উন্মুক্ত চাঁদ, উচ্চকিত সম্ভাবনার করুণ পরিণতি

২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতের অধিনায়ক ছিলেন উন্মুক্ত চাঁদ। তাঁর নেতৃত্বেই তৃতীয় বারের মত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তোলে ভারত। শুধু নেতৃত্ব দিয়ে নয়, ব্যাটিং দিয়েও নজর কেড়েছিলেন তিনি।

উন্মুক্ত চাঁদ।

নামটা খুব পরিচিত ঠেকছে? হ্যাঁ, পরিচিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে গিয়েছেন। এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না তাকে। কারণ সময়ের অতল গহ্বরে হারিয়ে গেছেন তিনি।

সাধারণত একজন ক্রিকেটারকে গড়ে তুলে আনার জন্য ক্রিকেটার বাছাই করা হয় ১৯-২০ বছর বয়সে। এর উৎকৃষ্ট প্রমান হলো অস্ট্রেলিয়ার প্যাট কামিন্স। ভারতেরও ঠিক এমন একজন ক্রিকেটার ছিলেন যাকে নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড অনেক পরিকল্পনা সাজিয়েছিলো। তিনি হলেন উন্মুক্ত চাঁদ।

২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতের অধিনায়ক ছিলেন উন্মুক্ত চাঁদ। তাঁর নেতৃত্বেই তৃতীয় বারের মত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তোলে ভারত। শুধু নেতৃত্ব দিয়ে নয়, ব্যাটিং দিয়েও নজর কেড়েছিলেন তিনি।

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দিয়ে আলোচনায় আসেননি তিনি। ২০১২ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দিয়ে সারা বিশ্বের নজরে এসেছিলেন তিনি। আর তখন ঘরোয়া সার্কিটে ছিলেন নিয়মিত পারফর্মার। ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রথম নজরে আসেন ২০১০ সালে।

যখন দিল্লি অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে দূর্দান্ত একটি মৌসুম কাটাচ্ছিলেন। দুইটি শতক এবং একটি শতকের সৌজন্যে করেন ৪৯৯ রান। এরপর তাঁর জন্য দরজা খুলে যায় দিল্লী রঞ্জি দলের। দিল্লি রঞ্জি দলের হয়ে অভিষেক মৌসুমও বেশ ভালো শুরু করেন উন্মুক্ত চাঁদ। দিল্লীর হয়ে নিজের চতুর্থ প্রথম শ্রেণির ম্যাচেই খেলেন ১৫১ রানের একটি ইনিংস। এটিই ছিলো প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর প্রথম শতক। এরপর এই মৌসুমেই আরো দুইটি অর্ধশতক করেন উন্মুক্ত চাঁদ।

ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করার পাশাপাশি অনূর্ধ্ব-১৯ দলেও বেশ ভালো করতে থাকেন। কোনো ম্যাচে ভালো না করলেও বড় ম্যাচ গুলোতে বেশ ভালো করছিলেন উন্মুক্ত চাঁদ। তখন তাকে বলা হত উন্মুক্ত চাঁদ হবেন বড় ম্যাচের ক্রিকেটার যিনি বেশ চাপের মধ্যে খেলতে পারেন।

কিন্তু অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের পরই আস্তে আস্তে হারিয়ে যাওয়ার শুরু উন্মুক্ত চাঁদের। ২০১১ সালে প্রথমবারের মত আইপিএলে দিল্লূ ডেয়ারডেভিলসে সুযোগ পান তিনি। এরপর আরো দুই ফ্রাঞ্চাইজির হয়ে আইপিএলে খেলেছেন। মোট ২১ ম্যাচে করেছেন ৩০০ রান, যার মধ্যে একটি অর্ধ শতক ছিলো। সর্বশেষ আইপিএলে দেখা গিয়েছিলো ২০১৬ সালে। আইপিএলে দল হারানোর পর নিজের ঘরোয়া লিগের দলেও জায়গা হারান উন্মুক্ত চাঁদ।

দিল্লি দলে জায়গা হারানোর পর দল পরিবর্তন করে চলে আসেন নিজ জন্ম ভূমি উত্তরাখন্ড রঞ্জি দলে। বেশ কয়েকবছর ধরে এই দলের হয়েই খেলছেন রঞ্জি দলে। কেন হারিয়ে গেলেন উন্মুক্ত চাঁদ? অতিরিক্ত স্টারডম নাকি প্রত্যাশার চাপে ভেঙে পড়েছেন তিনি?

২০১২ সালে অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের পর ছয়টি ব্রান্ডের সাথে চুক্তি করেন উন্মুক্ত চাঁদ। এছাড়া একটি কোমল পানীয়র বিজ্ঞাপণে তাকে দেখা যায় বিরাট কোহলি এবং মহেন্দ্র সিং ধোনির সাথে। বয়সের বেশ আগেই পেয়েছিলেন তারকাখ্যাতি।

আর এই তারকাখ্যাতিই কিছুটা কাল হয়ে দাঁড়ায় উন্মুক্ত চাঁদের জন্য। এছাড়াও দিল্লী দলে বেশ রাজনীতিরও শিকার হন উন্মুক্ত চাঁদ। ভারতীয় ‘এ’ দলে ভালো পারফর্ম করার পরও দিল্লী দলে সুযোগ পান নি তিনি। আর এ কারণেই দিল্লি ছেড়ে পাড়ি জমান নিজ জন্মভূমি উত্তরাখন্ডে।

উন্মক্ত চাঁদ হতে পারতেন শেবাগ, গম্ভীর যে কারো বদলী ক্রিকেটার। কিন্তু প্রত্যাশা চাপ কিংবা ঘরোয়া রাজনীতির বলি হয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন রঞ্জিতে, এরপর থিঁতু হয়েছেন আমেরিকায়। হয়তো, আমেরিকার হয়ে দ্রুতই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হবে তাঁর, কিন্তু দুধের স্বাদ কি আর ঘোলে মেটে?

 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...