মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেট ঐতিহ্যগত ভাবেই স্পিন সহায়ক। এটা নিয়ে আলোচনার চেয়ে সমালোচনাই বেশি হয়। ধান ক্ষেত বলতেও ছাড়েন না কেউ কেউ।
তবে, এবার যেন মিরপুর নিজের খোলনলচেই পাল্টে ফেলল। সকাল সকাল দেখা মিলল সবুজ এক উইকেটের। তার ওপর ৯ বছরের বেশি সময় পর দেশের মাঠে তিন বিশেষজ্ঞ পেসার নিয়ে খেলছে বাংলাদেশ।
ম্যাচের শুরু হল চার স্লিপ ও গালি দিয়ে। শর্ট লেগে যথারীতি মুমিনুল হক সৌরভ আছেন। টেস্ট শুরুর সকালের আদর্শ এক দৃশ্য। চার বছর বাদে টেস্ট ক্রিকেটে ফিরেই পেস তোপের মুখে পড়বে – সেই শঙ্কাটাই যেন করছিল আয়ারল্যান্ডের ব্যাটাররা।
প্রথম ঘণ্টায় হয়েছেও তাই। তাসকিন আহমেদ ইনজুরির জন্য ছিলেন না। তবে, এবাদত হোসেন বা শরিফুল ইসলামরা সাধ্যমত করে গেছেন। কিছু এলোমেলো বোলিংয়ের পরও দুই ওপেনারকে সাজঘরে ফেরানো যায় পেসারদের দিয়েই।
তখন পর্যন্ত মনে হচ্ছিল, এই ম্যাচের কলকাঠি নাড়াবেন পেসাররা। তবে, ক্রিকেট বিধাতা নিশ্চয়ই তখন আড়ালে থেকে হাসছিলেন। কারণ, ঠিক এরপরই শুরু হল বাংলাদেশের স্বভাবজাত স্পিন ঘূর্ণি। আর সেই বিষে নীল হল সফরকারীরা।
আইরিশদের যে ১০ টা উইকেটের পতন হল তাঁর মধ্যে তিনটাই কেবল নিতে পেরেছেন ফাস্ট বোলাররা। বাকি সাতটা স্পিনারদেরই দখলে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, দিনটা আসলে তাইজুল ইসলামের। সাকিব আল হাসান কিংবা মেহেদী হাসান মিরাজের স্টারডমের আড়ালে থাকা বাঁ-হাতি স্পিনার ক্যারিয়ারের একাদশতম ফাইফারের দেখা পেয়েছেন।
ইনিংসে তাইজুল বেশ বৈচিত্রময় বোলিং করেছেন। তারই একটি আর্ম বলের ফাঁদে পরে উইকেট হারিয়েছেন কার্টিস ক্যাম্পফার। উইকেটের সুবিধা বেশ ভালোভাবেই আদায় করে নিয়েছেন এই স্পিনার। এর আগে পিটার মুর মিড অফে তামিম ইকবালের হাতে যে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন সেটিও ছিল একটা আর্ম ডেলিভারির টার্নে।
একটি অফব্রেকে এলবিডব্লিউ হয়েছেন অ্যান্ড্রু বালবির্নি। মাঝে পেসার এবাদত একটা উইকেট পেলেও বাকিটা সময় রাজত্ব করেন স্পিনাররাই। শেষের দিকে আইরিশদের ইনিংসও ছেটে ফেলেন তাইজুল-মিরাজরা।
মিরপুরে শেষ টেস্ট খেলা হয়েছিল গত বছরের ডিসেম্বরে। ভারতের বিপক্ষে ঐ টেস্টেও কিন্তু উইকেট থেকে স্পিনাররা ভালে টার্ন পেয়েছিলেন। ভারত শেষ পর্যন্ত টেস্ট জিতেছে, কিন্তু ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে ১৪৫ রান তুলতে গিয়ে তারা সাত উইকেট হারিয়েছে।
এই মাঠে প্রথম ইনিংসের গড় স্কোর ৩৩৬ রান, যেখানে চতুর্থ ইনিংসের গড় স্কোর ১১৭ রান। ফলে, এটা পরিস্কার যে টস জিতে আয়ারল্যান্ডের ব্যাটিংটা মন মত হয়নি। অল আউট হওয়ার আগে তাঁরা করে ২১৪ রান। ফলে, এই টেস্ট কোন দিকে এগোবে, কতদিনে শেষ হবে – তা সময়ই বলে দেবে।
আর দেখতে যেমনই হোক না কেন – মিরপুরে স্পিনাররাই হয়তো রাজত্ব করবেন। যত দিন গড়াবে, উইকেট ভাঙতে শুরু হবে। ফলে, ব্যাটারদের জন্য রান তোলা শক্ত হবে।