কিউরেটরকে ক্রিকেট মাঠের সর্বেসর্বা বলা যায়।
কিউরেটরের নেতৃত্বেই তৈরি হয় একটি স্টেডিয়ামের মাঠ এবং পিচ। তার নেতৃত্বেই একদল মাঠকর্মী এটা দেখাশোনা ও যত্ন করেন। ম্যাচের ফলাফল থেকে শুরু করে অনেক কিছুতেই প্রভাব ফেলে কিউরেটরের তৈরী করা উইকেট। ফলে এই পদটি ক্রিকেটে যে মারাত্মক গুরুত্বপূর্ণ তাতে সন্দেহ নেই। তাহলে এই পদে কী আপনি একজন ব্যবসায়ীকে কল্পনা করতে পারেন? এমন কেউ যিনি আগে কখনো কোনো স্টেডিয়ামে কোনো কিউরেটরের সাথে কাজই করেননি!
সেই কাজটাই হতে যাচ্ছে এবার ভারতে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টানা দুটি টেস্টে কিউরেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ভি রমেশ কুমার। একেবারে সিনেমার মতো করে এই দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি।
আমাদের উপমহাদেশে দেখা যায় সাধারণত একজন কিউরেটরের সঙ্গে থেকে থেকে আরেকজন কিউরেটর উঠে আসেন। কিন্তু যদি এই কিউরেটর পদে যদি অনভিজ্ঞ কাউকে দায়িত্ব দেয়া হয়, তাহলে কি অবস্থা হবে ভাবুন তো! এবার এই ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে চেন্নাইয়ের পি. চিদাম্বরাম স্টেডিয়ামে।
আসন্ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের হোম সিরিজে প্রথম দুই টেস্টে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এক অনিভিজ্ঞ কিউরেটরকে। পোড় খাওয়া সব কিউরেটরের জন্যও পরপর দুটো টেস্টের উইকেট একই ভেন্যুতে বানানো একটা চ্যালেঞ্জিং বিষয়। সেখানে একেবারেই অন্য পেশা থেকে ধরে এনে এই কঠিনতর দায়িত্বটা দেওয়া হয়েছে রমেশকে।
চেন্নাইয়ের টেস্টে কিউরেটর হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ভি রমেশ কুমার। যার কিনা এর আগে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ তো দূরে থাক; কেনো প্রথম শ্রেনীর ম্যাচের উইকেট তৈরি করার কোনো অভিজ্ঞতাই নাই।
রমেশ কুমার পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তিনি তামিলনাডুতে কাপড় ব্যবসায় জড়িত। রমেশ কলেজ জীবনে একজন দূর্দান্ত অ্যাথলেট ছিলেন। এমনকি তিনি তামিলনাডুকে জাতীয় অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তার খেলা ছিলো ১১০ মিটার হার্ডল এবং রিলে দৌড়। বুঝতেই পারছেন, এ জীবনেও তার ক্রিকেট ছিলো না।
তবে খেলার প্রতি আগ্রহ থাকায় তিনি নিজের এলাকাতে প্রতিষ্ঠা করেন একটি ক্রিকেট একাডেমি। সেই একাডেমির জন্য নিজের হাতে প্রস্তুত করেন মাঠ। কিন্তু মাঠ প্রস্তুত এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিপদের সম্মুখিন হন। এই সময়ে তিনি তামিলনাডু ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের কাছ থেকে পান কিউরেটর কোর্স করার পরামর্শ। যে কোর্সের ইন্সট্রাকটর ছিলেন ভারতের স্বনামধন্য কিউরেটর ছিলেন দলজিৎ সিং। দলজিৎ ছিলে ছিলেন মোহালির বিখ্যাত কিউরেটর।
এরপর রমেশ একটু একটু করে উইকেট বানানোর কাজে হাত দিতে থাকেন। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে কিউরেটর কোর্স শেষ করার পর কোইয়েমবাটর, ত্রিপুরা এবং সালেমে বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) অধীনে অনুষ্ঠিত অনুর্ধ্ব-১৬, অনুর্ধ্ব-১৯ এবং অনুর্ধ্ব-২৩ দলের খেলার জন্য উইকেট এবং মাঠ প্রস্তুত করতে শুরু করতে করেন। আইপিএলের সময়ে দেশের বিভিন্ন স্টেডিয়ামে ঘুরে ঘুরে ম্যাচ কিউরেটরদের সাথে কাজ করেন। ২০১৯ সালে তামিলনাডু ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন তাকে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরাম স্টেডিয়ামের কিউরেটরের দায়িত্ব দিতে চায়। কিন্তু ব্যবস্যায়িক কারণে দায়িত্ব নিতে পারেননি।
অবশেষে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আসন্ন হোম সিরিজের জন্য তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কারন প্রতিভাবান একজন কিউরেটর। চেন্নাইয়ে সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফির প্রস্তুতি ম্যাচে আসলে নিজের পরীক্ষাটা দেন রমেশ। এখানে মাঠে কিউরেটর হিসেবে কাজ করেছেন ভি. রমেশ কুমার।
এই সিরিজে দুইটি টেস্ট অনুষ্ঠিত হবে চেন্নাইয়ে। এই দুই ম্যাচের জন্য তিনি মাঠ প্রস্তুত করেছেন তাপস চ্যাটার্জীর সাথে। তাপস চ্যাটার্জী ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের গ্রাউন্ডস কমিটির একজন সদস্য। রমেশ জানান তিনি চেন্নাইয়ে কাজ করছেন ২৬ জন মাঠ কর্মীর সঙ্গে। তিনি আরো জানান চেন্নাইয়ের মাঠে দুই ধরনের মাটির উইকেট আছে। লাল মাটি, যা কিনা মুম্বাইয়ের ওয়ানখেড় স্টেডিয়ামের সাথে মেলে; এটা পেস বোলারদের জন্য সহায়ক। অপরদিকে একটু মিশ্র ধরনের উইকেট। এই উইকেট একবার রোল করলেই অনেক বেশি দ্রুতগতির হয়ে থাকে। এই উইকেটে সাধারণত স্পিনাররা বেশি সুবিধা পেয়ে থাকেন।
এই মাঠে সর্বশেষ প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তামিলনাডু এবং রেলওয়ের মধ্যে।যেখানে খেলা হয়েছিলো স্পিন সহায়ক উইকেটে এবং ম্যাচ ২ দিনে সমাপ্ত হয়। ভি রমেশ কুমার এই বারের উইকেট হবে খুবই স্পোর্টিং উইকেট। যে ধরনের উইকেট হয়ে থাকে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে।
ক্রিকেটের প্রতি তার এই ধরনের ডেডিকেশন এবং উইকেটের আচরণ বোঝার এই সক্ষমতা তাকে কিউরেটরের পদে নিয়োগ দিতে উৎসাহ দিয়েছে তামিলনাড়ু ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনকে।