ইডেনের সেরা ইনিংস – আতাহার আলী খানের গল্প

ইডেন গার্ডেন্সে তখনও আলো ঝলমলে। ফাইনালের উত্তেজনায় গমগম করছে গ্যালারি।

কিন্তু, ভেতরে ভেতরে আজব একটা গল্প চলছে। পুরোনো একদল ক্রিকেটপাগল দর্শকের আলোচনার কেন্দ্রে নেই মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নিখুঁত ফিনিশিং, নেই কপিল দেবের হ্যাটট্রিকের রোমাঞ্চ। তাঁদের আলোচনার কেন্দ্রে এক বাংলাদেশি ব্যাটার – আতাহার আলী খান। হ্যাঁ, এখনকার স্টাইলিশ ধারাভাষ্যকার আতাহার আলী খান।

সময়টা নব্বই দশক। ১৯৯০-৯১ মৌসুমের এশিয়া কাপ চলছে। সেবার পাকিস্তান না থাকায় ভারতের পথটা সহজই ছিল। রাউন্ড রবিন লিগের ফরম্যাটে একে একে সব বাধা পেরিয়ে ফাইনালে পৌঁছে যায় তারা। কিন্তু আসল গল্পটা লেখা হয়েছিলো এক লিগ ম্যাচে, যেখানে আনকোড়া বাংলাদেশ দলের আতাহার আলী খান ব্যাট হাতে উপহার দিয়েছিলেন এক মহাকাব্যিক ইনিংস।

২৩ রানে দুই উইকেট নেই। বাংলাদেশের ইনিংস তখনো তরুণ। প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা, যারা উপমহাদেশের স্পিন আর পেস দুই বিভাগেরই রথী-মহারথী। সেই চ্যালেঞ্জের মাঝেই ক্রিজে এলেন আতাহার। গার্ড নিলেন, চোখ রেখে দিলেন বোলারদের দিকে। এরপর যা হলো, তা যেন এক চিত্রনাট্য।

৯৫ বলে ৭৮ রান। জয় অধরা, কিন্তু লড়াই অমর। ড্রাইভ, পুল, কাট – সব শটে ছিলো আত্মবিশ্বাসের ছোঁয়া। ইডেনের গ্যালারি হয়তো প্রথমবারের মতো স্বীকার করে নিয়েছিলো, বাংলাদেশের ক্রিকেটে সত্যিই প্রতিভা আছে।

ম্যাচ শেষে স্কোরবোর্ড বলবে, বাংলাদেশ ৯ উইকেটে ১৭৮ করেছে, জিততে পারেনি। পারার কথাও নয়। কিন্তু পুরস্কার বিতরণী মঞ্চ বলবে, দিনের সেরা পারফরমার একজনই – আতাহার আলী খান। ম্যান অব দ্য ম্যাচের ট্রফিটা তখনো তাঁর হাতের মুঠোয়।

চার দিন পর, সেই একই ইডেন গার্ডেন্সে ফাইনাল। ভারত-শ্রীলঙ্কার উত্তেজনা ছাপিয়ে কেউ কেউ তখনো মনে করছেন, আসল নাটক তো আগেই মঞ্চস্থ হয়ে গেছে। ফাইনালে কপিল দেব হ্যাটট্রিক করেছেন, সনাৎ জয়াসুরিয়া নামের এক তরুণ আলো ছড়াচ্ছেন, আজহারউদ্দীন চোখ ধাঁধানো ব্যাটিংয়ে ম্যাচ শেষ করছেন।

কিন্তু গ্যালারির পুরনো দর্শকেরা কী বলছেন? একজন ফিসফিস করে বললেন, ‘এসব সুন্দর তো বটেই। কিন্তু আতাহারের ইনিংস সেরা ছিল।’

বাকিরা মাথা দোলালেন। সম্মতি জানালেন। ইতিহাসের পাতায় হয়তো স্কোরবোর্ডে লেখা থাকবে না সেই স্বীকৃতি। কিন্তু, ইডেন গার্ডেন্সের পুরনো দর্শকদের হৃদয়ে লেখা হয়ে থাকবে, চিরকাল। স্কোরবোর্ডের বাইরে গিয়েও কিছু ইনিংস বেঁচে থাকে মানুষের মনে, মানুষের কথায়, মানুষের বিস্ময়ে। তেমনই একটা ইনিংস সেদিন খেলেন আতাহার আলী খান।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Share via
Copy link