মদ ও নারী আসক্তি, ইরানি ফুটবলার আটক!

পৃথিবীতে ফুটবল শুধুই একটি খেলা নয়; এতে মিশে আছে কত শত আবেগ। ফুটবলাররাও তাই খেলোয়াড় পরিচয় চাপিয়ে হয়ে উঠেছেন কারো আদর্শ, কারো অনুপ্রেরণাদাতা। তবে আইনের উর্ধ্বে নন কেউই, আইন ভঙ্গ করলে শাস্তি পেতে হয় তাঁদেরও। এই যেমন অ্যালকোহল এবং নারী নিয়ে পার্টি করার জন্য ইরানে আটক করা হয়েছে বেশ কয়েকজন ফুটবলারকে।

সম্প্রতি বর্তমান এবং সাবেক ইরানি ফুটবলাররা একত্রে পার্টির আয়োজন করেছিলেন। সেখানে নারীদের উপস্থিতির পাশাপাশি ছিল অ্যালকোহলের ব্যবহারও। কিন্তু ইরানের ইসলামি আইন অনুযায়ী মদ পান নিষিদ্ধ এবং নারীদের সাথে অবৈধ মেলামেশা অপরাধ। তাই তো সেই পার্টিতে অংশ নেয়া খেলোয়াড়দের আটক করেছে দেশটির প্রশাসন।

তবে আটককৃত ফুটবলারদের নাম পরিচয় এখনো প্রকাশ করা হয়নি। যদিও এটা জানা গিয়েছে যে তাঁরা সবাই ইরানের প্রথম স্তরের লিগ ‘দ্য প্রো লিগ’ এর খেলোয়াড়। আটকের ঘটনার পর পরই এদের সবাইকে স্ব স্ব ক্লাব থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

দেশটির সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, তেহরানের কয়েকটি বড় ক্লাবের সাবেক এবং বর্তমান ফুটবলারদের দামাভান্দ শহরে অবৈধ পার্টি করার অভিযোগে আটক করা হয়েছে।

মূলত ইরানের কঠোর অনুশাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর থেকেই ক্রীড়াবিদদের উপর বিশেষ নজর রাখতে শুরু করেছে ইরান সরকার। গত বছর মাশা আমিনি নামের ২২ বছর বয়সী এক তরুণীকে ইসলামি পোশাক না পরার অজুহাতে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল এবং সেখানেই তাঁর মৃত্যু ঘটে। আমিনির মৃত্যুর জের ধরে দেশটিতে সৃষ্টি হয়েছিল ব্যাপক প্রতিবাদের ঢেউ।

আর এই প্রতিবাদে অন্য অনেকের মত যোগ দিয়েছিলেন ফুটবলাররাও। ইরানের জাতীয় ফুটবল দল ফুটবল মঞ্চেই জানিয়েছিল নিজেদের প্রতিবাদ। ২০২২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সেনেগালের বিপক্ষে একটি প্রীতি ম্যাচ খেলার সময় ইরানি ফুটবলাররা দলের ব্যাজ কালো জ্যাকেটে ঢেকে জাতীয় সংগীত গাইতে এসেছিল।

আবার কাতার বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে জাতীয় সংগীতেই অংশ নেননি তাঁরা। ইরানের ফুটবল ফেডারেশনের চাপ সত্ত্বেও খেলোয়াড়রা নিজেদের মত করে মাহশা আমিনির সাথে ঘটা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলেন।

অবশ্য এসবের জন্য মূল্যও চুকাতে হয়েছে দেশটির জনগনকে। এখন পর্যন্ত অনেক বিক্ষোভকারীকে প্রতিবাদে যোগ দেওয়ার জন্য শাস্তি দেয়া হয়েছে। এমনকি বিক্ষোভে যোগদানকারীদের মধ্যে কয়েক জনকে মৃত্যুদণ্ডের মত ভয়ানক শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে আছেন একজন ফুটবল তারকাও।

মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি পাওয়া এই ফুটবলারের নাম আমির নাসর আজাদানি। ইরানিয়ান প্রো লিগের প্যারিসিয়ান গাল্ফ দলের হয়ে খেলতেন তিনি। ক্যারিয়ারের অধিকাংশ সময় সেন্টারব্যাক হিসেবে খেলেছেন, প্রতিরোধ করেছেন প্রতিপক্ষের ফরোয়ার্ডদের। মাঠের বাইরেও অন্যায়কে প্রতিরোধ করতে বিক্ষোভকারীদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছিলেন। যদিও এখন কারাগারে বন্দি তিনি, মাথার উপর ঝুলছে মৃত্যুর খড়গ।

প্রতিবাদে অংশ গ্রহণের অপরাধে এর আগে ২৩শে ডিসেম্বর কুস্তিগির মাজিদ রেজা রাহনাভার্দকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল। এমন কি অন্যদের সতর্ক করার জন্য তাঁর যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু জনসম্মুখে প্রদর্শন করা হয়েছিল।

সম্প্রতি আটক হওয়া ফুটবলারদের সাথে অবশ্য সরাসরি কোন মিল নেই আজাদানি, মাজিদদের। দুই পক্ষের অপরাধ সম্পূর্ণ ভিন্ন। তবে এটা নিশ্চিত যে, সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে না নিয়ে বিভিন্ন উপায়ে প্রতিবাদ করায় ফুটবলারদের উপর আক্রোশ সৃষ্টি হয়েছে প্রশাসনের। আর সেটিরই প্রতিফলন হয়েছে সাম্প্রতিক এসব ঘটনায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link