ব্যাট হাতে ক্যারিয়ারজুড়ে যিনি বাঘা বাঘা বোলারদের চোখে চোখ রেখে লড়েছেন, আজ সেই অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি ড্যামিয়েন মার্টিন লড়ছেন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে। প্রতিপক্ষ এখন আর পেস কিংবা সুইং নয়, প্রতিপক্ষ এক ভয়ংকর রোগ, মেনিনজাইটিস।
কুইন্সল্যান্ডের একটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন তিনি। চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তে তাঁকে বর্তমানে রাখা হয়েছে কৃত্রিম কোমায়। নিবিড় পর্যবেক্ষণে চলছে চিকিৎসা, প্রতিটি মুহূর্ত যে এখন মহামূল্যবান।
৫৪ বছর বয়সী মার্টিন বক্সিং ডে-তেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে বিষয়টি গোপন রাখা হলেও মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁর শারীরিক অবস্থার খবর প্রকাশ্যে আসে। খবর ছড়িয়ে পড়তেই ক্রিকেট দুনিয়ায় নেমে আসে উদ্বেগের ছায়া। মাঠের গ্যালারির মতোই যেন থমকে যায় সময়।

ড্যামিয়েন মার্টিন মানেই নিখুঁত টাইমিং, চোখ জুড়ানো ব্যাটিং, আর চাপের মুখেও অদ্ভুত এক প্রশান্তি। ১৯৯২ থেকে ২০০৬, দীর্ঘ ১৪ বছরে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলেছেন ৬৭টি টেস্ট। ২০০৬ সালের অ্যাশেজ সিরিজের মাঝপথে অবসর নেওয়ার সময় তাঁর ব্যাটে লেখা হয়ে গেছে ৪৪০৬ রানের গল্প। গড় ৪৬.৩৭, সঙ্গে ১৩টি শতক, সংখ্যার আড়ালেও ছিল নান্দনিকতার জয়।
ওয়ানডে ক্রিকেটে তো তিনি এক অনন্য অধ্যায়। ২০০৩ বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে অপরাজিত ৮৮ রান, রিকি পন্টিংয়ের সঙ্গে ২৩৪ রানের সেই ঐতিহাসিক জুটি। সেদিন মার্টিন শুধু রান করেননি, ব্যাট হাতে যেন তুলিতে ছবি এঁকেছিলেন। একদিনের ক্রিকেটে তাঁর সংগ্রহ ৫৩৪৬ রান, গড় ৪০.৮০, পাঁচটি শতক।
ক্রিকেট ছাড়ার পর আলো ঝলমলে মঞ্চ থেকে সরে গিয়েছিলেন তিনি। অল্প সময় ধারাভাষ্যে কাজ করলেও ধীরে ধীরে ক্যামেরার আড়ালেই চলে যান। কিন্তু ক্রিকেট কখনোই ছাড়েনি তাঁকে। অসুস্থ হওয়ার ঠিক আগের দিনই বক্সিং ডে টেস্ট নিয়ে এক্সে লিখেছিলেন, ‘পুরনো প্রজন্ম যদি আবার খেলতে পারত, তবে এটাই হতো সেই মঞ্চ। বক্সিং ডে টেস্ট ম্যাচ, কী এক ভয়ংকর আবহ।’

সেই বক্সিং ডের গর্জন বদলে গেছে প্রার্থনায়। স্টেডিয়ামের উল্লাস বদলে গেছে নিঃশব্দ অপেক্ষায়। এককালে যিনি ব্যাট হাতে সাহিত্য রচনা করেছেন, দুই বারের বিশ্বকাপজয়ী সেই কিংবদন্তির জন্য আজ প্রার্থনায় পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। এই ইনিংসটা যেন তিনি জিতেই ফেরেন, এটাই এখন সবার কামনা।










