জেমস অ্যান্ডারসন সম্ভবত এশিয়ার মাটিতে তাঁর শেষ টেস্ট খেলে ফেলেছেন। যাই হোক, এই বয়সে দূর্দান্ত যে ফর্ম তাতে আরো বেশ কিছুদিন সহজেই খেলতে পারবেন। আমরা সম্ভবত আর কখনোই দিল্লী, লাহোর, দুবাই – এইসব মাঠে জেমস অ্যান্ডারসনকে বোলিং শুরু করতে দেখবো না। এমনকি যদি অ্যান্ডারসন এশিয়াতে ফিরতে না পারে তাহলেও সে এশিয়ায় খেলা সেরা পেসার হিসেবে বিবেচিত হবেন।
৩৮ বছর বয়সেও সাম্প্রতিক সময়ে শেষ হওয়া ভারতের বিপক্ষে সিরিজে দলের প্রধান পেসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। যদিও এই সিরিজে স্পিনাররা আধিপত্য বিস্তার করেছে। তবুও এই সিরিজে সেরা পেসার ছিলেন জেমস অ্যান্ডারসন। তিনি সিরিজে ১৫.৮৭ গড়ে শিকার করেছেন ৮ উইকেট।
অ্যান্ডারসন ক্যারিয়ারের প্রায় দুই দশকের বেশি সময় কাটিয়ে ফেলেছেন। এশিয়াতে সবচেয়ে সেরা সময় কাটিয়েছেন এই মৌসুমে। এইবারের ইংল্যান্ড দলের এশিয়া সফরে চার টেস্টে ১২.৩৫ গড়ে নিয়েছেন ১৪ উইকেট।
পেসারদেরকে মাঝে মধ্যে বিচার করা হয় এই উপমহাদেশের পরিবেশে কতটুকু মানিয়ে নিতে পারে। এশিয়ার উইকেট কিছুটা কঠিন? নাকি পেসাররা এখানে সুবিধা করতে পারে না?
এশিয়ার উইকেটে পেসারদের দাপটও আস্তে আস্তে বেড়ে যাচ্ছে। অন্তত পরিসংখ্যান এই কথা বলে।
যদি আমরা সর্বশেষ ৫০ বছরে এই উপমহাদেশে স্পিনার এবং পেসারদের দাপটের কথা পরিসংখ্যান একই সাক্ষ্য দেয়। এশিয়ার উইকেটে পেসার এবং স্পিনার সবারই বোলিং গড় প্রায় ৩৩।
আবার আমরা যদি একুশ শতকের প্রথম দিকে তাকাই তাহলে দেখা যাবে এই সময়ে উপমহাদেশের উইকেটে পেসাররা সবচেয়ে বেশি কষ্ট করেছে উইকেট নিতে । স্পিনাররা বেশ সহজেই তুলে নিতে পেরেছেন উইকেট। তারপরেও ডেল স্টেইন, জেমস অ্যান্ডারসন, গ্লেন ম্যাকগ্রার মত পেসাররা উপমহাদেশের উইকেটে বেশ সফলতা পেয়েছে।
- ডেল স্টেইন (দক্ষিণ আফ্রিকা)
২১ শতকের অন্যতম সেরা পেসার হলেন ডেল স্টেইন। এই উপমহাদেশের পরিবেশে বেশ দূর্দান্ত বোলিং করতে পারতেন তিনি। এই গতি তারকার মূল অস্ত্র ছিলো রিভার্স সুইং। ডেল স্টেইন সহজেই এই উপমহাদেশের পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারতেন। আর এর ফলেই উপমহাদেশের মরা উইকেটে বেশ সফল হয়েছেন তিনি।
২০১০ সালে ভারতের বিপক্ষে নাগপুর টেস্টে ৫১ রানে ৭ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে জয় এনে দেন। এছাড়াও ২০০৭ সালে পাকিস্তান এবং ২০১৪ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষেও বেশ দূর্দান্ত বোলিং করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে জয় এনে দেন। এছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকা হেরেছে এমন ম্যাচেও বেশ ভালো পারফর্ম করেছেন তিনি।
এশিয়ার মাটিতে স্টেইন খেলেছেন ২২ টেস্ট । ২২ টেস্ট ২৪.১১ গড়ে শিকার করেছেন ৯২ উইকেট। এর মধ্যে পাঁচ উইকেট নেয়ার স্বাদ পেয়েছেন পাঁচ বার, আর সেরা বোলিং ভারতের বিপক্ষে নাগপুরে।
- কোর্টনি ওয়ালশ (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
কোর্টনি ওয়ালশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের অন্যতম সেরা পেসার। তাঁর সময়ে বিশ্বকে বিশ্বের অন্যতম ভয়ংকর পেসার ছিলেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ছয় বার এশিয়া টেস্ট সিরিজ খেলতে এসেছিলেন তিনি।
এশিয়ার মাটিতে তাঁর সেরা অর্জন হলো দিল্লি এবং করাচিতে। ১৯৮৭ সালে দিল্লিতে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে দূর্দান্ত বোলিং করে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন। এছাড়াও করাচিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২১ রানে ৪ উইকেট নেয়া একটি স্পেল করেছিলেন। কোর্টনি ওয়ালশ এশিয়াতে এসেছিলেন একজন প্রতিভাবান পেসার হিসেবে। প্রতিষ্ঠিত পেসার হিসেবে এশিয়াতে খেলতে পারেননি ওয়ালশ।
এশিয়াতে খেলা ১৭ টেস্টে শিকার করেছেন ৭৭ উইকেট। পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন পাঁচ বার। সেরা বোলিং ৭৯ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট।
- জেমস অ্যান্ডারসন (ইংল্যান্ড)
ইংল্যান্ডের ইতিহাসের সেরা পেসার জেমস অ্যান্ডারসন। বয়স প্রায় ৪০ এর ঘরে হলেও এখনো দূর্দান্ত ফর্মে আছেন তিনি। সম্প্রতি শেষ হওয়া ভারত এবং শ্রীলংকা সিরিজের আগে এতো দূর্দান্ত পারফর্ম করতে পারেননি তিনি।
এশিয়াতে মোট ২৬ টেস্ট খেলেছেন জেমস অ্যান্ডারসন। এই ২৬ টেস্টে সংগ্রহ করেছেন ৭৪ উইকেট। বোলিং গড় ২৭.৬৭। পাঁচ উইকেট নিয়েছেন মাত্র দুই বার। সেরা বোলিং ৪০ রানে ৬ উইকেট।
- গ্লেন ম্যাকগ্রা (অস্ট্রেলিয়া)
গ্লেন ম্যাকগ্রা বিখ্যাত ছিলেন তাঁর বোলিং লাইন এবং অ্যাকুরেসির জন্য। দূর্দান্ত লাইন-লেন্থের জন্য বেশ ভালো খেলতে পারতেন তিনি।
এশিয়ার মাটিতে তাঁর সেরা সময় ছিলো ২০০১ সাল। ২০০১ সালে ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ১৫.৩৫ গড়ে শিকার করেছিলেন ১৭ উইকেট। যদিও এই সিরিজে সেরা বোলার ছিলেন ভারতে হরভজন সিং। এই স্পিনিং উইকেটেও ১৭ উইকেট নিয়েছিলেন গ্লেন ম্যাকগ্রা।
এশিয়ার মাটিতে গ্লেন ম্যাকগ্রা খেলেছিলেন ১৯ টেস্ট। ১৯ টেস্টে তাঁর সংগ্রহ ছিলো ৭২ উইকেট। বোলিং গড় ২৩.৩ এবং পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন মাত্র একবার।
- ম্যালকম মার্শাল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইতিহাসের অন্যতম সেরা পেসার ছিলেন ম্যালকম মার্শাল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস আক্রমণের যে বীরত্ব গাথা আছে তাঁর অন্যতম বাহক ছিলেব ম্যালকম মার্শাল।
যেকোনো উইকেটে রক্ত ঝড়াতে পারতেন মার্শাল। ১৯৮০ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেছেন তিনি। ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ফাইনাল হারার পরের সিরিজেই ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে শিকার করেছেন ৩৩ উইকেট। আর তাঁর বোলিং কৃত্বিতের জন্যই ভারতের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিতে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এশিয়ার মাটিতে ১৯ টেস্টে ২৩.০৫ গড়ে শিকার করেছেন ৭১ উইকেট। পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন তিনবার।