টেস্ট ক্রিকেটে হঠাত হঠাত ডাক পড়তো তাঁর। কারো ইনজুরি কিংবা কারো বিশ্রামে একাদশেও জায়গা হতো। তবে মিরপুরের উইকেটে পেসার থাকা আর না থাকা যেন একই কথা। প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের পরাস্ত করার জন্য লাল বলে স্পিনারদের উপরই ভরসা করতে হতো। এসবের মাঝেই কখনো নতুন বলে কয়েকটা ওভার করার সুযোগ মিলতো, কখনো তাও মেলে না।
এবাদত হোসেনের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম কয়েকটা বছর এমনই ছিল। পুরো বছরে হয়তো হাতে গোনা কয়েকটা উইকেট পেয়েছেন। বোলিং গড় প্রায় ১০০ ছুঁই ছুঁই। দেশের ক্রিকেটে সম্ভবত সবচেয়ে অবহেলিত চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন তিনি। এবাদতের আসল রঙটা চেনা গেল টেস্ট ক্রিকেটেই।
এবছরের শুরুতেই নিউজিল্যান্ডে মাটিতে টেস্ট জয়ের নায়ক বনে গেলেন তিনি। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে কিউইদের বিপক্ষে রূপকথা লিখলো বাংলাদেশ, আর সেই রূপকথার নায়ক এবাদত হোসেন। এবাদতের স্যালুট মিরপুর থেকে পৌছে গেল মাউন্ট মঙ্গানুই অবধি। প্রমাণ করলেন আদর্শ কন্ডিশন আর উইকেট পেলে তিনিও পারেন।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টটা হয়ে উঠলো এবাদতের ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। এরপর গোটা বছরই টেস্ট ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্ম করেছেন। এবছর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটই বেশি খেলেছে বাংলাদেশ। তবুও ২০২২ সালে লাল বলে তাঁর ঝুলিতে আছে মোট ২০ উইকেট।
তবে এতেও বিপত্তি ঘটলো। এবাদতের গায়ে জুড়ে গেল টেস্ট ক্রিকেটারের ট্যাগ। সাদা বলের ক্রিকেটে এবাদতকে রীতিমত অবহেলাই করা হতো। তবে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে টানা পারফর্ম করতে থাকা এই পেসারকে খুব বেশি অবহেলা করা গেল না। ওয়ানডে ফরম্যাটেও ডাকব পড়লো তাঁর।
তবে সেটাও হয়েছিল অন্য কারো ইনজুরির কারণে। শেষ পর্যন্ত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ফরম্যাটে অভিষেক। সেদিন ৩৮ রান দিয়ে তুলে নিয়েছিলেন দুই উইকেট। সাথে তাঁর বোলিং একটা বার্তাও দিয়ে গিয়েছিল। সাদা বলেও তিনি হতে পারেন যথেষ্ট কার্যকর।
এরপর থেকে তিনি অন্তত ওয়ানডে দলে জায়গা পান। তবে এবারো ভারতের বিপক্ষে সিরিজে তিনি একাদশে সুযোগ পাবেন না সেটাই হবার কথা ছিল। তবে এবাদতের কপাল খুললো তাসকিন আহমেদের ইনজুরিতে। ভারতের বিপক্ষে ঘরের মাঠে বড় ম্যাচ। মিরপুরের উইকেটে নিজেকে প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ।
এবাদত হোসেন ভয় পেলেন না। বরং তাঁর বাউন্সার কাপন ধরালো ভারতীয় ব্যাটারদের বুকে। নিজের শক্তির জায়গা থেকে সরে আসেননি। মিরপুরেও একের পর এক বাউন্সার করে গিয়েছেন। শর্ট লেন্থে আঘাত করা বল গুলো ভোগাচ্ছিল শ্রেয়াস আইয়ারদের। একটা সময় উইকেটও পেলেন।
সাকিব-মিরাজের বোলিং ঘূর্নির পাশে নিজের বাউন্সারটাকে জায়গা করে দিতে বাধ্য করলেন। শ্রেয়াস আইয়ারের উইকেটের পর শাহবাজ আহমেদ, লোকেশ রাহুলদেরও তিনিই ফিরিয়েছেন। ওয়ানডে ফরম্যাটে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই প্রমাণ করলেন আরেকবার। সব মিলিয়ে ৪৭ রান খরচ করে তুলে নিয়েছেন ৪ উইকেট। সাকিবের পর আজ বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি।
নিউজিল্যান্ড কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার মত কন্ডিশনগুলোতে তো নিজেকে প্রমাণ করেছেনই। এবার দেখালেন মিরপুরে একজন পেসারের কীভাবে বোলিং করা উচিৎ। লাল বল থেকে সাদা বলের ক্রিকেটেও এখন ভরসার নাম হয়ে উঠছেন তিনি। এবাদতকে আপনি যতই অবহেলা করুন না কেন সে উড়বেই। অন্তত ফরম্যাট দিয়ে তাঁকে ভাগ করা যাবেনা।