫.২১ গড়ে ও ১৩৮.২০ স্টাইকরেটে ৬৩৩ রান। মঈন আলীর সংগ্রহ ছিল ১৫ ম্যাচে ২৫.৫০ গড়ে ও ১৩৭.৩০ স্টাইকরেটে ৩৫৭ রান।
ফাইনালেও ২০ বলে ৩৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেছেন মঈন। রবীন্দ্র জাদেজা ১৪৫.৫১ স্টাইকরেটে ২২৫ রানের পাশাপাশি বল হাতে শিকার করেছেন ১৩ উইকেট। ১১ ম্যাচে ১৪ উইকেট শিকারের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও ম্যাচ জয়ী ইনিংস রয়েছে ৩৮ বছর বয়সী ব্রাভোর।পুরো টুর্নামেন্টে অফফরমে থাকলেও প্রথম কোয়ালিফায়ারে ধোনির ৬ বলে ১৮ রানে ভর করে ফাইনাল নিশ্চিত করেছিল চেন্নাই।
আম্বাতি রাইডু ১৫১.১৭ স্টাইকরেটে ও ২৮.৫৫ গড়ে সংগ্রহ করেছেন ২৫৭ রান। তবে সবাই মোটামুটি সফল হলেও এবার ব্যাট হাতে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি সুরেশ রায়না। প্রথম দিকে সুযোগ পেয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর শেষের দিকে আর একাদশেই জায়গা হয়নি এই ব্যাটসম্যানের। তাঁর পরিবর্তে সুযোগ পেয়ে খারাপ করেননি রবিন উথাপ্পা।
গত বেশ কয়েকটি আসর ধরেই এই স্কোয়াড নিয়ে খেলছে চেন্নাই। ধোনির সাথে রায়না, জাদেজা, ব্রাভো ও ডু প্লেসিস চেন্নাইয়ের ঘরের ছেলেই হয়ে গেছেন। এদের নিয়ে স্কোয়াড গড়েই আইপিএলের সফল দল চেন্নাই। তবে সর্বশেষ আসরে ব্যর্থ ছিলেন ধোনির দল।
গত আসরে চেন্নাই বাদ পড়েছিল গ্রুপ পর্ব থেকেই। তবে ফিরে আসতে বেশি সময় লাগেনি তাদের। এক আসর পর সেই বুড়ো হাড়ের ভেলকিতেই চতুর্থ শিরোপা ঘরে তুললো চেন্নাই।