‘হিরো’ নন ডেভিড মিলার

কিন্তু, ক্রিকেটের নিষ্ঠুর বাস্তবতা হলো, এই পারফরম্যান্সের পরও হয়তো মিলারের নাম খুব বেশি উচ্চারিত হবে না। হয়তো এটাও লেখা থাকবে ইতিহাসের কোনায়, দক্ষিণ আফ্রিকার আরেকটি হৃদয় ভাঙা ম্যাচের ভেতর।

ঝড়টা এখন আর তাঁর ব্যাটে ঠিক ঠাক আসে না। ওয়ানডেতেটাও সব সময় তিনি খেলেন না। টি-টোয়েন্টি খেলেন, কিন্তু গেল বছরের স্ট্রাইক রেট মোটে ১১৮। ডেভিড মিলার তাঁর আগের আবেদন হারিয়ে ফেলেছেন। টুকরো টুকরো বিস্ফোরণ, কিছু অনবদ্য রাত, আর বারবার ট্র্যাজেডির সাথে লড়াই। এই যেন এখন ডেভিড মিলারের নিয়তি।

একটা সময় ‘কিলার মিলার’ তকমাটা নামের সঙ্গে অবধারিতভাবেই জুড়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন? এখন তাঁর ব্যাটে ঝড় আসে অনিয়মিত, তাঁর স্ট্রাইক রেট আরেকটু ধারালো হতে পারত। ওয়ানডে তিনি খেলার সুযোগ পান কম, টি-টোয়েন্টিতেও সেই পুরনো ভয়ঙ্কর ছন্দটা আর সেভাবে দেখা যায় না। গেল বছর তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল মাত্র ১১৮। কেউ হয়তো বলবে, মিলারের সময় ফুরিয়েছে।

কিন্তু ক্রিকেট, বিশেষ করে আইসিসি ইভেন্ট—এখানে গল্পগুলো অন্যভাবে লেখা হয়। ক্যারিয়ারের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে, হয়তো শেষ বিশ্বকাপ খেলতে এসে, লাহোরে মিলার লিখে গেলেন এক মহাকাব্য। একা হাতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে লড়াইয়ে টিকিয়ে রাখলেন, তবুও ট্র্যাজেডি যেন তাঁর নিয়তি হয়েই থাকল।

৬৭ বলে ১০০ রানের ইনিংস। শেষ বলে এসে সেঞ্চুরি পূরণ করলেন। কিন্তু ম্যাচ জেতাতে পারলেন না। আবারও এক ট্র্যাজিক হিরো হয়ে থাকলেন ডেভিড মিলার। যেন একটা সিনেমার ক্লাইম্যাক্স, যেখানে সবকিছু ঠিকঠাক এগোলেও শেষ দৃশ্যে নায়ক বেঁচে ফিরতে পারেন না।

যদি হেনরিক ক্লাসেন আর মার্কো ইয়ানসেন আরেকটু দায়িত্ব নিতে পারতেন? যদি মিডল অর্ডার আরেকটু লড়াই করতে পারত? নিউজিল্যান্ডকে ৫০ রানের ব্যবধানে জিততে কি এত সহজ হতে দিতেন তাঁরা? কে জানে, হয়তো তখন মিলারই বনে যেতেন সেমিফাইনালের এই রাতের কিংবদন্তি।

কিন্তু, ক্রিকেটের নিষ্ঠুর বাস্তবতা হলো, এই পারফরম্যান্সের পরও হয়তো মিলারের নাম খুব বেশি উচ্চারিত হবে না। হয়তো এটাও লেখা থাকবে ইতিহাসের কোনায়, দক্ষিণ আফ্রিকার আরেকটি হৃদয় ভাঙা ম্যাচের ভেতর। কিন্তু একটা জিনিস নিশ্চিত—শেষবেলায় এসেও মিলার দেখিয়ে গেলেন, তাঁর ব্যাট এখনো কথা বলে, ঝড় উঠতে জানে। শুধু, সেই ঝড়টা হয়তো আর দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিতে পারে না। এর চেয়ে বিদায় বলে দেওয়াই কি শ্রেয় নয়?

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Share via
Copy link