ইডেন থেকে ইন্ডিয়া – প্রিন্সের রাজত্ব

ভারতীয় ক্রিকেটের তেমনই এক চরিত্র সৌরভ গাঙ্গুলি । অনেক রথি মহারথির ভিড়ে যাকে চেনা যায় মাথা উঁচু করে রাখার জন্য, যাকে চেনা যায় তার কর্মে কিংবা চেনার জন্য তো কেবল নামটাই যথেষ্ট।

যে নীরবে দিয়ে যান আড়াল থেকে, তার কথা মনে রাখে ক’জন! জীবন হোক বা সিনেমা পার্শচরিত্রকে কেউ মনে রাখে না। তবে যে কেবল দিয়েই যায়, প্রাপ্তির খাতায় তাকে সৃষ্টিকর্তাও দুহাত ভরে দেয়। তাই তো আড়ালে থেকেও কেউ কেউ মহানায়ক হয়, কেউ কেউ হয় মহারাজা। ভারতীয় ক্রিকেটের তেমনই এক চরিত্র সৌরভ গাঙ্গুলি । অনেক রথি মহারথির ভিড়ে যাকে চেনা যায় মাথা উঁচু করে রাখার জন্য, যাকে চেনা যায় তার কর্মে কিংবা চেনার জন্য তো কেবল নামটাই যথেষ্ট।

সালটা ১৯৯২, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে ভারতীয় শিবিরে ডাক পান এক বাঙালী যুবক। চারিদিকে গুঞ্জন কেমন করবেন তিনি। অভিষেকে বাজে পারফর্মের কারণে বাদ পরের সিরিজে। ভারতীয় ক্রিকেট রমরমার মাঝে এরপর আর আলোচনায় আসেননি ৪ বছর। অনেকে ভেবেছিলো যেভাবে ধুমকেতুর মতো আবির্ভাব হয়েছিলো সেভাবেই হয়তো হারিয়ে গেছেন ১৫০ কোটির দেশের কোথাও।

সবাইকে ভুল প্রমাণ করে তিনি ঠিক ৪ বছর পর আবার ফিরে এলেন। তবে মহারাজার ফেরাটা কি আর রাজকীয় না হলে চলে! ফিরেই লর্ডসে করলেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। তবে গুণীর কদর বোঝে কজন। তাই আবার আড়ালেই চলে যান তিনি। পরবর্তী বছর আবারও জাতীয় দলে ডাক পড়ে তার। পাকিস্তানের বিপক্ষে চার ম্যাচে ম্যাচ সেরা হয়ে জানান দেন হারিয়ে যাওয়াটা তার সিলেবাসে নেই।

ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে যখন ইন্ডিয়ান ক্রিকেট দলে টালমাটাল অবস্থা। সে সময় ম্যান ইন ব্লুদের ভাঙা জাহাজের নাবিক হবেন কে! কে তুলবেন একা হাতে জাহজের পাল। ঠিক তখনই এগিয়ে এলেন একজন, এগিয়ে এলেন বুকভরা সাহস নিয়ে। এরপর তো ভারতীয় ক্রিকেটে রুপকথার স্বপ্ন স্বারথী হয়ে আগলে রেখেছেন ক্রিকেটটাকে।

ক্রিকেট মাঠে তখন অজিদের দাপট। তাদের সামনে প্রতিপক্ষ যেন অসহায় আত্মসমর্পণ করছে বার বার। টানা ১৬ জয়ে বিশ্ব ক্রিকেটের রাজত্ব তাদের হাতে। তবে মনিবেরও তো মনিব থাকে। সৌরভ গাঙ্গুলীর দল সেই মাইটি অজিদের তখন রুখে দিয়েছিলো। এরপর তো ক্রিকেটে শুরু হলো ভারতের দাপট। যার রুপকার সেই বাঙালী যুবক, লোকে ভালোবেসে যার নাম দিলো প্রিন্স অফ কোলকাতা।

ভারতীয় ক্রিকেটে সফল অধিনায়ক কে? উত্তরটা দিতে কারো ভাবতে হবে না খুব বেশি, নামটা মাহেদ্র সিং ধোনি। ট্রফির বিচারে ভারতের সবচেয়ে সফল তো তিনি। তবে যখন তিনি সফলতা পেতে শুরু করেন টিম ইন্ডিয়া তখন রেডি প্রোডাক্ট। আর সেই ভাঙা জাহাজকে যিনি একা হাতে ভাসিয়ে নিয়ে এসেছেন এতটা দূর পেছনের কারিগর তো সেই সৌরভ গাঙ্গুলি।

ক্রিকেট ছাড়ার আগে নিজের দলকে সব পরীক্ষার উত্তীর্ণ করিয়েছেন বাকী ছিলো ফলাফল যা আসে ধোনির হাত ধরে। ইন্ডিয়া যে আক্রমনাত্মক ক্রিকেটটা খেলে এটা শুরু হয়েছিলো এই সৌরভ গাঙ্গুলির হাত ধরেই। সে সময় কেউ যখন ভাবেনি তখন তিনি করে দেখিয়েছেন। তাই তো তাকে বলা হয় আধুনিক ভারতীয় ক্রিকেটের জনক।

নিজের সিধান্তে পাহাড়ের মতো অনড়, তীব্র বিশ্বাসটা ছিল নেতৃত্বে অনিল কুম্বলে কিংবা হরভজন সিংদের ক্যারিয়ার তিনি বাঁচিয়েছেন নেতা হয়ে। কখনো কখনো নিজের পজিশনটা দলের জন্য স্যাক্রিফাইস করেছেন তিনি। তার অনেক সিদ্ধান্ত শুরুতে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে বহুবার। ভারতের ক্রিকেটে রাহুল দ্রাবিড় তখন সেরা ব্যাটসম্যান।

ছিলেন নিজের প্রাইম টাইমেও। তবে এক টেস্টে তার ব্যাটিং পজিশনটা নিচে নামিয়ে তিন নম্বরে খেলান ভিভিএস লক্ষ্মণকে। চারিদিকে সমালোচনা কি করলেন দাদা! তবে বাকীটা তো সবারই জানা। ভিভিসের ২৮১রানের ইনিংস সেদিন জিতিয়েছিল দলকে।

ক্রিকেট ক্যারিয়ারটা পাশ কাটিয়ে রাখলে, ক্রিকেট প্রশাসক হিসেবেও একরোখা সৌরভ সফল হয়েছেন। রাহুল দ্রাবিড়কে ভারতীয় কোচ হিসেবে আনার সিদ্ধান্ত যে সময়ের সেরা ছিলো তার প্রমাণ পেয়েছে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট। যুগের সেরা খেলোয়াড় বিরাট কোহলিকে সরিয়ে রোহিত শর্মাকে ক্যাপ্টেন করা। এই কঠিন সিদ্ধান্ত যখন প্রকাশিত হলো ক্রিকেট পাড়ায় গুঞ্জন রেশারেশির বসেই সুযোগ বুঝে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌরভ। তবে সব ছাপিয়ে রোহিত আজ ভারতীয়দের অন্যতম সফল অধিনায়ক।

নিজের উপর বিশ্বাসটা একটা মানুষকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে তার জলন্ত উদাহরণ তিনি। কিভাবে বিপদে শক্ত হয়ে হাল ধরতে হয় তাতো শিখিয়েছেন তিনি। সময়ের পাতায় যা কিছু ইতিহাস হয়ে যায় তার পেছনের গল্পে কতটা ত্যাগ থাকে কতটুকু শ্রম থাকে তা তো দেখিয়েছেন একজন বাঙালী যুবক সৌরভ চন্ডিদাস গাঙ্গুলি।

লেখক পরিচিতি

প্রত্যয় হক কাব্য

স্বপ্ন লেখার কি-বোর্ড

Share via
Copy link