প্রায় বিদ্যুৎ সম গতিতে ছুটে এসে বল ছুড়লেন, অপরদিকে থাকা ব্যাটার গতি, সুইং এবং বুদ্ধিমত্তায় পরাস্ত। মুহূর্তেই এক বুনো উল্লাসে ফেটে পড়লেন দীর্ঘকায় এক খেলোয়াড়। আগ্রাসী এক উদযাপন। এটাই তো একজন পেস বোলার। কিংবা ভাল লাইন লেন্থের একটি বল ব্যাটারের ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে চলে গেলো উইকেট রক্ষকের দস্তানায়। এর পর হিংস্র বাঘের এক চাহনিতে ব্যাটারকে ভরকে দেয়। তিনিই তো ফাস্ট বোলার।
চিরায়ত নিয়মে ক্রিকেটে ফাস্ট বোলারদের সংজ্ঞা এমনই। এই আগ্রাসী বোলারদের কাঁধে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া দায়িত্ব তুলে দেওয়ার নজির ক্রিকেটে তেমন একটা নেই। অল্পস্বল্প উদাহরণ থেকেই সফলতম অধিনায়কদের নিয়ে হবে আজকের আলোচনা।
- কপিল দেব (ভারত)
ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম অধিনায়কদের একজন ভারতের কপিল দেব। তাঁর নেতৃত্বেই ১৯৮৩ সালে ভারত জিতেছিলো নিজেদের প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপ। তাছাড়া কপিল দেব ৩৪ টেস্ট ম্যাচে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও ৭৪ ওয়ানডেতে ছিলেন ভারত জাতীয় ক্রিকেট দলের দলনেতা।
মূলত একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার অধিনায়ক থাকাকালীন সময়ে ওয়ানডেতে ১২৬৪ রান করার পাশাপাশি ৯১টি উইকেট নিয়েছিলেন। অপরদিকে সাদা পোশাকে ১৩৬৪ রানের বিপরীতে তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ১১১টি উইকেট।
- ইমরান খান (পাকিস্তান)
পাকিস্তানে প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপের শিরোপাটা এসেছিলো ডান-হাতি পেস বোলার ইমরান খানের হাত ধরে। ১৯৯২ সালে পাকিস্তানের হয়ে একমাত্র বিশ্বকাপ জেতানোতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ইমরান খান। বিশ্বকাপ জেতানোর পাশাপাশি আরো ৪৮টি টেস্ট ও ১৩৯টি ওয়ানডে ম্যাচে ছিলেন অধিনায়কের দায়িত্বে।
দলকে জয় এনে দিতে শুধু যে অধিনায়কের দায়িত্বই পালন করেছিলেন এই অলরাউন্ডার তা কিন্তু নয়। সমান তালে ব্যাট ও বল হাতে নিজের সর্বোচ্চ অবদানটুকু রেখেছিলেন ইমরান খান। অধিনায়কের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে ইমরান খান যথাক্রমে টেস্ট ও ওয়ানডেতে উইকেট নিয়েছিলেন ১৮৭টি ও ১৩১টি।
- ড্যারেন স্যামি (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
দুইবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতা একমাত্র অধিনায়ক ওয়েস্ট ইন্ডিজের ড্যারেন স্যামি। ২০১২ এবং ২০১৬ এই দুই বছর ক্রিকেটের ছোট ফরম্যাটে তিনি জিতেছিলেন শিরোপা। তাছাড়া বাকি ফরম্যাট গুলোতেও তাঁর অভিজ্ঞতা রয়েছে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করার।
তিনি তিন ফরম্যাট মিলিয়ে সর্বোমোট ১২৮টি ম্যাচে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এই লম্বা একটা সময়ে তাঁর উইকেট সংখ্যা ১১৭টি। ক্যারিবিয়ানদের হয়ে শেষের দিকে নেমে হাজের দুয়েক রানও করেছেন স্যামি।
- লাসিথ মালিঙ্গা (শ্রীলঙ্কা)
২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিলো দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ শ্রীলঙ্কা। সেবার দীনেশ চান্ডিমালের পরিবর্তে ফাইনালে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন লাসিথ মালিঙ্গা। পুরোদস্তুর একজন পেস বোলার মালিঙ্গা দলকে শিরোপা জেতাতে বিন্দুমাত্র ভুল করেনি।
সেই বিশ্বকাপ জেতানো ছাড়াও সব ফরম্যাট মিলিয়ে মালিঙ্গা ৩৩ বার লংকানদের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এ সময়ে তিনি ৪২টি উইকেটও নিয়েছিলেন। যদিও খুব একটা লম্বা সময় তিনি অধিনায়কের দায়িত্ব ছিলেন না। তবুও বিশ্বকাপ জয় তাঁকে পেস বোলারদের মধ্যে একজন সফলতম অধিনায়ক হিসেবেই বিবেচনা করতে বাধ্য করছে।
- ওয়াসিম আকরাম (পাকিস্তান)
আরো একটি বিশ্বকাপ জয়ের দাঁড়প্রান্তে চলে গিয়েছিলো দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম ক্রিকেট পরাশক্তি পাকিস্তান। ১৯৯৯ সালে ওয়াসিম আকরামের নেতৃত্বে পাকিস্তান দল উঠেছিলো বিশ্বকাপের ফাইনালে। কিন্তু বিশ্বকাপটা আর জেতা হয়ে ওঠেনি পাকিস্তানের। অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে যেতে হয়।
এই আক্ষেপের গল্প ছাড়া ওয়াসিম অন্যতম সফল একজন অধিনায়ক পেস বোলারদের মধ্যে। তিনি টেস্ট ও ওয়ানডেতে যথাক্রমে ২৫ ও ১০৯টি ম্যাচে পালন করেছিলেন অধিনায়কের দায়িত্ব। বা-হাতি এই পেসার অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি লাল বল হাতে নিয়েছিলেন ১০৭টি উইকেট। অন্যদিকে সাদা বলের উইকেটের সংখ্যা ১৫৮টি।
- শন পোলক (দক্ষিণ আফ্রিকা)
একজন অলরাউন্ডার হলে শন পোলক বিশ্বক্রিকেটে একজন পেস বোলার হিসেবেও বেশ প্রসংশা কুড়িয়েছেন। বিশ্বক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি দল দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ২০০০-০৭ এই ক’বছরে ভিন্ন তিন ফরম্যাটে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
অলরাউন্ডার হওয়ার সুবাদে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি ব্যাট এবং বল হাতে সমানতালে নিজের সেরাটুকু দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন শন পোলক। তিনি সব ফরম্যাট মিলিয়ে মোট ১২৪টি ম্যাচে ছিলেন প্রোটিয়াদের অধিনায়ক। এই ১২৪ ম্যাচে তাঁর নেওয়া উইকেটের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ ২৩৮টি। তাছাড়া ব্যাট হাতে ২৬.৮০ গড়ে ১৬৮৯ রান করেছেন তিনি। তাছাড়া টেস্ট তাঁর জয়ের পরিসংখ্যান ৫৩.৮০%।
- জেসন হোল্ডার (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
পেস বোলার হয়েও বেশ একটা লম্বা সময় ধরে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন জেসন হোল্ডার। মূলত একজন অলরাউন্ডার হলেও নিজের ব্যাটিং সত্ত্বাকে সম্পূর্ণ মেলে ধরার সুযোগ খুব কমই পেয়েছিলেন হোল্ডার।
ক্যারিবিয়ানদেরকে ১২৬টি ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়া দীর্ঘকায় এই অলরাউন্ডার ২০৩টি উইকেটের মালিক। তাছাড়া নামের পাশে শোভা বাড়াচ্ছে ৩৪১৫ রান। পেস বোলারদের মধ্যে তিনি সফলতম একজন দলনেতা। যার টেস্টে জয় ২৯.৭২%।
- হিথ স্ট্রিক (জিম্বাবুয়ে)
জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের এক উজ্জ্বল তারকা হিথ স্ট্রিক। তিনি দলের হয়ে ২১টি টেস্ট ও ওয়ানডেতে ৬৮টি ম্যাচে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এই সময়ে তিনি বল হাতে সাদা পোশাকে নিয়েছিলেন ৫৬ উইকেট।
অপরদিকে রঙিন পোশাকে অধিনায়ক হিথ স্ট্রিক নিয়েছিলেন ৮৯টি উইকেট। ওয়ানডেতে দলকে প্রায় ২৭.৬৯% ম্যাচে জয়ের দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর কোচিং ক্যারিয়ারে বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচের দায়িত্বও পালন করেছিলেন।
- কোর্টনি ওয়ালশ (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং কোচের দায়িত্ব পালন করা সাবেক কোচ কোর্টনি ওয়ালশ তাঁর খেলোয়াড়ি জীবনে ছিলেন বেশ নামকরা একজন পেসার। পেস বোলার হওয়া ছাড়াও তিনিও এই তালিকায় থাকা বাকিদের মতো তাঁর দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সর্বোমোট ৬৫টি ম্যাচে।
এ সময়ে ওয়ানডেতে ৪৮টি উইকেট নেওয়ার পাশপাশি লাল বল হাতে তিনি নিয়েছিলেন ৮৫টি উইকেট। সফলতার মানদণ্ডে পেস বোলার এবং অধিনায়ক হিসেবে তিনি অন্যতম সফল একজন।
- মাশরাফি বিন মর্তুজা (বাংলাদেশ)
পরিশেষে যার নাম ছাড়া এই তালিকাটা অপূর্ণ থেকে যায় তিনি বাংলাদেশের মাশরাফি বিন মর্তুজা। ইনজুরির থাবায় ক্যারিয়ার বিপন্ন হওয়া থেকে ৩৬০ ডিগ্রি উলটে হয়েছেন বাংলাদেশের অন্যতম সফল অধিনায়ক। তাঁর অধীনে মোট ১১৭টি ম্যাচ খেলেছে। যেখানে ওয়ানডের আধিক্যই বেশি।
তাঁর নেতৃত্বে বড় দল হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে ৫৮.১৩% ম্যাচে জয় ছিনিয়ে আনার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন মাশরাফি। শুধু নেতৃত্ব দিয়েই খালাস হয়নি তিনি সমানতালে প্রতিপক্ষের রান আটকানো থেকে শুরু করে উইকেট তুলে নেওয়াতেও ছিলেন তৎপর।
অধিনায়ক মাশরাফির ঝুলিতে রয়েছে ১২২টি উইকেট সব ফরম্যাট মিলিয়ে। তাঁর নেতৃত্বেই ২০১৭ সালে প্রথম বারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে উঠেছিলো বেঙ্গল টাইগাররা। সুতরাং তাঁকে একজন সফলতম অধিনায়ক হিসেবে বিবেচনা করা য