ব্যর্থতার পিএসএল ভার্শন

পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) ২০২৫ শেষ হয়েছে জমজমাট এক ফাইনাল ম্যাচ দিয়ে। ব্যাটে-বলে অনেক নতুন তারকার উত্থান দেখা গেলেও কিছু তারকার জন্য এবারের আসর ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। পিএসএলে ব্যর্থ সে সমস্ত খেলোয়াড় দিয়েই সাজানো আজকের 'ফ্লপ একাদশ'— যারা নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি।

পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) ২০২৫ শেষ হয়েছে জমজমাট এক ফাইনাল ম্যাচ দিয়ে। ব্যাটে-বলে অনেক নতুন তারকার উত্থান দেখা গেলেও কিছু তারকার জন্য এবারের আসর ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। পিএসএলে ব্যর্থ সে সমস্ত খেলোয়াড় দিয়েই সাজানো আজকের ‘ফ্লপ একাদশ’ — যারা নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি।

  • সায়িম আইয়ুব (পেশোয়ার জালমি)

চলতি পিএসএল-এ সবচেয়ে হতাশাজনক পারফরম্যান্স ছিল তরুণ সাইম আইয়ুবের। স্ট্রোকপ্লেয়ার হিসেবে পরিচিত হলেও এই মৌসুমে ছিলেন যেন নিজের ছায়া হয়ে। ১০ ম্যাচ খেলে করেছেন মাত্র ১৭৪ রান, ব্যাটিং গড় ১৭.৪০। সর্বোচ্চ রান এসেছে মাত্র ৫০। ওপেনিংয়ের চরম ব্যর্থতা যেমন তার দলের উপর প্রভাব পড়েছে, সেই সাথে তারর নামটা উঠে এসেছে ‘ফ্লপ একাদশে’।

  •  শাই হোপ (মুলতান সুলতান)

ওয়েস্ট ইন্ডিজের অভিজ্ঞ ব্যাটার শাই হোপকে মুলতান দলে ভিড়িয়েছিল ইনিংস গড়ার দায়িত্বে। তবে সেই কাজটা না পারলেও ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হয়ে বারবার দূর্বল করেছেন দলের ভীত। পাঁচ ম্যাচে করেছেন মাত্র ৬১ রান, গড় ১৫.২৫। স্ট্রাইক রেটটাও ১০১.৫৩, যা টি-টোয়েন্টিতে রীতিমতো অপরাধ।

  • শান মাসুদ (করাচি কিংস)

টপ অর্ডারে অভিজ্ঞ এক নাম হলেও শান মাসুদ এই মৌসুমে ছিলেন পুরোপুরি নিস্তেজ। তিন ম্যাচে করেছেন মাত্র ২৭ রান। ব্যর্থতার জেরে তাই তো নিজ দলের একাদশ থেকেও বাদ পড়তে হয়েছে তাকে। পাকিস্তানের জার্সিতে তার ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে, এই ধারা চলমান থাকলে।

  • আজম খান (ইসলামাবাদ ইউনাইটেড)

যার ব্যাটে হওয়ার কথা ছিল ছক্কা-চারের বৃষ্টি, সেই আজম খান যেন খোলসে বন্দি। ফিটনেস প্রশ্নে বারবার আলোচনায় থাকা এই হার্ডহিটার পিএসএলে এবারের আসরে করেছেন সাত ম্যাচ খেলে মাত্র ৬৬ রান।
তাই তো ‘ফ্লপ একাদশের’ অন্যতম সেরা তাঁকে বলাই যায়। এই একাদশের উইকেটরক্ষকও আজম খান।

  • শোয়েব মালিক (কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্স)

বয়সটা ছাড়িয়েছে ৪৩, তবুও অভিজ্ঞ শোয়েব মালিক এখনো ক্রিকেট ছাড়েননি। তবে বয়সের ভারে যে ব্যাটের ধার কমেছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এবারের আসরে সুযোগ পেয়েছেন মাত্র দুই ম্যাচে, ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন এক ইনিংসে, সেখানে রান করেছেন মাত্র ১৪ রান। বল হাতেও ছিলেন নিষ্প্রভ। তাই তো সমালোচনা হয়েছে তাঁকে নিয়ে, প্রশ্ন উঠেছিল—এভাবে আর কতদিন খেলবেন তিনি?

  • হায়দার আলি (ইসলামাবাদ ইউনাইটেড)

প্রতিভা আছে, কিন্তু ধারাবাহিকতা নেই—এই কথাটা যেন হায়দার আলির নামের সঙ্গেই মানিয়ে যায়। এবারের আসরেও সেই চিত্রনাট্য বদলায়নি। আট ম্যাচে করেছেন মাত্র ৭৭ রান, যা তাঁকে বসিয়েছে ফ্লপ একাদশের তালিকায়।

  • সাকিব আল হাসান (লাহোর কালান্দার্স)

বাংলাদেশের পোস্টার বয় সাকিব আল হাসানের এবারের পিএসএল যাত্রা ভুলে যাওয়ার মতো। দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে ছিলেন, অবশেষে পিএসএল দিয়েই প্রত্যাবর্তন হলো। তবে নামের প্রতি সুবিচার করতে পারলেন কই? ব্যাটে-বলে নির্লিপ্ত ছিলেন প্রায় প্রতিটি ম্যাচে। তিন ম্যাচে দুই ইনিংস ব্যাট করেও রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি। বল হাতে তিন ম্যাচেই হাত ঘুরিয়েছেন, পেয়েছেন একটি মাত্র উইকেট। তাই তো একসময়ের বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার ফ্লপ একাদশে।

  • আমির জামাল (করাচি কিংস)

এবারের আসরে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন আমির জামাল। বল হাতে সাত ম্যাচে নিয়েছেন মাত্র পাঁচ উইকেট, ইকোনমি রেটটাও ১০.৯৪। এবারের কাটানো মৌসুমটা তিনি ভুলে যেতে চাইবেন। অথচ করাচি কিংসের হয়ে তার হওয়ার কথা ছিল ভরসার প্রতীক।

  • নাসিম শাহ (ইসলামাবাদ ইউনাইটেড)

এক্সপ্রেস বোলার নাসিম শাহের কাছ থেকে সবসময় প্রত্যাশা থাকে আকাশচুম্বী, কিন্তু এবারের বাস্তবতা বলেছে ভিন্ন কথা। গতি ছিল, কিন্তু লাইন-লেন্থ ছিল না। ১০ ম্যাচ খেলে উইকেট পেয়েছেন মাত্র ৯টি। ইকোনমি রেটটাও ছিল প্রায় দশের কাছাকাছি, যা নাসিমের নামের পাশে একেবারেই বেমানান।

  • ক্রিস জর্ডান (মুলতান সুলতান)

টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট হিসেবে খ্যাত হলেও ক্রিস জর্ডান যেন এবার বল হাতে হয়ে গেলেন ‘রান দেওয়ার মেশিন’। চার ম্যাচে সুযোগ পেয়েছেন, উইকেট নিয়েছেন তিনটি। তবে সবচেয়ে সমালোচিত ছিল তার ১১.৯২ ইকোনমি রেট।

  • সুফিয়ান মুকিম (পেশোয়ার জালমি)

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রেখেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছিলেন নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে।
পরিসংখ্যানে ফিরে তাকালে দেখা যায়, এই পর্যন্ত ১০টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে নিয়েছেন ১৮ উইকেট। ইকোনমি রেট ৬.০৬, যা যেকোনো বোলারের ক্ষেত্রেই প্রশংসনীয়। সেরা বোলিং ফিগার তিন রান দিয়ে পাঁচ উইকেট।

এমন একজন বোলার পিএসএলের মঞ্চে দাপট দেখাবেন—এমনটাই প্রত্যাশা ছিল সবার। তবে তিন ম্যাচে এক উইকেট, সাথে নয়ের বেশি ইকোনমিতে প্রত্যাশার আগুনে জল ঢেলেছেন তিনি।

পিএসএল ২০২৫ অনেক নতুন মুখের উত্থানের মঞ্চ হলেও এই একাদশ সেই তারকাদের, যারা ব্যর্থতার গল্পে আলোচনায় থেকেছেন। তাই তো এবারের মৌসুমে এই ১১ জন প্রতিনিধিত্ব করছেন ‘ফ্লপ একাদশের’।

লেখক পরিচিতি

প্রত্যয় হক কাব্য

স্বপ্ন লেখার কি-বোর্ড

Share via
Copy link