ওইটুকু একটা ছেলে। তার মুখে আজ দশ খানা সেলাই। বার্সেলোনার জার্সিতে নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছেন পাউ কুবার্সি। ১৭ বছর বয়সে কাতালান ডিফেন্সের অন্যতম সেনানী বনে গেছেন তিনি। যেন কুবার্সি হাঁটছেন কার্লেস পুয়োলের পথে। বার্সার হয়ে নিজের জান কুরবান করতেও যেন দ্বিধা নেই তার।
লা মাসিয়া থেকে উঠে এসেছেন। বয়সটা নিতান্তই কম। এরই মধ্যে তিনি বার্সেলোনার ডিফেন্সের নেতা বনে গেছেন। হ্যান্সি ফ্লিকের নতুন বার্সেলোনা প্রতিপক্ষকে অফ সাইড ট্র্যাপে বন্দী করে রেখেছে। আর সেই ট্র্যাপের মূল কেন্দ্রবিন্দু কিশোর কুবার্সি।
তেমনই দায়িত্ব তিনি পালন করছিলেন রেডস্টার বেলগেডের বিপক্ষেও। কিন্তু ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে রক্তাক্ত হয়ে মাঠ ছেড়েছেন কুবার্সি। পরবর্তীতে দশ খানা সেলাই করতে হয়েছে তার চোয়ালে ও গালে। ম্যাচ শেষে অবশ্য নির্বিকার দেখা গেছে তাকে, যেন কিছুই ঘটেনি। ১৭ বছরের বুকে ঠিক কতটুকু সাহস থাকে!
এত অল্প বয়সে বার্সেলোনার মত একটা দলের রক্ষণ সামলে নিচ্ছেন তিনি। হ্যান্সির অফসাইড ট্র্যাপকে নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি। খুব বেশি গতিবান খেলোয়াড় কুবার্সি নন। অবশ্য সেন্টার ডিফেন্ডারদের গতি খুব বেশি প্রয়োজন পড়ে না। তবুও ব্লাউগানাদের হাই-লাইন ডিফেন্সে একটু ভুল হলেই, প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে ট্র্যাকব্যাক করা ভীষণ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
ঠিক সে কারণেই মস্তিষ্কে গেঁথে থাকা কৌশলের যথাযথ মঞ্চায়ন হতে হবে মাঠে। এখনই কিশোর কুবার্সির ফুটবল মস্তিষ্ক যেন প্রশংসার দাবিদার। বহুকাল বাদে যেন বার্সা নিজেদের রক্ষণে একজন নেতা খুঁজে পেল। কার্লেস পুয়োল পরবর্তী বার্সার অভাবটা তার হাত ধরেই পূরণ হচ্ছে। কোচের কৌশলকে অক্ষত রাখার পূর্ণ দায় তার কাঁধে।
কিন্তু কুবার্সি যদি চোটে পড়েন, তবে সে দায়িত্ব নেবে কে? এমন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। রেডস্টার বেলগ্রেডের বিপক্ষে খেলেননি আলেহান্দ্রো বালদে। তার পরিবর্তে জেরার্ড মার্টিন নেমেছিলেন মাঠে। তার ভুলেই প্রথম গোলটি হজম করেছিল বার্সেলোনা। কুবার্সি, বালদে, জুলস কুন্দে ও ইনিগো মার্টিনেজ ফ্লিকের কৌশল রপ্ত করে ফেলেছেন বেশ ভালভাবে। ১৭ ম্যাচে ১০০ বার প্রতিপক্ষকে অফসাইড ট্র্যাপে ফেলেছে বার্সার এই রক্ষণ দূর্গ।
কিন্তু এই দূর্গের চার সেনানীর কেউ যদি অনুপস্থিত থাকেন, তবে যেন ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হতে পারে বার্সার রক্ষণ। কুবার্সি চোট নিয়ে মাঠ ছাড়ার পর দ্বিতীয় গোল হজম করে বার্সেলোনা। দলটা রেডস্টার বেলগ্রেড ছিল বলেই হয়ত জয়টা শেষ অবধি বার্সেলোনার হয়েছে।
কিন্তু কুবার্সি কোন কারণে দীর্ঘ সময় মাঠের বাইরে থাকলে, তা কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে বার্সেলোনার জন্য। রক্ষণের কনিষ্ঠ খেলোয়াড়টাই যে বলিষ্ঠ মস্তিষ্কের অধিকারি। তিনিই তো দু’হাতে আগলে রাখেন কোচের কৌশলকে। পুয়োলের পর আর কে এমনভাবে আগলে রেখেছিল বার্সার রক্ষণকে?