‘ত্রুটিপূর্ণ’ ইংলিশ নায়ক

লম্বা একটা সময় ধরে মনে করা হত, অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ হবে বিশ্বজয়ী। কিন্তু, শুরুতে স্পাইনাল ইনজুরি তাঁর পথ আটকে রাখে। তবে, কালক্রমে ক্যারিয়ারের দিশা খুঁজে পান ইংল্যান্ডের ‘নব্য ইয়ান বোথাম’। তবে, সেটা তাঁকে সর্বকালের সেরাদের কাতারে নিতে পারেনি, সেটা ছিল কেবলই ক্ষণিকের মায়াবী বিভ্রম।

উদ্ধতপূর্ণ চেহারা, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, চুইঙ্গাম চিবিয়ে যাচ্ছেন। উইকেট পেয়ে বুনো উল্লাস করছেন দুই হাত মেলে ধরে। দর্শক গর্জন করছে, এই কৃতীত্বটা তো তাঁরই। সবার জন্য দর্শক মাঠে আসে না। আসে গুটিকয়েকের জন্য। তেমনই একজন ছিলেন অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ – দ্য বিগ ফ্রেডি। লোকে ওকে ভালবাসতো, এখনো ভালবাসে।

লম্বা একটা সময় ধরে মনে করা হত, অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ হবে বিশ্বজয়ী। কিন্তু, শুরুতে স্পাইনাল ইনজুরি তাঁর পথ আটকে রাখে। তবে, কালক্রমে ক্যারিয়ারের দিশা খুঁজে পান ইংল্যান্ডের ‘নব্য ইয়ান বোথাম’। তবে, সেটা তাঁকে সর্বকালের সেরাদের কাতারে  নিতে পারেনি, সেটা ছিল কেবলই ক্ষণিকের মায়াবী বিভ্রম।

ফ্রেডির জন্ম ১৯৭৭ সালের ছয় ডিসেম্বর। তিনি বড় হয়েছেন প্রেস্টনে। বাবা ছিলেন প্লাম্বার, কাজ করতেন কারখানাতেও। যাহ, আসল কথাটাই বলা হল না। তিনি ছিলেন ডাটন ফরশোর দ্বিতীয় একাদশের অধিনায়ক। ক্রিকেটটা ফ্রেডির রক্তেই ছিল। স্কুলে ফলাফল মন্দ ছিল না, তারপরও তিনি ১৬ সালে স্কুল ছেড়ে দেন হুট করে, যেভাবে পরে ক্রিকেটটা ছেড়েছিলেন।

পাওয়ারফুল হিটিংয়ের সুবাদে তিনি দর্শকদের প্রিয় পাত্র ছিলেন। বোলিংয়ে ছিল পেস আর কার্যকারিতা। নি:সন্দেহে ২০০৫ সালটা ছিল ফ্লিনটফের বছর। সেবার অ্যাশেজে তিনি ছিলেন ব্যাট ও বল হাতে ইংল্যান্ডের অনবদ্য সিরিজ জয়ের নায়ক।

তাই, যখন সে বছর আইসিসির বর্ষসেরার পুরস্কার জিতে নেন – তাতে কোনো বিস্ময় ছিল না। ভবিষ্যতের নেতাও ভাবা হচ্ছিল তাঁকে। তবে, সেখান থেকে তিনি যেখানে যেতে পারতেন – সেই গন্তব্যে আদৌ পৌঁছাননি ফ্লিনটফ।

তাঁর শরীর ছেড়ে দিতে শুরু করে। সাথে যুক্ত হয় মাঠের বাইরের বিশৃঙ্খলা। ঠিক একই সমস্যা যে বোথামেরও ছিল, তাহলে কেন পারেননি ফ্লিনটফ। বোথাম ছিলেন পুনরুত্থানের নায়ক। তিনি ফিনিক্স পাখির মত ধংসস্তুপের মাঝে ফিরে আসতে জানতেন। ফ্লিনটফ সেই পথ খুঁজে পাননি।

বছর খানেকের মধ্যেই তাই তাঁর মধ্যে আকর্ষণীয় কিছু আর অবশিষ্ট রইলো না। না ব্যাটে, না বলে। আক্ষেপ হয়ে রইলেন তিনি। তবে, সাত হাজারের ওপরে আন্তর্জাতিক রান ও চারশ’র ওপর উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় আজীবন থাকবেন মাত্র ৩২ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানো ফ্রেডি।

শেষটা অবশ্য ইতিবাচকই ছিল। ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়াকে ২-১ ব্যবধানে হারায় ইংল্যান্ড। ইংলিশদের জয় নিশ্চিত করেই সাদা পোশাককে বিদায় জানান ফ্লিনটফ। এর বছরখানেক বাদে সব ফরম্যাটই ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন।

ক্যারিয়ারের শেষ ওয়ানডে ম্যাচেও তাঁর হ্যাটট্রিক ছিল। ২০০৯ সালের এপ্রিলে তিনি সিরিজের পঞ্চম ওয়ানডেতে ছেটে ফেলেন ক্যারিবিয়ানদের টেল এন্ড। ১৯ রানে পাঁচ উইকেট পেয়ে শেষ করেন। তখনও জানতেন না, সেটাই হতে যাচ্ছে তাঁর শেষ ওয়ানডে।

ক্রিকেট ছেড়ে অবশ্য তিনি হারিয়ে যাননি। পেশাদার বক্সিং শুরু করেন। ২০১২ সালে বক্সিং রিংয়ে তাঁর অভিষেকও হয়। এর বাইরে তিনি ইংল্যান্ডের বড় একজন টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব। টক শো-তে হাজির হন, অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় হাজির হন, রিয়েলিটি শো করেন, বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান মাতান – লোকে তাকে যে এখনও ভালবাসে – সেটা বলাটা ঠিক মুখের কথা নয়।

ক্রিকেটে ফেরারও চেষ্টা করেছিলেন তিনি। ২০১৪ সালের মে মাসে তিনি অবসর ভেঙে ফিরে ল্যাঙ্কাশায়ারের হয়ে টি-টোয়েন্টি ব্লাস্ট খেলেন। দলকে নিয়ে যান ফাইনালে। ফাইনালে ইয়ান বেলকে আউট করেন, দুই ছক্ক হাকান – অল্পের জন্য যদিও শিরোপা হারান।

এই পারফরম্যান্সের সুবাদে তাঁর ডাক পড়ে বিগ ব্যাশে। ব্রিসবেন হিটের হয়ে একটা মৌসুমও খেলেন। যদিও, খুব বড় কিছু করতে পারেননি। সেবারই আনুষ্ঠানিক ভাবে ফ্লিনটফের ক্যারিয়ারের পর্দা নামে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...