বাবা-ছেলের জুটিবন্ধন

অনেক সময় দেখা যায় একজন ছেলে বাবার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে একই ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়ার অপেক্ষায় থাকেন যে ক্ষেত্রে তাঁর বাবা সফলতার সাথে নিজের একটি অবস্থান অর্জন করতে পেরেছেন। ক্রিকেটে একইভাবে পিতা-পুত্র জুটি রয়েছে যেখানে পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে পুত্রও ক্রিকেটে নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করেছেন।

ক্রিকেট ইতিহাসে এমন অনেক ছেলে রয়েছেন যারা বাবার পদচিহ্ন অনুসরণ করে ক্রিকেটার হবার স্বপ্ন পূরণ করেছেন। এর মাঝে এমন কিছু পিতা-পুত্র জুটির নজির পাওয়া যায়, যারা একই দলের হয়ে কিংবা প্রতিপক্ষ হয়ে একসাথে কিছু ম্যাচও খেলেছেন। চলুন সেই পিতা-পুত্র জুটিগুলোর সাথে পরিচিত হওয়া যাক।

  • লালা অমরনাথ ও সুরিন্দর অমরনাথ

ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম প্রাচীন খেলোয়াড় লালা অমরনাথকে কে না চেনে! ১৯৩৩ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম আত্মপ্রকাশ করা লালা অমরনাথ ভারতের হয়ে মোট ২৪ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন।

এরপর তাঁর ছেলে সুরিন্দর অমরনাথও তেরঙার হয়ে খেলতে সমর্থ হন। ১৯৭৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর ভারতের হয়ে মোট ১০টি টেস্ট ম্যাচ খেলেন সুরিন্দর অমরনাথ। তবে তাদের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বিশেষ মুহূর্তটি আসে ১৯৬৩ সালে যখন বাবা লালা ও ছেলে সুরিন্দর দু’জনই একই ম্যাচ খেলতে নামেন।

বদান্যতার জন্য মুম্বাইয়ে সে ম্যাচটি খেলা হয়েছিল  যেখানে ৫২ বছর বয়সী লালা মাঠে নেমেছিলেন এবং তাঁর ১৫ বছরের ছেলেও প্রথমবারের মতো খেলেছিলেন।

  • শিবনারায়ণ চন্দরপল ‍ও ত্যাগনারায়ণ চন্দরপল

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বাধিক টেস্ট ম্যাচ খেলা শিবনারায়ণ চন্দরপল ছিলেন তাঁর দলের একজন কিংবদন্তি উইলোবাজ। বহু বছর ধরে তিনি উইন্ডিজ ক্রিকেটে অবদান রেখেছেন এবং দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট ম্যাচ খেলার কীর্তি অর্জন করেন। ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শেষবারের মত মাঠে দেখা যায় তাকে। তারপর ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত খেলতে থাকেন চন্দরপল।

২০১৭ সালে উইন্ডিজ ক্রিকেট পাড়ায় ব্যাপক সাড়া পড়ে যখন একটি ঘরোয়া ম্যাচে শিবনারায়ণ চন্দরপল ও তাঁর পুত্র ত্যাগনারায়ণ চন্দরপলকে একসাথে ব্যাট করতে দেখা যায়। এর আগে ২০১২ সালে গায়ানার একটি স্থানীয় ক্লাবের হয়ে নিজেদের মধ্যে ২৫৬ রানের অবিচ্ছেদ্য জুটি গড়েন এই বাবা-ছেলে যুগল।

  • উইলি কুয়াইফ ও বার্নার্ড কুয়াইফ

উইলি কুয়াইফ ছিলেন ইংল্যান্ডের অন্যতম নান্দনিক ব্যাটসম্যান যিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অন্যতম ক্ষনস্থায়ী ক্রিকেটার হিসেবে সাতটি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। তাঁর পুত্র বার্নার্ড যথেষ্ট সমাদৃত উইকেটরক্ষক হিসেবে খেলেন ৩১৯ টি প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট ম্যাচ। ১৯২৮ সালে জুনিয়র কুয়াইফ ওরচেস্টারশায়ারে যাবার আগে ওয়ারউইকশায়ারের হয়ে ২০ টি ম্যাচে একসাথে খেলতে দেখা যায় উইলি ও বার্নার্ড কুয়াইফকে।

  • বিলি বেস্টউইক-রবার্ট বেস্টউইক

এই ইংলিশ বাবা-ছেলে জুটি ১৯২২ সালে ডার্বিশায়ারের হয়ে দু’টি ম্যাচ খেলেছিলেন। এর মধ্যে একটা ম্যাচ আবার ছিল ওয়ারউইকশায়ারের বিপক্ষে। সেই ম্যাচে বেস্টউইকদের প্রতিপক্ষ ছিল আরেক বিখ্যাত বাবা-ছেলে জুটি উইলি ও বার্নার্ড কুয়াইফ। ম্যাচে ওয়ারউইকশায়ার ১০ উইকেটের বিশাল এক জয় পায়।

  • ডেনিস স্ট্রিক ও হিথ স্ট্রিক

ডেনিস স্ট্রিক ছিলেন জিম্বাবুয়ের টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির পূর্বের সময়কার একজন খেলোয়াড়। ক্রিকেটে না পারলেও লন বোলসে ঠিকই দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম হন তিনি। অন্যদিকে তাঁর পুত্র হিথ প্রায় ২০০০ রান ও ২১৬টি উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার হিসেবে বিবেচিত।

দীর্ঘ ১১ বছর বিরতির পর ১৯৯৬ সালে পুনরায় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ফেরেন ডেনিস স্ট্রিক। তিনি ও তাঁর ছেলে লনরো লোগান কাপে মাতাবেলেল্যান্ডের হয়ে একসাথে খেলেছিলেন যেখানে মাশোনাল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপা বাগিয়ে নেয় তাদের দল।

  • জর্জ গান ও জর্জ ভারনন গান

১৯৩১ সালে ওয়ারউইকশায়ারের বিপক্ষে নটিংহ্যামশায়ারের হয়ে খেলতে নেমে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক শতকের দেখা পান জর্জ ভারনন গান এবং অপরাজিত থাকেন ১০০ রানে। একই ম্যাচে তাঁর ৫৩ বছর বয়সী বাবা খেলেন ১৮৩ রানের একটি অনবদ্য ইনিংস। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে একই ম্যাচে বাবা ও ছেলের শতক হাঁকানোর একমাত্র ঘটনা হিসেবে বিশ্বাস করা হয় এটাকে।

জর্জ গান ছিলেন নটিংহ্যামশায়ারের হয়ে খেলা সম্ভবত সেরা ব্যাটসম্যান। বাবার মত ইংল্যান্ডের হয়ে না খেললেও জর্জ ভারনন গান খুব একটা খারাপ খেলতেন না। ৩৪টির মত ম্যাচে একই দলের হয়ে একসাথে খেলেছেন বাবা-ছেলে।

  • রকিবুল হাসান ও সাজিদুল হাসান

বাংলাদেশ ক্রিকেটে রকিবুল হাসান একটা বিরাট ব্যাপার। সাবেক এই অধিনায়ক স্বাধীনতার আগে ও স্বাধীনতা পরবর্তী ক্রিকেটের বড় নাম। সেদিক থেকে থেকে ছেলে সাজিদুল হাসান কখনোই বাবার নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। তবে, এই দু’জনই বাংলাদেশ ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত এক সাথে খেলা একমাত্র বাবা-ছেলে জুটি।

সেটা ১৯৯০-৯১ মৌসুমের কথা। ঢাকা লিগে ভিক্টোরিয়ার হয়ে এক ম্যাচে এক সাথে নেমেছিলে রকিবুল ও সাজিদ। এই দু’জনই সেদিন ওপেনিংয়ে নেমেছিলেন। বৃষ্টির কারণে সংক্ষিপ্ত হয়ে আসা সেই ম্যাচে ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে জেতে ভিক্টোরিয়া। রকিবুল ও সাজিদুল যথাক্রমে ২২ ও ২৭ রান করে অপরাজিত ছিলেন।

ওই সময় ক্লাব ক্রিকেটে পরিচিত মুখ ছিলেন সাজিদ। এর আগে খেলেছেন বয়সভিত্তিক ক্রিকেট। ১৯৯৩ সালে তিনি জাতীয় দলে ডাক পান, দলের সাথে যান হংকং সফরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link