বয়স কেবলই সংখ্যা!

ক্রিকেটটা আসলে কত বছর বয়স অবধি খেলা যায়?

এই বয়সের রশিটা আসলে কে বেঁধে দেবে? সাধারণ ৪০-৪৫ বছরকে একটা সীমা বলে ধরে নেওয়া যায়। এই বয়সের পর আমরা তেমন কাউকে ক্রিকেট খেলতে দেখিনা। বয়সের ভারে অবসর নেন প্রিয় এই খেলা থেকে। তবে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার ডগ ক্রোয়েলের কাছে বয়স কেবলই একটা সংখ্যা। কুঁজো হয়ে যাওয়া মেরুদণ্ড, কুচকে যাওয়া চামড়া কিংবা পেকে যাওয়া ধবধবে সাদা চুল এসবই তাঁর কাচ্ছে তুচ্ছ। তাঁর কাছে ক্রিকেটটাই সত্য, একমাত্র সত্য।

অস্ট্রেলিয়ার বয়স্ক ক্রিকেটারদের জন্য একটি প্রতিযোগিতামূলক লিগ হয়। শুধু ৬০ বছর পার করা ক্রিকেটাররাই খেলতে পারবেন এই ভেটেরান্স ক্রিকেট লিগে। এই ক্রিকেট লিগ ডগ ক্রোয়েল খেলছেন ১৫ বছর ধরে। যখন শুরু করেছিলেন তখন তাঁর বয়স ৭৫ বছর। তিনি এখনো সেই লিগ খেলে যাচ্ছেন এবং অস্ট্রেলিয়ার আরো হাজারো বয়স্ক ক্রিকেটারদের অনুপ্রাণিত করছেন। এই মূহুর্তে ক্রোয়েলের বয়স ৯১ বছর। হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন, সংখ্যাটা ৯১।

৯১ বছর বয়সী বৃদ্ধ শুনলে আমাদের মাথায় আসে রোগে জড়জড়িত শেষ নি:শ্বাসের দিন গোনা এক মানুষ। শেষ বয়সে বিছানা আর ওষুধই যার সঙ্গী। তবে আমাদের ভুল প্রমাণ করে ডগ অস্ট্রেলিয়ার মাঠে খেলে বেড়াচ্ছেন প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট। তবে তাঁর ক্রিকেট খেলা শুরুটা মোটেই নতুন নয়।

১৬ বছর বয়সে উইনটোন ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে তাঁর ক্রিকেট যাত্রা শুরু। তারপর একটা সময় কাউন্টি ক্রিকেটও খেলেছেন। তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে এই ৯১ বছর বয়সে এসেও তিনি সেই উইনটোন ক্লাবের হয়ে খেলছেন। এই ক্লাবের হয়ে ৭৫ বছর ধরে ক্রিকেট খেলে যাচ্ছেন ক্রোয়েল।

ক্রোয়েলই সম্ভবত অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বয়স্ক ক্রিকেটার। অবশ্য পুরো বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ক্রিকেটার বললেও বোধহয় খুব একটা ভুল হবে না।

এবিসি নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ক্রোয়েল বলেন, ‘এখন হয়তো আর বল ততোটা জোরে আসেনা যতটা জোরে আসার কথা। তাই সের ধীরগতির বল খেলতে বেশি সময় পাওয়া যায়। তবে আমাদের খুব ভালো মানের মাঠ নেই, পিচও খুব একটা ভালো নয় কিন্তু আমরা মানিয়ে নিয়ে খেলে যাচ্ছি।’

অস্ট্রেলিয়ার বয়স্ক ক্রিকেটারদের জন্য এক সাহসের নাম হয়ে উঠেছেন ক্রোয়েল। তাঁকে দেখে অনেকেই শেষ বয়সে আবার মাঠে ফিরে আসছে। আগে যারা বয়সের ভারে মাঠে এসে ভয় পেতেন তাঁরা এখন ক্রিকেট খেলার সাহসটা পাচ্ছেন। তাঁরা মাঠে এসে দেখছেন তারচেয়ে বয়স্ক কিংবা বেশি রোগে জর্জরিত একজন মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ফলে তাঁদের শেষ বয়সের একাকিত্ব দূর করতে কিংবা তরুণ বয়সের সেই স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে আবার নেমে পড়ছেন মাঠে।

এই বয়সে এসেও ক্রোয়েল ক্রিকেট ছাড়ার কথা ভাবছেন না। তিনি বলেন, ‘আমি এখনো ক্রিকেটটা উপভোগ করার জন্য নিজেকে ফিট মনে করি। তাই যতদিন পর্যন্ত আমাকে একাদশে রাখা হবে আমি খেলে যাব। একাদশে সুযোগ না পেলে সাইডবেঞ্চে বসে দলকে সাপোর্ট করতে আসব।;

৯১ বছর বয়সী একজন মানুষের মুখ থেকে এই শব্দ গুলো শোনা সত্যিই অবিশ্বাস্য। তাঁর বয়সের মানুষদের জন্য তো বটেই তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য তিনি বিশাল এক অনুপ্রেরণা। ডগ ক্রোয়েলরাই তো এভাবে যুগে যুগে স্পোর্টসম্যানশিপের জয়গান গেয়ে যান।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link