ভালোবাসার কাঁপন কী যে বিষম দ্বৈরথে!

নিউইয়র্কের এক রাস্তা ধরে হাঁটছেন ডেভিড বেকহ্যাম।

পেছন থেকে এক তরুণী বলে উঠলো, ‘লুক, বেকহ্যাম।’

বেকহ্যাম মারাত্মক খুশি। অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের লোকেরা তাকে চেনা শুরু করেছে। কিন্তু পরক্ষণেই মাথায় হাত। পাশ থেকে আরেক তরুনী জিজ্ঞেস করলো, `ডেভিড বেকহ্যাম, হু?’

‘কেন, ভিক্টোরিয়ার হাজবেন্ড।’

বেকহ্যাম বলেছেন, সেইদিন তিনি আমেরিকাকে ফুটবল চেনানোর আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন।

সে আমেরিকা হয়তো বেকহ্যামকে ‘ভিক্টোরিয়ার স্বামী’ বলে চেনে। কিন্তু সারা দুনিয়ায় তিনি একমাত্র ডেভিড বেকহ্যাম। আসলে বলা যায়, দুনিয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত স্বামী স্ত্রী তাঁরা।

এই জুটি প্রায় ২২ বছর একসাথে কাটিয়ে দিয়েছেন। এই জুটি একসাথে আছে ১৯৯৯ সাল থেকে।

ডেভিড বেকহামের সাথে স্পাইস গার্ল ব্যান্ডের তারকা ভিক্টোরিয়ার প্রথম দেখা হয় এক চ্যারিটি ফুটবলের ম্যাচের সময়। সেখান থেকেই তাদের মধ্যে পরিচয় ঘটে। পরিচয় ঘটার এক বছরের পর ১৯৯৮ সালের ২৫ জানুয়ারী সাংবাদিক সন্মেলনে নিজেদের বিবাহের পরিকল্পনা জানান এই জুটি।

বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবার কিছুদিন আগে ১৯৯৯ সালে মার্চে তাদের ঘরে আসে প্রথম সন্তান ব্রুকলিন। এই জুটি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় ১৯৯৯ সালের ৪ জুলাই। তাদের বিবাহের সময় ভিক্টোরিয়া পড়েছিলেন ভেরা ওয়াং গাউন এবং এক স্বর্নের মুকুট। এই মুকুটটি ডিজাইন করেছিলেন স্লিম বারেট।

ডেভিড এবং ভিক্টোরিয়া বেকহাম দুইজন ছিলেন সবচেয়ে বেশি ছবি তোলা তারকা। তারা দুইজন সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসতেন একই রঙ্গের পোষাক পড়ে ছবি তোলার জন্য।

বিয়ের তিন বছরের মাথায় এই জুটির ঘর আলো করে আসে আরেক সন্তান। ২০০২ সালের ১ সেপ্টেম্বরে আসে তাদের সন্তান রোমিও।

২০০৩ সালে ডেভিড বেকহাম ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছেড়ে যোগ দেন রিয়াল মাদ্রিদে। এই সময়ে এই দম্পতিও সপরিবারে ম্যানচেস্টার ছেড়ে মাদ্রিদে বসবাস শুরু করে।

২০০৩ সালে ডেভিড বেকহাম বৃটিশ রাজ পরিবারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সন্মাননা ওবিই পান। ডেভিড বেকহাম এবং ভিক্টোরিয়া বেকহাম দুইজনই লাল গালিচার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দম্পত্তি হয়ে উঠেছিলেন। ২০০৩ সালে এমটিভি মুভি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে ভিক্টোরিয়ার পোষাক ছিল এখন পর্যন্ত তাঁর উপর সবচেয়ে স্মরণীয় নজর।

২০০৪ সালের এপ্রিলে হার্টফোর্ডশায়ারে এই দম্পতির নতুন বাড়ির নামকরণ করা হয় বেকিংহাম প্যালেস। এই নামকরণের পর সব দিকে গুজব ছড়িয়ে ডেভিড বেকহামের সাথের তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী রেবেকা লুর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। কিন্তু ঐ সময়ে এই দম্পত্তি লন্ডনের ক্লারিজ হোটেলে নিজেদের মত করে সময় কাটাচ্ছিলেন।

২০০৫ সালে ডেভিড এবং ভিক্টোরিয়া বেকহামের ঘরে আলো করে আসে আরেক সন্তান। তাদের তৃতীয় সন্তান পৃথিবীতে আলোর মুখ দেখে ২০০৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী।

এই ছবিটি তোলা হয়েছে ২০০৬ সালের বিশ্বকাপের সময়, তখন জার্মানীতে বিশ্বকাপ খেলতে ইংল্যান্ড দলের হয়ে জার্মানীতে ছিলেন ডেভিড বেকহাম।

২০০৭ সালে রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে আমেরিকার ক্লাব এল এ গ্যালাক্সিতে যোগ দেন ডেভিড বেকহাম। ডেভিড বেকহামের ক্লাব নতুন ক্লাবে গোলাপি রঙের রোল্যান্ড মৌরেট পোষাক পড়েন এবং সাথে ভ্যানিটি ব্যাগ ছিল একই রঙের।

এই একই বছর থেকে এই দম্পতিকে নিয়মিতই বিভিন্ন পার্টিতে দেখা গেছে। এই পার্টিতে টম ক্রুজ, কাটি হোমসকেও দেখা গেছে নিয়মিতই।

২০০৮ ভিক্টোরিয়া বেকহাম তাঁর নিজের ফ্যাশন হাউজের উদ্বোধন করেন। এই সময়ে এই জুটিকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের লাল গালিচায় দেখা যায়। এই জুটি নিউইয়র্কের ‘সুপারহিরোজ; ফ্যাশন এন্ড ফ্যান্টাসি’ অনুষ্টানেও দেখা যায় তাদেরকে।

একই বছরের অক্টোবরে ডেভিড বেকহামের নিজস্ব ব্রান্ড বেকহাম তাদের সুগন্ধি বাজারে ছাড়ে।

নিজের ব্রান্ডের সফলতার পর একই বছর ভিক্টোরিয়া বেকহাম তাঁর নিজের ফ্যাশন হাউজ থেকে নিউয়র্ক ফ্যাশন সপ্তাহে ডেনিম, সানগ্লাস, সুগন্ধি এবং বিভিন্ন ফ্যাশন ওয়্যার নিয়ে আসেন বাজারে।

২০০৯ সালের জানুয়ারীতে এই জুটি ইম্পেরিও আরমানীর একটি ফটোশুটে অংশ নেন। এই ফটোশুটে বেশ খোলামেলা অবস্থায় দেখা যায় তাদেরকে।

২০১০ সালে ডেভিড বেকহাম স্পোর্টস পারসোনালিটি অফ দ্যা ইয়ারের আজীবন সন্মামনা পান।

২০১১ সালে এপ্রিলে বৃটিশ রাজপরিবারে সদস্য উইলিয়াম বিয়েতে দেখা যায় ডেভিড বেকহাম এবং ভিক্টোরিয়া বেকহাম জুটিকে। এখানে ভিক্টোরিয়াকে সন্তান সম্ভবা হিসেবে দেখা যায়। এই বিয়ের তিন মাস পর এই জুটির ঘর আলো করে আসে তাদের চতুর্থ সন্তান।

২০১৪ সালের জুলাইতে মার্কিন মুলুক ছেড়ে ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন এই দম্পত্তি এবং তাদের পরিবার। এখানে ফিরে এসে লন্ডনের হল্যান্ড পার্কে একটি বাড়ি কেনেন তারা। আর এই বাড়ি সংস্কার করতে তারা খরচ করেন প্রায় ৩১.৫ মিলিয়ন ইউরো।

২০১৪ সালে তারা নিজেদের বিবাহ বার্ষিকীতে একটি ছবি দেন। যা কখনো আগে দেখা যায়নি। সেখানে তাদের দুজনকেই বেগুনি রংয়ের পোষাকে দেখা যায়। এখানে দেখা যায়, তারা দুইজন একত্রে টাওয়ারের মত লম্বা একটি কেক কাটছেন।

২০১৪ সালে সেপ্টেম্বরে ডেভিড বেকহাম এবং তাদের মেয়ে হার্পার বেকহামকে একটি অনুষ্ঠানে দেখা যায়। যেখানে র‍্যাম্প শো করছিলেন ভিক্টোরিয়া বেকহাম।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ভিক্টোরিয়া বেকহামের নিজস্ব ব্র্যান্ড বৃটিশ ফ্যাশন সপ্তাহে সেরা ব্র্যান্ড হিসেবে স্বীকৃতি পায়। সেখানে লাল গালিচায় দুইজনকেই একসাথে দেখা যায়।

২০১৫ সালে নিজেদের ১৬ তম বিবাহ বার্ষিকীতে ডেভিড বেকহাম তাঁর নিজের ইন্সটাগ্রাম প্রোফাইলে তাদের বিবাহ বার্ষিকীর ছবি দেন। এতে তারা কিভাবে নিজেদের বিবাহ বার্ষিকী পালন করেন সেটা দেখা যায়।

২০১৬ সালে অক্টোবরে বিখ্যাত সাময়িকী ভোগকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভিক্টোরিয়া জানান তিনি প্রথম দেখাতেই এই ডেভিড বেকহামের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন।

২০১৭ সালে জানুয়ারীতে ডেভিড বেকহাম ডেজার্ট আইল্যান্ড ডিস্কসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানান এই দম্পত্তি একটি গোপন অনুষ্ঠানে নতুন করে চুক্তি করেন। তিনি বলেন, ‘এটা খুবই গোপনীয় ছিল। এই সময়ে আমাদের বাড়িতে মাত্র ছয় জন ছিলেন।’

২০১৭ সালের জুলাইয়ে তারা তাদের ১৮ তম বিবাহ বার্ষিকীতে ভিক্টোরিয়া বেকহাম তাদের বিয়ের ছবি প্রকাশ করেন । যেখানে দেখা যায় তাদের বড় ছেলে ব্রুকলিনকে কোলে নিয়ে আছেন ডেভিড বেকহাম।

২০১৮ সালে মে মাসে বেকহাম দম্পত্তি সেন্ট জর্জ চ্যাপেল শহরে প্রন্সি হ্যারি এবং মেগান মর্কেলে বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। এই নিয়ে ভিক্টোরিয়া দ্য ইভেনিং স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, ‘এটা ছিল খুবই সুন্দর এক বিবাহ অনুষ্ঠান।’

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এই দম্পত্তি একসাথে লন্ডনে ফ্যাশন সপ্তাহে অংশ নেন।

লেখক পরিচিতি

খেলাকে ভালোবেসে কি-বোর্ডেই ঝড় তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link