বিদায়ী সানাই বাজছে দুয়ারে

স্মরণীয় সেই অস্ট্রেলিয়া সফরটার এক বছরের খুব বেশিদিন সময় যায়নি। সেই সিরিজে ভারতের অন্যতম ইউনিক সেলিং পয়েন্ট ছিল ওই দু’জন। তবে, হয় কি ভারতের ক্রিকেটে আজকাল যে পরিমান প্রতিযোগীতা – তাতে বছর কেন মাস পুরনো লড়াই-ই আর কেউ মনে রাখে না। তাই তো, টেস্ট ক্রিকেট থেকে বাদ পড়ে গেলেন আজিঙ্কা রাহানে আর চেতেশ্বর পূজারা, ভারতীয় টেস্ট দলের লম্বা সময়ের সহযাত্রী।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিতব্য টেস্ট সিরিজকে সামনে রেখে বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) যে দল ঘোষণা করেছে – তাতে এই দুই সেনানী নেই। নির্বাচক প্যানেলের প্রধান চেতন শর্মা যতই বলুন না কেন যে দরজাটা আজীবনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়নি, তবে এটা অনুমানযোগ্য যে সহসাই কোনো ভয়ংকর বিপদ না হলে তাঁদের আর ডাক পড়বে না। মানে, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ফুলস্টপ। শুধু, টেস্ট ক্রিকেটই যে খেলছিলেন দু’জন।

২০১৮-১৯ মৌসুমের কথা। অস্ট্রেলিয়া সফরে সেবারই সর্বশেষ টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন পূজারা। এরপর থেকেই পতনের শুরু হয়। সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরটা ছিল যাচ্ছেতাই। ছয় ইনিংসে কেবল একটি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন পূজারা। এখানেই শেষ নয়, তিন ইনিংসেই যেতে পারেননি দুই অংকে। ফলে, তাঁকে নিয়ে চাপা একটা শঙ্কা তো ছিলই।

অন্যদিকে, রাহানের অফ ফর্মের শুরু খুবই সাম্প্রতিক ব্যাপার। ২০১৯ সালের অক্টোবরের পর রাহানের ব্যাট থেকে এসেছে কেবল একটি সেঞ্চুরি। সেটাও সেই এক বছর আগের খ্যাতনামা অস্ট্রেলিয়া সফরে। প্রথম টেস্টের ভরাডুবি, বিরাট কোহলির বিশ্রামের মঞ্চে অধিনায়ক হিসেবে করা সেই সেঞ্চুরি ভারতকে সাহস যুগিয়েছিল, দেখিয়েছিল বিজয়ের পথ। কিন্তু, এবার পথের শেষটা দেখে ফেললেন রাহানে।

রাহানের বয়স ৩৩, আর পূজারার ৩৪। এই বয়সে বাদ পড়েও কাগজে কলমে ফেরার সুযোগ তো আছেই। তবে, উপমহাদেশিয় ক্রিকেটের ইতিহাস আর সাম্প্রতিক ভারতের ক্রিকেট নীতি বলে, সেটা স্রেফ দিবাস্বপ্ন। ফলে, সতীর্থরা চাইলে ‘প্রায় সাবেক’ বনে যাওয়া দু’জনকে ফেয়ারওয়েল দিয়েই ফেলতে পারেন।

এই দু’জনকে ‘সাবেক’ বলতে যতটা ভাবনা-চিন্তার দরকার হচ্ছে, সেটা অবশ্য ঋদ্ধিমান সাহার ক্ষেত্রে দরকার নেই। কারণ, তাঁর বয়স এখন ৩৭। আর শ্রীলঙ্কা সিরিজের দলে যে তাঁকে রাখা হবে না – সেটা ক’দিন যাবৎ ভারতের ক্রিকেট মহলে ছিল ওপেন সিক্রেট। বোর্ড এখন উইকেটের পেছনেও তারুণ্যই খুঁজছে।

সেখানে ঋষাভ পান্ত কিংবা কেএস ভারতেই ভরসা ভারতের। কোনো সন্দেহ ছাড়াই ঋদ্ধিমান শুধু ভারতের কেন, গোটা ক্রিকেট দুনিয়ারই সেরা উইকেটরক্ষক হতে পারেন, কিন্তু তাঁর ব্যাটিংটায় খুশি হতে পারছে না ম্যানেজমেন্ট। যতই তিনি আগের ইনিংসেই হাফ সেঞ্চুরি করুন না কেন, সেটা হয়তো তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারেই শেষ ইনিংস হয়ে থাকবে।

পথের শেষটা দেখে ফেলেছেন ইশান্ত শর্মাও। কাগজে কলমে তাঁর বয়সও ৩৩। সর্বশেষ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দেশের মাটিতেও টেস্ট খেলেছেন। ভারতের একালের পেস অ্যাটাকের অন্যতম কাণ্ডারি, ৩০০-টির ওপর উইকেট – সবই মিথ্যা যেন। ইনজুরি প্রবণ শরীরটা কি আবারও প্রত্যাখ্যানের যন্ত্রনা সামলে ফিরতে পারবে? – পারলে ভাল, কিন্তু না পারলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

এটাই তো ভারতের ক্রিকেটের বাস্তবতা এখন। একটু এদিক-সেদিক হলেই এখানে ছিটকে যেতে হয়। অধিনায়ক রোহিতের টেস্ট যুগের শুরুর দুয়ারেই হয়তো থেমে গেলেন এই চারজন। ফেরার স্বপ্ন বা আশ্বাস নিয়ে না হোক, কিংবদন্তি যোদ্ধা হিসেবে টিকে থাকুক নামগুলো।

  • ভারতের টেস্ট স্কোয়াড

রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), জাসপ্রিত বুমরাহ (সহ-অধিনায়ক), প্রিয়াঙ্ক পাঞ্জাল, মায়াঙ্ক আগারওয়াল, বিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ার, হনুমা বিহারি, শুভমান গিল, ঋষাভ পান্ত (উইকেটরক্ষক), কেএস ভারত, রবীন্দ্র জাদেজা, জয়ন্ত যাদব, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, কুলদিপ যাদব, সৌরভ কুমার, মোহাম্মদ সিরাজ, উমেশ যাদব ও মোহাম্মদ শামি।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link