চ্যাম্পিয়ন এন্টারটেইনার কিংবা একজন রকস্টার

২০০৬ সালের কথা। ভারতীয় দল গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটায় হেরে ব্যাটফুটে উইন্ডিজ। দ্বিতীয় ম্যাচটা গড়ালো অন্তিম মুহূর্তে তি বলে ভারতের জিততে দরকার দুই রান। ৯৩ রান করে অপরাজিত ব্যাটসম্যান যুবরাজ সিং। অন সাইডে খেলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ইয়র্কারে বিভ্রান্ত হয়ে বোল্ড হলেন। বোলার ছিলেন এই ব্রাভো। সিরিজটা পরে ৪-১ ব্যবধানে জিতেছিল ক্যারিবিয়ানরা।

সত্যিকারের অলরাউন্ডার বলতে যা বোঝাই তিনি তাই। ব্যাট হাতে তিনি দুর্দান্ত এক ফিনিশার। পরিস্থিতি বুঝে ব্যাট করায় তাঁর ‍জুড়ি নেই। তিনি ডেথ ওভারের তুখোড় বোলার। বিরল প্রজাতির পেস বোলিং অলরাউন্ডার তিনি।

বয়স যাই হোক, এখনো তিনি মাঠের সেরা ফিল্ডারদের একজন। হাঁটুর বয়সী তরুণরা যতই অ্যাক্রোব্যাটিং ফিল্ডিং করুক না কেন, তাঁদের হেড মাস্টার তিনি। অধিনায়কত্বে তিনি স্থায়ী হননি কখনো, তবে যেটুকু সময় ছিলেন, তাতেই ক্যারিবিয়ান বোর্ডকে বুঝিয়ে ছেড়েছিলে যে স্রেফ অধিনায়ক নন, তিনি নেতা। নেতা হতে গিয়ে অনেক বিতর্কেও জড়িয়েছেন, আপোষ করেননি বললেই চলে।

দু’টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী দলে সদস্য তিনি। নিজের মানকে তিনি এমন জায়গায় নিয়ে গেছেন যে, শত নিজেদের মধ্যে শত ঝামেলা আর বিবাদের পরও বারবারই ক্যারিবিয়ান বোর্ড তাঁর দ্বারস্থ হয়। আর তিনিও ফিরেন, আর আন্তর্জাতিক ময়দানে এন্টারটেইন করেন।

বয়স তাঁর জন্য কোনো ঘটনাই নয়। টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে প্রথম ৫০০ উইকেট পাওয়ার পর বলেছিলেন, ৪০ বছর বয়স এখন ‘নিউ ৩০’! আর মাঠের বাইরে? – সেখানে তো তিনি চ্যাম্পিয়ন এন্টারটেইনার। ‘চ্যাম্পিয়ন’ গান দিয়ে বিশ্ব মাতিয়েছেন, কোমড় দুলিয়েছেন তামিল ছবিতে। মাঠের বাইরে তিনি সত্যিকারের রকস্টার।

আর নিশ্চয়ই বুঝতে কোনো অসুবিধা থাকার কথা নয় যে কার কথা বলা হচ্ছে, তিনি হলেন ডোয়াইন ব্রাভো। আধুনিক ধুন্ধুমার টি-টোয়েন্টির যুগে যত এন্টারটেইনার আসছে, ব্যাটে-বলে-ফিল্ডিংয়ে অবিসংবাদিত সেরা তিনি।

ব্রাভো আসলে কি পারেন না? সেই ২০০৫ সালে তিনি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হোবার্ট টেস্টে যখন সেঞ্চুরি তখন প্রতিপক্ষের বোলিং আক্রমণে ছিল তারার মেলা। গ্লেন ম্যাকগ্রা, শেন ওয়ার্ন, ব্রেট লি কিংবা স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল – কে ছিলেন। এই আক্রমণের সামনে তো বিশ্ব সেরা ব্যাটসম্যানদেরও পা কাঁপতে বাধ্য।

২০০৬ সালের কথা। ভারতীয় দল গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটায় হেরে ব্যাটফুটে উইন্ডিজ। দ্বিতীয় ম্যাচটা গড়ালো অন্তিম মুহূর্তে তি বলে ভারতের জিততে দরকার দুই রান। ৯৩ রান করে অপরাজিত ব্যাটসম্যান যুবরাজ সিং। অন সাইডে খেলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ইয়র্কারে বিভ্রান্ত হয়ে বোল্ড হলেন। বোলার ছিলেন এই ব্রাভো। সিরিজটা পরে ৪-১ ব্যবধানে জিতেছিল ক্যারিবিয়ানরা।

ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের যুগে তিনি রীতিমত হট কেক। তাঁর জন্য বিশ্বসেরা দলগুলো আক্ষরিক অর্থেই যেকোনো কিছু করতে করতে পারে।

একটা উদাহরণ দেই। ২০০৮ সালের কথা। অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ আর আইপিএলের সময় নিয়ে গোল বাঁধলো। ব্রাভো খেলছিলেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে। ব্রাভো যাতে সময় মত জ্যামাইকায় প্রথম টেস্ট খেলতে ফিরতে পারেন, সে জন্য স্বয়ং মুকেশ আম্বানি নিজের জেট প্লেনটাই দিয়ে দেন। এভাবেই এন্টারটেইনমেন্টের রাজারা ‘মান আপনি ফিরে পান’!

ব্রাভো একই সাথে বিরাট এক রহস্যময় চরিত্রও বটে। এখন এই বুড়ো বয়সে যাদের হয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলছেন, সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের আশি হাজার ডলারের চুক্তি ব্রাভো ফিরিয়ে দিয়েছেন ২০১০ সালে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ড তাঁকে ‘এ’ দলের হয়ে ইংল্যান্ড সফরে পাঠাতে চেয়েছিল। সেটা না করে, ব্রাভো চেন্নাইয়ের হয়ে আইপিএল খেলাকেই সঠিক সিদ্ধান্ত মনে করেছিলেন।

বোর্ডের সাথে ক্ষণে ক্ষণে তাঁর সম্পর্কের রং বদলেছে। ২০১২ সালে তিনি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। ২০১৩ সালে ওয়ানডে অধিনায়ক নির্বাচিত হন। এক বছরের জন্য কেন্দ্রীয় চুক্তিতে সই করেন। তবে, সেটা ছিল কেবলই ঝড়ের শুরু। পরের বছরই তো তিনি সেই ভারত থেকে দল নিয়ে ফিরে আসার আলোচিত-বিতর্কিত ঘটনা ঘটান।

ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্যারিয়ারের দিকেই এরপর মন দিয়েছিলেন বেশি। আজো তিনি দিব্যি আইপিএল খেলে যাচ্ছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে বিশ্বকাপেও খেলবেন। অনেকটা ওয়াইনের মত, যত পুরনো হন – ততই যেন নেশা বাড়ে!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...