১৯৮২ সালে যখন এশিয়ার ছোট্ট এক দ্বীপরাষ্ট্র ক্রিকেট খেলতে ভারতে এল, আলোচনা খুব বেশি হয়নি। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে যখন ১১ রানের মাথায় কপিল দেব আর মদন লালের বোলিং তোপে টপ অর্ডারের দুই ব্যাটসম্যান ফিরে গেল দলটির, ম্যাচে বাকি অংশটুকুতেও ভারতের প্রতাপ তখনই দেখে ফেলেছিল সবাই।
তবে সেই দ্বীপরাষ্ট্রের হয়ে ব্যাট হাতে যিনি দাঁড়িয়ে পড়েন, তিনি রয় ডায়াস। স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছুটিয়ে সে ম্যাচে ৬০ রান করেন তিনি। ডায়াসের এই স্ট্রোকের ফুলঝুরির মাঝেই নন স্ট্রাইকে থাকা আরেক ব্যাটসম্যান নজরে পড়ে বেশ।
দিলীপ মেন্ডিস, সেই খেলোয়াড়টির নাম। ভারতীয় বোলিং লাইন আপের তোপ সামলে শ্রীলঙ্কার উত্থান পর্বেই যিনি সে ম্যাচে খেলে ফেলেছিলেন ১২৩ বলে ১০৫ রানের এক নান্দনিক ইনিংস। প্রান্ত বদল করতে পারতেন সাবলীলভাবে, এটি ছিল দিলীপের শক্ত জায়গার একটি।
১০৫ রানে প্যাভিলিওনে ফিরে যান দিলীপ। তবে ম্যাচে দিলীপ দৃশ্যের তখনও ঢের বাকি। কেননা ভারত তাদের প্রথম ইনিংসে সুনীল গাভাস্কার আর সন্দ্বীপ পাতিলের সৌজন্যে নিয়ে নেয় ২২০ রানের লিড। সেই লিডের জবাব দিতে শ্রীলঙ্কা ব্যাট করতে নামলে মাত্র ৪৭ রানে পড়ে যায় তিন উইকেট। এরপর আবার ত্রাতা হিসেবে আবির্ভাব দিলীপ মেন্ডিসের। রাকেশ শুক্লার বলে ফিরে যাওয়ার আগে দ্বিতীয় ইনিংসে দিলীপের রান আবারও ১০৫!
শেষ পর্যন্ত ভারতকে একটা লক্ষ্য দিতে সমর্থ হলেও, ভারতের সে লক্ষ্য তাড়া করার মত পর্যাপ্ত সময় ছিল না। শেষ পর্যন্ত তাই ড্র মেনে নিয়েই মাঠ ছাড়ে দুই দল। তবে ম্যাড়মেড়ে ড্রয়ের এই ম্যাচেই ক্রিকেট ইতিহাসে নাম লিখিয়ে ফেলেন দিলীপ মেন্ডিস। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে দুই ইনিংসেই একশো রানের কীর্তিটা গড়ে ফেলেন তিনি। যে রেকর্ড আর চাইলেও কেউ কখনও ভাঙতে পারবে না – প্রথমেরে কি আর ভাঙা যায়?
দিলীপ মেন্ডিসের সামনে সুযোগ ছিল এই একই কীর্তি আবার করে দেখানোর। তবে সেই সুযোগের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে এসেছেন তিনি। ঠিক দুই বছর পর যখন তিনি ইংল্যান্ডের সাথে খেলতে নামলেন, দুই ইনিংসে তাঁর রান ১১১ আর ৯৪! সেটা ছিল আবার লর্ডসে। ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টটাও তিনি লর্ডসেই খেলেন। শেষ ইনিংসে করেন ৫৬ রান, যদিও দল হেরে যায়।
এরপর ১৯৮৫ সালে যখন ভারত শ্রীলঙ্কা সফরে গেল, দিলীপ তখন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক। দেশটির ইতিহাসে দ্বিতীয় টেস্ট অধিনায়ক তিনি। ক্যান্ডিতে যখন তিনি টস করতে নামলেন, তিনি কি জানতেন তিনি তাঁর দেশকে প্রথমবারের মত কোন টেস্ট সিরিজ জেতাবেন!
দিলীপ মেন্ডিসকে নিয়ে স্মৃতিচারণের ঘটনা আছে আরও। ১৯৭৫ সালের বিশ্বকাপে জেফ থমসনের বাউন্সারে হাসপাতাল অবধি যেতে হয়েছিল তাকে। যদিও এ ঘটনা নিয়ে থমসন আর দিলীপ দু’জনের ভিন্ন দুই প্রতিক্রিয়া আছে। থমসন যেমন বলেন এটি নাকি সেরকম কোন বাউন্সার ছিলই না। আবার দিলীপের মত তিনি তার জীবনের সবচাইতে দ্রুতগতির স্পেল সামলেছেন থমসনের বলেই।
খেলোয়াড় দিলীপ মেন্ডিসের কেচ্ছা এখানে শেষ করে দিতে পারি, তবে দিলীপ মেন্ডিসের অর্জন আছে আরও। বিশ্বকাপের ষষ্ঠ সংস্করণে যখন শ্রীলঙ্কা অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতে নিল, সেই দলটার ম্যানেজার তো তিনিই ছিলেন। পরে নির্বাচক বনেছেন, ওমানের কোচ হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। বোঝাই যাচ্ছে, ক্যারিয়ারটা তাঁর কম বর্ণাঢ্য নয়!