Social Media

Light
Dark

এক্সপেরিমেন্ট এক্সপার্ট

সাকিব আল হাসান; বাংলাদেশের ক্রিকেটে এক খেয়ালি চরিত্র। আসলে বাংলাদেশ বললে ভুল হয়, বিশ্বক্রিকেটেই সাকিব অনন্য। সাকিবের ক্রিকেট মেধা কিংবা ব্যাট, বল হাতে তাঁর সক্ষমতা নিয়ে নতুন করে আলোচনা করাই বোকামি। প্রতি ম্যাচে, প্রতিটা টুর্নামেন্টেই সাকিব তাঁর এই সক্ষমতার প্রমাণ দেন।

এবারের বিপিএলেও দেখা গেল সেই চেনা সাকিবকে। যে চেনা সাকিবকে আসলে চেনা যায় না, পড়া যায় না। বাইশ গজে তিনি কি করবেন সেটা শুধু তিনিই জানেন। ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক হিসেবেও দেখা গেল সাকিবের নানারকরম পরীক্ষা নীরিক্ষা।

যেমন ক্রিস গেইলকে দুটি ম্যাচে পাঁচ নম্বরে নামিয়েছেন সাকিব। ক্রিস গেইল তাঁর পুরো ক্যারিয়ারের আর মাত্র একবারই পাঁচ নম্বরে নেমেছিলেন। আবার গত ম্যাচে জ্যাক লিনটট বরিশালের হয়ে ওপেন করেন। অথচ ইংলিশ এই স্পিনার এর আগে তাঁর ক্যারিয়ারে কখনো সাতের উপরে ব্যাট করেননি।

আজ আবার ডোয়াইন ব্রাভোকে দিয়ে ওপেন করিয়েছেন ক্রিস গেইলের সাথে। ব্রাভো তাঁর বিপিএল ক্যারিয়ারের এই নিয়ে দ্বিতীয় বারের মত ওপেন করলেন। এছাড়া পুরো ব্যাটিং লাইন আপ নিয়েই ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযাইয়ী নানারকম পরীক্ষা চালিয়েছেন সাকিব। এমনকি নিজেও এক ম্যাচে সাত নম্বরে নেমেছেন।

কখনো তিনে নেমেছেন, আজ আবার নামলেন চার নম্বরে। অর্থাৎ নিজেকে নিয়েও তাঁর পরীক্ষা করা চাই। ক্রিকেটের সাথে যেকোন কিছু করতেই তিনি রাজি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট আসলে যেমন হওয়া উচিৎ। এই ফরম্যাটটা তো আসলে বই মেনে খেলা যায় না। এখানে প্রতি মুহূর্তে যেমন খেলার বাক ঘোরে, তেমন প্রতি মুহূর্তে সিদ্ধান্তও নিতে হয়। আর এই কাজটা সাকিবের চেয়ে ভালো আর কেই বা পারেন।

বল হাতে সাকিবকে নিয়ে বোধহয় তাঁর ক্যারিয়ারে কখনো প্রশ্ন উঠেনি। কোন ম্যাচে উইকেট না পেলেও ইকোনমিক্যাল বোলিং করে পুষিয়ে দিয়েছেন। এবারের বিপিএলেও বল হাতে নিজের কাজটা করে যাচ্ছেন। কোন ম্যাচেই চার ওভারে ২৫ এর বেশি রান খরচ করেননি। মোদ্দাকথায় টিপিক্যাল সাকিব যেমন হন।

তবে ব্যাট হাতে আসলে ভুগছিলেন। সেটা শুধু এই বিপিএলে নয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও অনেকদিন ধরেই ব্যাট হাতে সাকিবের সেরাটা পাওয়া যাচ্ছেনা। বড় ইনিংস কিংবা সাকিবসুল্ভ ইনিংস খেলতে পারছিলেন না। আজ সেই লেটাও চুকলো।

চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমে খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে আজ অনেকদিন পর বোধহয় নিজেকে ফিরে পেলেন। দারুণ সব শট খেললেন উইকেটের চারপাশে। সবচেয়ে বড় কথা অনেকদিন পর ব্যাট হাতে সাকিব নিজের মত করে খেললেন। ২৭ বলে ৪১ রানের ইনিংসটায় খুঁজে পাওয়া গেল চিরচেনা সাকিবকে। ২ চার ও ৩ ছয় নিয়ে ব্যাটিং করেছেন ১৫১.৮৫ স্ট্রাইকরেটে।

আবার বল হাতেও সাকিবের ম্যাজিক দেখা গেল। প্রথম তিন ওভার বোলিং করে খরচ করেছিলেন মাত্র ৫ রান। নিয়েছিলেন এক উইকেট। আর শেষ ওভারে আরো ৫ রান দিয়ে নিলেন আরেকটি উইকেট। সবমিলিয়ে চার ওভার শেষে মাত্র ১০ রান খরচ কর্এ তাঁর ঝুলিতে ২ উইকেট। এছাড়া ব্যাট হাতে ৪১ রানের ইনিংস তো আছেই। দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবার জন্য আর কীই বা করতে হয়।

সাকিবের এই পরীক্ষা নিরীক্ষা করেই সাফল্য এনে দিচ্ছেন ফুরচুন বরিশালকে। পাঁচ ম্যাচে তিনজন ভিন্ন ওপেনারকে ব্যবহার করলেন। এর আগে ২০১৭ সালে ঢাকার হয়ে ১৩ মাচে ছয়টা ভিন্ন ওপেনিং জুটি নামিয়েছিলেন। অর্থাৎ বাজি ধরার এই খেলায় সাকিব বেশ পাকা। তাঁর উপরে তাই নিশ্চিন্তেই ভরসা করা যায়। আর ব্যাট, বল হাতে জাদু তো আছেই।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link