বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন পার করছে এক ব্যস্ত ও খারাপ সময়।
বিশ্বকাপ বাছাইয়ের অংশ হিসেবে আছে শ্রীলঙ্কা, জিম্বাবুয়ে ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ। বিশ্বকাপে নিজেদের জায়গা পাকপোক্ত রাখতে এই সিরিজ গুলোতে জয় পাওয়া ভীষণ জরুরি বাংলাদেশের জন্য। তাছাড়া এবছর অক্টোবরে বসছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
এপ্রিলেই সব ঠিক থাকলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজও হবার কথা। তবে এই ব্যস্ত সময়কে সামনে রেখে বাংলাদেশ ভুগছে বেশ কিছু সমস্যায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় সারির দলের বিপক্ষে টেস্টে নাজেহাল হওয়া কিংবা নিউজিল্যান্ডের অসহায় আত্মসমপর্ণের পিছে যে সমস্যা গুলো চাপা পড়ে যাচ্ছে বারবার। আবার হয়তো কোনো জয়েও সেই সমস্যা গুলোর কথা আমরা ভুলে যাব। তবে এগুলোর সমাধান না করতে পারলে লম্বা সময়ে হয়তো বেশ বাজে অবস্থায় পড়ে যেতে পারে দেশের ক্রিকেট। তাই এগুলো সমাধান করার জন্য আসলে খুব দ্রুত বড় কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। সবচেয়ে বড় কথা সাথে সাথে সাফল্য না আসলেও এই সিদ্ধান্তের উপর ভরসা রাখার মানসিকতা থাকা প্রয়োজন।
- টপ অর্ডার
প্রায় এক দশক ধরেই আমরা এই সমস্যায় ভুগছি। তবে এই সমস্যায় এখন যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা। এতদিন আমাদের প্রশ্ন ছিল তামিমের সাথে ওপেন করবেন কে। কিন্তু এখন শোনা যাচ্ছে তামিম কোনো একটা ফরম্যাট থেকে অবসর নিতে পারেন খুব দ্রুতই। তাছাড়া তামিম গত ৪-৫ বছর ধরে দলে যেই অ্যাংকর রোল প্লে করেন সেই রোলের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আদো প্রয়োজন আছে কিনা সেটাও প্রশ্ন।
ফলে টি-টোয়েন্টিতে আমাদের ওপেনার কারা হবেন সেটা খুব দ্রুত ঠিক করে অনেক কয়েক সিরিজ তাঁদের উপর আস্থা রাখা প্রয়োজন। টেস্ট ও ওয়ানডে ফরম্যাটে তামিমের সাথে কে ওপেন করবেন সেই প্রশ্ন তো এখনো বহাল রয়েছেই। টেস্টে সাদমান ও সাইফকে অনেকেই লম্বা রেসের ঘোরা মনে করলেও দুজনের কেউই এখন অবধি তাঁর বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারেননি।
তাছাড়া তিন নম্বর পজিশনে সাকিবের ব্যাটিং গড় ৫৮ থাকার পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তাঁকে তিনে খেলানো হয়নি। নিউজিল্যান্ডের ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ এই পজিশন থেকে কোনো রান না আসায় তাঁর প্রভাব পড়েছে ব্যাটিং পারফর্মেন্সে। তাই এই পজিশনে খুব বেশি পরীক্ষা না করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে সাকিব ও টেস্টে মুমিনুলই অটো চয়েজ হওয়া উচিৎ।
- বোলিং বিভ্রাট
বাংলাদেশ বরাবরই স্পিন নির্ভর দল। তবে মজার বিষয় হচ্ছে এই দলটাতে সাকিব বাদে কোনো ধারাবাহিক স্পিনারই নেই। ওয়ানডে ফরম্যাটে মিরাজ ইকোনমিক্যাল হলে তিনি উইকেট টেকার নন। এছাড়া দেশের বাইরে ভালো করার জন্য মিরাজকে এখনো অনেক লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে।
দুঃখজনক ভাবে বাংলাদেশ এত বছরেও কোনো আন্তর্জাতিক মানের লেগ স্পিনার বা রিস্ট স্পিনার তৈরি করতে পারেনি। পেস বোলিং অ্যাট্যাকেও মুস্তাফিজ বাদে বড় কোনো নাম নেই। তবে নিউজিল্যান্ডে তাসকিনের পারফর্মেন্স আশাজাগানীয়া। এছাড়া বিশ্বকাপ জয়ী যুব দলের শরিফুলও অভিষিক্ত হয়েছেন নিউজিল্যান্ডে। তিনি বেশ বড় স্বপ্নই দেখাচ্ছেন। তবে টেস্ট ক্রিকেটে আবু জায়েদ রাহি বাদে কোনো নিয়মিত পেসার নেই বাংলাদেশের।
- সিনিয়র-জুনিয়র দোলাচল
লম্বা একটা সময় ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেট ছিল পাঁচ জন সিনেয়র ক্রিকেটের ভরসায়। তাঁদের উপর অতিরিক্ত ভরসায় দলের মধ্যে কখন যেনো দুটো ভাগ হয়ে গিয়েছে।
বাংলাদেশ আর একটা দল হয়ে খেলতে পারছেনা। এখন সিনিয়র ক্রিকেটাররাও তাঁদের ক্যারিয়ারের প্রায় শেষ প্রান্তে। মাশরাফি ইতিমধ্যে বলা যায় অঘোষিত অবসরে আছেন। সাকিবকে বেশ লম্বা সময় ধরেই টেস্টে পাচ্ছেনা বাংলাদেশ। এদিকে তামিমও বলেছেন তিনি দ্রুতই একটি ফরম্যাট থেকে সড়ে দাঁড়াতে চান। মুশফিক, রিয়াদ এই বিষয়ে এখনো কিছু না বললেও তাঁরাও খুব একটা সুখকর অবস্থায় নেই।
রিয়াদ অনেকদিন ধরেই টেস্ট পরিকল্পনার বাইরে আছেন। মুশফিকের উইকেট কিপিং নিয়ে সমালোচনাও এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে মাত্রা ছাড়িয়েছে। এছাড়া সিনিয়র ক্রিকেটাররা মিডিয়া যে ধরনের কথা বলছেন তাতে স্পষ্ট যে তাঁদের সাথে বিসিবির সাথে যোগাযোগে ঘাটতি কতটা। দেশের ক্রিকেটের স্বার্থেই যেভাবেই হোক সেরা ক্রিকেটারদের সাথে বোর্ডের দূরত্ব দ্রুত কমিয়ে আনা প্রয়োজন।
- দ্য ক্যাপ্টেন
মাশরাফির বিদায়ের পর থেকেই এই সমস্যায় ভুগছে বাংলাদেশ দল। মাঠে কিংবা মাঠের বাইরে দলকে নেতৃত্ব দিবেন এমন একজনকে পাওয়া যাচ্ছেনা। তিন ফরম্যাটে তিন অধিনায়ককে দায়িত্ব দিলেও এই ফর্মুলা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কতটা কার্যকর সেটা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।
অন্য দেশগুলোর ক্ষেত্রে তিন ফরম্যাটে মোটামুটি আলাদা তিনটি দল থাকে। হয়তো দু-একজন ক্রিকেটার একাধিক ফরম্যাটে খেলেন। তবে বাংলাদেশের চিত্র ঠিক উল্টো। এখানে এক দুইজন বাদে সবাই সব ফরম্যাটে খেলেন। ফলে ফরম্যাট অনু্যায়ী বারবার অধিনায়ক পাল্টালে তাদেরও মানিয়ে নিতে অসুবিধে হয়। তাই সাকিব যেহেতু ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি নিয়মিত খেলছেন তাই এই দুই ফরম্যাটে তাকেই অধিনায়কত্ব দেয়া উচিৎ। কেননা দলের বেস্ট ক্রিকেট ব্রেইন ও বেস্ট পারফর্মারই সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া যৌক্তিক। তাছাড়া টেস্ট ক্যাপ্টেন মুমিনুলকেও আরো বেশি ভোকাল হওয়া প্রয়োজন। তাঁর সামনে একটা শক্ত দল গড়ে তোমার পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের কাছে টেস্ট ক্রিকেটকে আকর্ষনীয় করে তোলার চ্যালেঞ্জও রয়েছে।
- হার্ড হিটার
অনেকবছর ধরেই বাংলাদেশ ৬-৭ নম্বর পজিশনে একজন হার্ড হিটার খুজছে। সাব্বিরকে এই পজিশনের স্পেশালিস্ট ভাবা হলেও তিনি এখন প্রায় পরিকল্পনার বাইরে। এই মুহুর্তে দলে সাইফউদ্দিন বা মাহেদী এই পজিশনে খেলতে পারেন। তবে দলযাকেই খেলাক তাঁর উপর লম্বা সময় আস্থা রাখা প্রয়োজন।
কেননা এই পজিশনে সবসময় পারফর্ম করা যায় না। এখানে ভুল করার সুযোগ দিতে হবে। তাহলেই হয়তো একজন ফিনিশার পাওয়া যাবে। এছাড়া যুব বিশ্বকাপ জয়ী দলের শামীম পাটোয়ারিও এই পজিশনের জন্য বেশ ভালো অপশন হতে পারেন। মাসেল পাওয়ার ব্যবহার করে বড় শট খেলার অভ্যাস আছে তাঁর।
-ইএসপিএন ক্রিকইনফোর ছায়া অবলম্বনে