বেশ কিছুদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুঞ্জন বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলি নির্বাচক প্যানেলের মিটিংয়ে উপস্থিত থেকে নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চান। এছাড়া উইমেন্স টি-টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জ নিয়েও হয়েছে আলোচনা। সব মিলিয়ে অনেকটাই সমালোচনার কেন্দ্রে ছিলেন সৌরভ।
তবে সেসব নিয়েই প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআিই) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন বিস্তারিত। জানিয়েছেন তিনি নিজের দায়িত্ব ঠিকভাবেই পালন করছেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ছবিতে ভুল মেসেজ নিয়েছে সমর্থকরা।
আপনার ব্যাপারে অভিযোগ উঠেছে আপনি নির্বাচক কমিটির মিটিংয়ে উপস্থিত থাকেন, নির্বাচকদের উপর চাপ প্রয়োগ করেন?
– আমি মনে করি না এই ব্যাপারে আমার কাউকে কোনো উত্তর দেওয়া উচিত। আমি বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট এবং বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার যা যা করণীয় আমি তাই করছি। আরেকটা ব্যাপারে বলি, হ্যাঁ, আমি দেখেছি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা ছবি ভাইরাল হয়েছে যেখানে আমি নির্বাচক কমিটির প্যানেলের সাথে বসে আছি। আমি এটা পরিস্কার করতে চাই যে, ওই ছবিতে জয় শাহ, অধিনায়ক বিরাট কোহলি, যুগ্ন সচিব জয়েশ জর্জও ছিল যারা কিন্তু নির্বাচক কমিটির সদস্য নয়। এটা নির্বাচক কমিটির মিটিং ছিলো না। আমি ৪২৪ টা আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছি। এটা সবাইকে মনে করিয়ে দেওয়ার খুব একটা খারাপ সময় বোধ হয় নয়!
ক্রিকেট বোর্ডে গেলো ২৬ মাস ধরে জয় শাহের সাথে কেমন ছিলো আপনার কাজের অভিজ্ঞতা?
– জয়ের সাথে খুব ভালো সময় কেটেছে। সে আমার ভালো বন্ধু এবং একজন সহকর্মীও। আমি, জয়, অরুণ (ধামাল) এবং জয়েশ জর্জ – আমরা একসাথে করোনার কঠিন সময়েও বোর্ডে সব ঠিক রাখতে কাজ করেছি। আমরা ক্রিকেটকে মাঠে ফেরানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। আমি বলবো যে সত্যি বেশ ভালো দুইটা বছর কেটেছে। আমরা একটা টিম হিসেবেই এসব কাজ করেছি।
বিরাট কোহলির টেস্ট অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর পর কাকে এই পদে বিবেচনা করছেন?
– হ্যাঁ, অধিনায়কত্ব নিয়ে একটা ভাবনা তো আছে। যে এখানে ফিট হবে তাকেই পরবর্তী অধিনায়ক করা হবে। আমি মনে করি নির্বাচকদের এই ব্যাপারে মাথায় আছে এবং তারা এটা প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারির সাথে আলোচনা করবে। এবং আশাবাদী কিছু সময়ের মধ্যেই নাম ঘোষণা করা হবে।
আপনি সাম্প্রতিক সময়ে বলেছেন যে রাহানে এবং পুজারা রঞ্জি ট্রফিতে খেলবে। এর মানে কি এই যে আসন্ন শ্রীলঙ্কা সফরের স্কোয়াডে তাঁরা বাদ পড়বে?
– আমি যেটা বোঝাতে চেয়েছি তা হলো তাঁরা রঞ্জি ট্রফিতে খেলবে কারণ এটা শ্রীলঙ্কা সিরিজের আগে শুরু হবে। এরপর নির্বাচকরা যাদের ডাকবে তারা দলে আসবে। রঞ্জি ট্রফির এলিট গ্রুপের খেলা ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে শুরু হবে এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট হবে মার্চে। এটা সম্পূর্ণ নির্বাচক কমিটির সিদ্ধান্ত।
কখন আমরা হার্দিক পান্ডিয়ার মতো কাউকে ভারত দলে দেখতে পারবো? এখন যেসব অপশন আছে সেদিক বিবেচনায় দল কি হার্দিকের অভাববোধ করছে না?
– হার্দিক ইনজুরিতে ছিলো এবং যে ব্রেক তাঁকে দেওয়া হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ তাঁর রিকোভারির জন্য। যাতে করে সে লম্বা সময় ভারতীয় ক্রিকেটকে সার্ভিস দিতে পারে। আমি বিশ্বাস করি এবার রঞ্জি ট্রফির শুরু থেকেই তাঁকে খেলতে দেখবো। আমি তাঁর থেকে আরো বেশি ওভার বোলিং চাই। তাহলে তাঁর শরীর আরো শক্তিশালী হবে। এখন সে আইপিএলে আহমেদাবাদ দলের অধিনায়ক এবং এটা একটা প্লাটফর্ম যেখানে সে তাঁর ফর্ম এবং ফিটনেস ফিরে পেতে পারে। এরপরই নির্বাচকরা একটা সিদ্ধান্ত নিবে।
রঞ্জি ট্রফির ব্যাপারে কথা বলতে চাই। ম্যাচ ফি ২.৪ লাখ রুপি পর্যন্ত বাড়ানোর পর অবশেষে টুর্নামেন্টটি শুরু হতে যাচ্ছে। অনেক দলই হয়তো মাত্র তিনটা প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেট দিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করবে। এটা কি আর্থিক একটা ক্ষতি নয় এবং শেয়ারহোল্ডারদের জন্য একটা বড় ইস্যু নয় কি?
– তাঁরা বিজয় হাজারে ট্রফি ও মুশতাক আলী ট্রফিতেও খেলেছে। সেখানেও ম্যাচ ফি বাড়ানো হয়েছে। আপনাকে বুঝতে হবে যে আমরা মেডিকেল টিমের সাথে আলাপের পরই সিদ্ধান্ত নিয়েছি একটা গ্রুপে চারদল থাকবে। আর এভাবে আমরা বায়ো সুরক্ষা বাবলটা ঠিক রাখতে পারবো। করোনার প্রকোপের কারণেই দল কম কিন্তু ভেন্যু বেশি রাখা হয়েছে। অনূর্ধ্ব ২৫, অনূর্ধ্ব ১৯ এবং সামনে উইমেন্স টি-টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জও আছে। এরপর আইপিএলও সামনে যেখানে অনেক প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলা ক্রিকেটার অংশ নিবে। বিসিসিআই কখনোই চায়না তাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলা খেলোয়াড়েরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হোক।
বিসিসিআই উইমেন্স আইপিএল কেনো শুরু করছে না। আবারো কেনো টি-টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে যেখানে একটা রাজ্যে (বেঙ্গল) ছয়টা নারী দল এবং ৯০ জন খেলোয়াড় টি-টোয়েন্টি খেলার মতো আছে!
– আমরা উইমেন্স আইপিএল টুর্নামেন্টের জন্য সবরকম পরিকল্পনা করছি। এটা শীগ্রই হবে। আমি বিশ্বাস করি আগামি বছরই দেখতে পারবো। ২০২৩ উইমেন্স আইপিএল শুরুর জন্য সেরা হবে।
অবশেষে ভারতের আইপিএল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এটা আপনারা কিভাবে দেখছেন?
– আসলে বিসিসইআই সবসময়ই চেয়েছে আইপিএল ভারতেই অনুষ্ঠিত হোক। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি কখন কি হয় বলা যাচ্ছে না। আমরা ভেন্যু নির্ধারণ করবো কিছু সময়ের মধ্যেই। পরিকল্পনা অনুযায়ী ভারতেই আয়োজন করা হবে এবার।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ভারতের এক হাজারতম ওয়ানডের জন্য কোনো বিশেষ উদযাপন কি হবে?
– বায়ো-বাবলে থেকে আসলে খুব বড় কিছু করা সম্ভব না। তাই বড় কোনো উদযাপন হবে না।
শোনা যাচ্ছে কলকাতার রাজ্য সরকার ৭৫ শতাংশ দর্শক প্রবেশের অনুমতি দিবে টি-টোয়েন্টি সিরিজে। তবে মোতেরায় ওয়ানডে সিরিজ হবে দর্শকহীন খালি স্টেডিয়ামে! এ ব্যাপারে কি বলবেন?
– প্রথমে একটা ব্যাপারে স্পষ্ট করতে চাই, আমরা আসলে ইডেন গার্ডেন্সে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য দর্শক অনুমতি দিচ্ছিনা। সাধারণ মানুষদের জন্য কোনো টিকেট থাকবে না। শুধুমাত্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের (সিএবি) নির্দিষ্ট কিছু অফিসিয়ালসরা প্রবেশ করতে পারবে। আমরা দর্শকদের এই মুহূর্তে প্রবেশের অনুমতি দিয়ে ঝুঁকিতে ফেলতে চাইনা।