সেঞ্চুরিয়ান বাপ-বেটা

কোন ক্রিকেটারের জন্য টেস্ট ক্রিকেট খেলাটাই গর্বের, আনন্দের। সেই ক্রিকেটার যদি দেখেন তাঁর ছেলেও দেশের হয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলছে সে আনন্দ বোধহয় মাত্র ছাড়া। যেই আনন্দ, যেই অনুভূতিকে কোন সংজ্ঞায় ফেলা যায় না। ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন অনেক পরিবারই আছে যারা ক্রিকেট খেলাটাকে আরো সমৃদ্ধ করে গিয়েছেন।

আজকের এই তালিকায় আমরা এমন কয়েকজন বাপ-বেটাকে দেখব যারা দুজনই টেস্ট ক্রিকেটে দেশের হয়ে সেঞ্চুরি করেছেন।

  • হানিফ মোহম্মদ ও শোয়েব মোহম্মদ (পাকিস্তান)

পাকিস্তান ক্রিকেটের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান হানিফ মোহম্মদ। দেশটির হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে ১২ টি সেঞ্চুরির মালিক তিনি। এরমধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩৩৭ রানের সেই বিখ্যাত ইনিংসটিও আছে। সেটিই এখন অবধি ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে লম্বা সময় ধরে ব্যাট করা ইনিংস। রেকর্ড বই বলে সেই টেস্টে তিনি ব্যাট করেছিলেন মোট ৯৭০ মিনিট। যদিও হানিফ মোহম্মদ মনে করেন সংখ্যাটা ৯৯৯ মিনিট হবে।

সে যাই হোক, তাঁর ছেলে শোয়েব মোহম্মদও আশির দশকে পাকিস্তানের হয়ে ওপেন করেছেন। তাঁর ঝুলিতেও আছে দুইটি ডাবল সেঞ্চুরি ও সাতটি সেঞ্চুরি। ভারত ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি ডাবল সেঞ্চুরি এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে। তাঁরাই বিশ্ব ক্রিকেটের একমাত্র বাপ বেটা যাদের দুজনের ঝুলিতেই ডাবল সেঞ্চুরি আছে।

  • ক্রিস ব্রড ও স্টুয়ার্ট ব্রড (ইংল্যান্ড)

ইংল্যান্ড ক্রিকেট ইতিহাসে তাঁরা একমাত্র বাপ বেটা যাদের দুজনের ঝুলিতেই টেস্ট সেঞ্চুরি আছে। আশির দশকে ইংল্যান্ডের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন ছিলেন ক্রিস ব্রড। সবমিলিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর ঝুলিতে আছে ৬ টি সেঞ্চুরি।

ওদিকে ছেলে স্টুয়ার্ট ব্রড ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা পেসার। ১৪৯ টেস্টে স্টুয়ার্টের ঝুলিতে আছে ৫২৪ উইকেট। বিশ্বের নামী-দামী ব্যাটসম্যানদের হাপিয়ে তোলা এই পেসার টেস্ট ক্রিকেটে একটি সেঞ্চুরিও করেছেন। সেই সেঞ্চুরিও আবার ক্রিকেটের তীর্থক্ষেত্র লর্ডসে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ১৬৯ রানের একটি ইনিংস খেলেছিলেন স্টুয়ার্ট।

  • ইফতেখার আলী খান পতৌদি ও মনসুর আলী খান পতৌদি ( ভারত)

ভারত ও বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসেও বিখ্যাত পতৌদি পরিবার। বাবা ইফতেখার আলী খান পতৌদি বা সিনিয়র নবাব পতৌদি ক্রিকেট খেলেছেন ভারত ও ইংল্যান্ড দুই দেশের হয়েই। তবে একমাত্র টেস্ট সেঞ্চুরিটা এসেছিল ইংল্যান্ডের হয়েই। ৬ টেস্ট খেলা সিনিয়র পতৌদির একমাত্র সেঞ্চুরিটা এসেছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।

ওদিকে ভারতের হয়ে খেলা অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন ছেলে মনসুর আলী খান পতৌদি কিংবা টাইগার পতৌদি। ভারতের হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর ঝুলিতে আছে মোট ৬ টি সেঞ্চুরি। এছাড়া ১৯৬৩ সালে একটি ডাবল সেঞ্চুরিও করেছিলেন টাইগার পতৌদি।

  • জিওফ মার্শ ও শন মার্শ (অস্ট্রেলিয়া)

১৯৮৫ থেকে ১৯৯২ সালে অস্ট্রেলিয়ার ওপেনিং এর দায়িত্ব ছিলেন জিওফ মার্শ। দেশটির হয়ে খেলা ৫০ টেস্টে তাঁর ঝুলিতে আছে ৪ টি সেঞ্চুরিও। ওদিকে তাঁর দুই ছেলে মিশেল ও শন মার্শ দুজনই অস্ট্রেলিয়ায় হয়ে টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেট খেলেছেন।

তবে টেস্ট সেঞ্চুরিটা আগে এসেছিল শন মার্শের ঝুলি থেকেই। নিজের অভিষেক টেস্টেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৪১ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। সবমিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৬ টি সেঞ্চুরি করেছেন শন। ওদিকে আরেক ছেলে মিশেল মার্শও দুইটি টেস্ট সেঞ্চুরি করেছেন।

  • ওয়াল্টার হ্যাডলি ও স্যার রিচার্ড হ্যাডলি (নিউজিল্যান্ড)

ওয়াল্টার হ্যাডলি নিউজিল্যান্ডের হয়ে মোট ১১ টি টেস্ট খেলেছেন। সবমিলিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে ৫৪৩ রান করা ওয়াল্টার হ্যাডলির ঝুলিতে আছে একটি সেঞ্চুরিও। ১৯৫১ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেন তিনি। সেবছরই হ্যাডলি পরিবারে জন্ম নেন স্যার রিচার্ড হ্যাডলি।

স্যার রিচার্ড হ্যাডলি ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন। নিউজিল্যান্ডের হয়ে লম্বা সময় ব্যাট ও বল হাতে পারফর্ম করে গেছেন। ৮৬ টেস্ট খেলা রিচার্ড হ্যাডলির ঝুলিতে আছে ৪৩১ টি উইকেট। এছাড়া বাবার মত ব্যাট হাতেও ছিলেন সমান পারদর্শী। ২ টি সেঞ্চুরি সহ করেছেন মোট ৩১২৪ রান।

  • কেন রাদারফোর্ড ও হামিশ রাদারফোর্ড (নিউজিল্যান্ড)

নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট ইতিহাসের আরেক বিখ্যাত বাপ বেটার নাম কেন ও রামিশ রাদারফোর্ড। দুজনই দেশটির হয়ে টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেট খেলেছেন। বাবা কেন রাদারফোর্ড নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন মোট ৫৬ টি টেস্ট। ২৪৬৫ রানের পাশাপাশি এই ব্যাটসম্যানের ঝুলিতে আছে তিনটি সেঞ্চুরিও।

ওদিকে ছেলে হামিশও নিউজিল্যান্ডের হয়ে ওপেন করেছেন। ১৬ টেস্ট খেলা হামিশের ঝুলিতে আছে ৭৫৫ রান। এখন অবধি একটি সেঞ্চুরিই করেছেন তিনি।

  • নজর মোহাম্মদ ও মুদাসসর নজর (পাকিস্তান)

নজর মোহাম্মদ চিরকার পাকিস্তান ক্রিকেটে স্মরণীয় এক নাম হয়ে থাকবেন। তাঁর ব্যাট থেকেই টেস্টে পাকিস্তানের প্রথম সেঞ্চুরি। ১৯৫২-৫৩ সালে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেট পাকিস্তানের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি করেন তিনি।

তাঁর ছেলে মুদাসসর নজরও পাকিস্তানের হয়ে ৭০ টি টেস্ট খেলেছেন। তাঁর ঝুলিতে আছে মোট ১০ টি সেঞ্চুরি। ভারতের বিপক্ষে মোট ৬ টি সেঞ্চুরি ও ১টি ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন মুদাসসার। তবে তাঁর প্রথম সেঞ্চুরিটি এসেছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।

  • বিজয় মাঞ্জরেকার ও সঞ্জয় মাঞ্জরেকার (ভারত)

ভারতের ক্রিকেট পাড়ায় আরেক বিখ্যাত বাপা-বেটা বিজয় ও সঞ্জয় মাঞ্জরেকার। বিজয় মাঞ্জরেকার ভারতের হয়ে মোট ৫৫ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। ভারতের ক্রিকেটের প্রথমদিককার ব্যাটিং তারকা ছিলেন তিনি। সবমিলিয়ে টেস্টে ৭ টি সেঞ্চুরি এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে।

ওদিকে সঞ্জয় মাঞ্জরেকারকে নিয়েও বড় স্বপ্ন দেখেছি ভারত। হয়তো বাবাকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার মত প্রতিভা নিয়েই জন্মেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত মাত্র ৩৭ টেস্টেই থেমে যায় সঞ্জয় মাঞ্জরেকারের ক্যারিয়ার। তবে সেখানেও ৪ টি সেঞ্চুরি ও ১ টি ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন সঞ্জয়।

  • রড লাথাম ও টম লাথাম ( নিউজিল্যান্ড)

নিউজিল্যান্ডের হয়ে টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেট খেলেছেন রড লাথাম। ১৯৯২ বিশ্বকাপেও দারুণ বোলিং করেছিলেন তিনি। তবে ৪ টেস্ট খেলা রড লাথামের ঝুলিতে আছে একটি মাত্র সেঞ্চুরি।

ওদিকে ছেলে টম লাথাম নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন আপের বড় নাম হয়ে উঠেছিলেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরিও করেছেন তিনি। ৫৯ টেস্টে ৪১.৩৮ গড়ে তাঁর করেছেন ৪০৫৬ রান। টেস্টে মোট ১১ টি সেঞ্চুরির মালিক টম লাথাম। ফলে নিউজিল্যান্ডের তৃতীয় বাপ-বেটা হিসেবে এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন রড ও টম লাথাম।

  • লালা অমরনাথ ও সুরিন্দর-মহিন্দর অমরনাথ (ভারত)

ভারতের ক্রিকেটে আরেক বিখ্যাত পরিবারেন নাম অমরনাথ পরিবার। লালা অমরনাথ ভারতের হয়ে টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান। নিজের অভিষেক টেস্টেই সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন তিনি।

ওদিকে তাঁর দুই ছেলে সুরিন্দর ও মহিন্দর অমরনাথ দুজনই ভারতের হয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলেছেন। বাবার মত সুরিন্দর অমরনাথও নিজের প্রথম টেটেই সেঞ্চুরি করেছিলেন। তবে পরে এই তালিকা আর লম্বা করতে পারেননি তিনি। তবে মহিন্দর অমরনাথ ভারতের হয়ে মোট ১১ টি টেস্ট সেঞ্চুরি করেছিলেন।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link