পুলিশ হতে চাওয়া ছেলেটার সামনে এখন মেসি

জীবনটা এমনই। আর খেলাধূলার জীবন তো আরও অনিশ্চয়তায় ভরা। এই যেমন নেদারল্যান্ডসের গোলরক্ষক আন্দ্রিয়াস নোপার্ট। ভেবেছিলেন, ‍ফুটবলের আড়াল হবেন। অথচ, এখন তাঁর ভাবনায় কেবলই মেসি। কিভাবে আর্জেন্টাইন এই গ্রেটকে আটকানো যায় – তারই ছক কষছেন তিনি। কোয়ার্টার ফাইনালের আগে আর কিছু ভাবার সময়ই নেই তাঁর।

ডাচ দ্বিতীয় বিভাগে ২০২০ সালে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করেন। এর দু’বছরের মাথায় চলতি কাতার বিশ্বকাপে সেনেগালের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে জাতীয় দলে তাঁর অভিষেক। একসময় ফুটবল ছেড়ে দিয়ে ২৮ বছর বয়সী এই গোলরক্ষক পুলিশে যোগদান করতে চেয়েছিলেন। গত বছর ডাচ পেশাদার লিগের গো অ্যাহেড ঈগলসে যোগ দেবার পর এ মৌসমে যোগ দেন হিরেনভিনে। আর এই ক্লাব থেকে নেদারল্যান্ডের কোচ লুইস ফন গালের চোখে পড়েন। তিনি এখন ডাচ দলের এক নম্বর গোলরক্ষক।

শেষ আটের লড়াইয়ে মেসিদের আটকাতে নোপার্ট মরিয়া হয়ে আছেন। বিশেষ করে মেসির পেনাল্টি শ্যুট আটকানোর স্বপ্ন তার অনেকদিনের। এ সম্পর্কে নোপার্ট বলেছেন, ‘এটা নির্ভর করছে পরিস্থিতির উপর। মেসি পেনাল্টি মিসও করতে পারে। এবারের টুর্ণামেন্টে আমরা তাকে পেনাল্টি মিস করতে দেখেছি। আমাদের সাথেও এমন হতে পারে। সেও একজন মানুষ। কিন্তু এটা নিশ্চিত যে সে বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। তবে আমিও তার পেনাল্টি রুখতে পুরোপুরি প্রস্তুত।’

কাতারে এ পর্যন্ত নেদারল্যান্ডের সবগুলো ম্যাচেই খেলেছেন নোপার্ট। কোয়ার্টার ফাইনালের পথে এই ম্যাচগুলোতে হজম করেছেন মাত্র দুটি গোল। এবারের টুর্নামেন্টে সবচেয়ে লম্বা খেলোয়াড় ৬ ফিট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার নোপার্ট ইতোমধ্যেই গোল এরিয়ায় নিজেকে প্রমান করেছেন ও প্রশংসা কুড়িয়েছেন।

এত অল্প সময়ের মধ্যে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া নিয়ে নোপার্ট বলেন, ‘সব খেলোয়াড়েরই স্বপ্ন থাকে বিশ্বকাপে খেলার। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। তবে আমার ক্যারিয়ার দেখলে বোঝা যাবে এখনই এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের কোন সুযোগ ছিলনা। আমি মনে করেছিলাম আমার ক্যারিয়ারে কখনই এটা সম্ভব নয়। তারপরও আমি লড়াই চালিয়ে গেছি। আমি বিশ্বাস করেছি শুধুমাত্র ফন গালই পারবে আমাকে এখানে নিয়ে আসতে এবং সেটাই হয়েছে।’

নেদারল্যান্ডের দীর্ঘ সময়ের নাম্বার ওয়ান গোলরক্ষক জাসপার সিলিসেনকে বাদ দিয়ে নোপার্টকে সুযোগ দেয়া ছিল ফন গালের সাহসী ও বিস্ময়কর সিদ্ধান্ত। ফেনুর্ডের জাস্টিন বিলো ও আয়াক্সের রেমকো পাসভির দলে থাকলেও নোপার্টকেই ফন গাল বেছে নেন। বাকি দুজন মিলে এ পর্যন্ত মাত্র আটটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। প্রথমবারের মত জাতীয় দলে ডাক পাওয়া নোপার্ট ধারণা করেছিলেন দলে তার ভূমিকা হবে ব্যাক-আপ গোলরক্ষকের। কিন্তু ফন গাল তাকে বিশ্বকাপের শুরু থেকেই মূল একাদশে খেলিয়েছেন।

নোপার্ট বলেন, ‘আমার জন্য প্রতিটি ম্যাচই এক। আমি মাঠে নামি বল ধরার জন্য। আমার সামনে বিশ্বের সেরা রক্ষণভাগ থাকায় অনেক সময়ই আমি চিন্তামুক্ত থাকি। আমাদের সকলের এখন একটাই লক্ষ্য, বিশ্বকাপের শিরোপা।’

হ্যাঁ, একদিন ফুটবল ছেড়ে পুলিশ হতে চাওয়া মানুষটাই আজ বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখে। সামনে মেসি থাকলেও পরোয়া করে না।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link