ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ, পাইপলাইনের রক্ষাকবচ

একটা যুগ পেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। ‘পঞ্চপাণ্ডব’ রাজত্ব থেকে বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছে। সেটাই বরং স্বাভাবিক বিষয়। সময়ের পরিক্রমায় পুরনোদের নিজেদের জায়গা ছেড়ে দিতেই হতো । সেই ছেড়ে দেওয়া জায়গা গুলো নিজেদের করে নিতে মুখিয়ে আছে তরুণ ক্রিকেটাররা।

এই যেমন মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ও জাকের আলী অনিকের কথাই ধরা যাক। গেল মৌসু্মে জাকের আলী অনিকের ব্যাট থেকে রান ঝড়েছে। প্রায় ৫০০ রান করেছিলেন গেলবারের ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে। সেই ধারাবাহিক রানের ধারা তিনি পরবর্তীতেও অব্যাহত রেখেছিলেন।

টুকটাক রান তিনি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও পেয়েছিলেন। তবে বিপিএলের মঞ্চে নজড় কেড়েছিল তার স্ট্রাইকরেট। শেষের দিকে ব্যাট হাত প্রায় ১৪৭ স্ট্রাইকরেটে তিনি রান তুলেছেন। ঠিক সে কারণেই তার ডাক এসেছিল বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দল থেকে।

আফসোস ইনজুরি বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। জাতীয় দলের পতাকাতলে আর আসা হয়ে ওঠেনি তার। সেই আফসোসটা আরও খানিকটা বাড়িয়ে দিচ্ছেন যেন মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। ২৩ বছর বয়সী এই ব্যাটার এবারের ডিপিএলে রয়েছেন দারুণ ছন্দে। উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে চলা মোহামেডানের হয়ে ব্যাট হাতে দায়িত্বশীল সব ইনিংস উপহার দিচ্ছেন তিনি।

এই তো সুপার লিগের প্রথম দিনের ম্যাচে দলের হাল ধরেছেন আবহানীর বিপক্ষে। খেলেছেন ৮৮ রানের এক দূর্দান্ত ইনিংস। তবে দিনশেষে জয়ের মুখ দেখেনি তার দল। তবুও শুরুর দিকের ধাক্কা সামলে তিনি দলকে জয়ের আশা দেখিয়েছেন। জয় তুলে নেওয়ার একটা ভীত গড়ে দিয়ে গেছেন। আর এই ইনিংসের সুবাদে এই আসরে ৫৪৯ রানের মালিক বনে গেছেন তিনি।

ক্রিকেটার হিসেবে অঙ্কন ও জাকের দুইজনই উইকেট রক্ষক ব্যাটার। একজনের একটু বাজে সময়ে আরেকজন পারফরম করছেন। দ্বিতীয় জন নিশ্চয়ই সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছেন। এই কারণেই কিনা ঘরোয়া টূর্নামেন্ট হিসেবে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের কদরটা একটু বেশি। কেননা দেশের পাইপলাইনটাকে সমৃদ্ধ করতে বিরাট ভূমিকা রাখে ডিপিএল।

ঠিক একই রকম মত দিয়েছেন বিসিবি বোর্ড পরিচালক ও আবহানী লিমিটেডের কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের একেবারে ঘাসের খবর রাখা সুজনও মনে করেন পাইপলাইন তৈরিতে ডিপিএল মুখ্য ভূমিকা রাখে। মোহামেডানের বিপক্ষে শ্বাসরুদ্ধকর এক ম্যাচ জয়ের পর তিনি সংবাদ মাধ্যমে এ কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘ডিপিএল অনেক মুখ্য ভূমিকা রাখে। কারণ এখানে ছেলেরা অনেক প্রেশার ম্যাচ খেলে, টাফ ম্যাচ খেলে। কন্ডিশন, সবকিছু বিচারে অনেক টাফ হয়। অবশ্য এখানে যারা ভাল খেলছে তাদের উপর সিলেক্টররা নজর রাখেন, কারা ফিউচার ক্রিকেটার হতে পারে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্যে। ডিপিএল অবশ্যই স্ট্রং প্ল্যাটফর্ম।’

তাছাড়া এবারের ডিপিএলে লড়াইটা হয়েছে জম্পেশ। নবাগত দল থেকে শুরু করে কাগজে-কলমে খর্বশক্তির দলগুলো বেশ লড়াই করেছে এবারের টূর্নামেন্টের শুরু থেকে। আর সেই ক্রিকেটীয় লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণো হচ্ছে দলের তরুণ ক্রিকেটাররা।

খালেদ মাহমুদ সুজন তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে বলেন, ‘ইয়াংস্টাররা উঠে আসছে, তারা অনেক সাহস নিয়ে ক্রিকেট খেলে। পজিটিভ থাকে, এগ্রেসিভ থাকে। এটা ভাল। সব দলেই অনেক ছেলেরা খুবই ভাল খেলছে। এটা খুব আশার কথা যে আমাদের ছেলেরা কম্পিটিটিভ ক্রিকেট খেলছে। ইয়াংস্টাররা প্রেশার নিচ্ছে না, তারা তাদের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলছে। যেটা আমি মনে করি আমাদের পাইপলাইনকে সমৃদ্ধ করছে।’

ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ নিয়ে বহু সমালোচনা হয়। তবুও দেশের ক্রিকেটের সাথে জড়িত সবাই ঠিক এই একটি জায়গায় এসে সহমত পোষণ করে। ঘরোয়া ক্রিকেটে সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক টূর্নামেন্ট ডিপিএল। তাইতো পাকিস্তানের খুশদীল শাহরা এই টূর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে দ্বিধা করেননা। তাছাড়া অতীতেও ভারী ভারী সব নাম দাপিয়ে গেছে ঢাকার ক্রিকেটে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link