ইউরো হোক, বিশ্বকাপ হোক কিংবা এমনি ফ্রেণ্ডলি ম্যাচ হোক – বিশ্বের সবচেয়ে তাবড় দুটো দলের একে অপরের বিরুদ্ধে ম্যাচ পড়লে আবহের মূহূর্তে বদল ঘটে যায়। এই যেমন চলতি ইউরো কাপে আজ নামবে ফ্রান্স এবং জার্মানি। একটা দল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, অপর টিমের অবস্থা ততটা সুখকর নয়, যদিও তাঁরাও সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।
আগের বিশ্বকাপে লজ্জার হার এবং একের পর এক পজিশনাল ফুটবলারের অবসর, জার্মানি দল এখনও সেভাবে নিজেদের গুছিয়ে উঠতে পারেনি। উপরন্তু কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে হিসেবে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের ম্যাচে নর্থ ম্যাসিডোনিয়ার কাছে ন্যক্কারজনক হার। সব মিলিয়ে জার্মানির অন্দরমহল পশ্চিমবঙ্গের আকাশের মতই। থমথমে।
এদিকে ফ্রান্সের অন্দরমহলও যে একেবারে ফুরফুরে, তা বলা যাচ্ছে না। শোনা যাচ্ছে টিমের মধ্যেই অসন্তোষের ঘটনা। ক্লাবের প্রতিদ্বন্দ্বিতা যে দেশের জন্য দিনের পর দিন খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করছে, সেটা আরও একবার প্রমাণ করলেন অলিভার জিরু। প্রেস কনফারেন্সে দুম করে বলে বসলেন – ম্যাচে আমাকে ঠিকঠাক পাস বাড়ানো হয়নি।
কিলিয়ান এমবাপ্পে তাতে ক্ষেপে উঠলেন। আসলে এই দুই দেশের তীব্র রেষারেষির উত্থান আজ নতুন তো নয়। ১৯৮২-র বিশ্বকাপে সেই ‘দ্য নাইট অফ সেভিল’ থেকে। ফ্রান্সে আজও সে ম্যাচকে হৃদয়ভঙ্গের সেমিফাইনাল হিসেবে দেখে। ফ্রান্স স্ট্রাইকার প্যাট্রিক বাতিস্তঁর বুকে হাঁটু তুলে দেন জার্মান গোলরক্ষক হ্যারল্ড শুমাখ্যার।
গোটা ফ্রান্স জুড়ে তীব্র বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ে নিমেষে। মাঠেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন বাতিস্তঁ। মিশেল প্লাতিনি তখন ফ্রান্স ক্যাপ্টেন, বাতিস্তঁকে ঐভাবে মাঠে পড়ে থাকতে দেখে একঝলক ভাবেন তিনি বুঝি মারাই গেছেন। অথচ শুমাখ্যারের তাতে কোনও ভ্রূক্ষেপ ছিল না। পরে ম্যাচ শুরু হওয়ায় ফ্রান্স ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।
টাইব্রেকারে সেমিফাইনাল হারে, যদিও জার্মানরা ইতালির কাছে ফাইনালে হারে। সমগ্র ফ্রান্স এই ‘দ্য নাইট অফ সেভিল’ জীবনে ভোলেনি। শোনা যায়, পরে একটা সারভে করা হয়েছিল, ফ্রান্সের সবচেয়ে ঘৃণ্য ব্যক্তি কে, তা নিয়ে। ফলাফলে স্বয়ং অ্যাডলফ্ হিটলারকে ছাপিয়ে যে নামটা এক নম্বরে উঠে এসেছিল তা হল – হ্যারল্ড শুমাখ্যার!
ফ্রান্সের জনগণ তাই বারবার বলে – টু ওয়ার্ল্ড ওয়্যারস অ্যান্ড দেন দ্য নাইনটিন এইটটি টু! পরবর্তী পঞ্চাশ বছরেও যে চিত্র একটুও পাল্টায়নি। ফ্রান্স-জার্মানি ম্যাচ মানেই চাপা আগুন ছিটকে বেরিয়ে আসা। ২০১৬ ইউরো কাপ সেমিফাইনালে ফ্রান্স দু’গোলে হারায় জার্মানিকে। ফ্রান্সের মাঠেই। উন্মত্ত ফরাসি জনতা সেদিন দু’হাত তুলে নৃত্যরত ছিল মাঠজুড়ে। পরে পর্তুগালের কাছে ফাইনালে হারের দুঃখ নাকি ভুলিয়ে দিতে পেরেছিল জার্মানির সাথে ঐ জয়ের আনন্দ!
জার্মান কোচ জোয়াকিম লো’র জার্মানির কোচ হিসেবে শেষ টুর্নামেন্ট এই ইউরো কাপ। এরপর দায়িত্ব নেবেন ফ্লিক। সমস্যা হল, জার্মানরাই আর কোচ হিসেবে লো’কে চায় না। জার্মান কোচ হিসেবে শুধু ইউরো কাপটাই অধরা রয়ে গেছে লোয়ের। তবে এবার জার্মানির অবস্থা দেখে খুব একটা আশাপ্রদ নয় যে তারা ইউরো কাপ ঘরে তুলতে পারবে।
অন্যদিকে ফ্রান্স ফুটছে টগবগ করে। তবে খেলাটা ফুটবল, ৯০ মিনিটে হিসেবনিকেশের টেবিল উল্টে দেওয়ার ক্ষমতা যে খেলার আছে। আর এই ধরণের ম্যাচ কখনওই প্রেডিকশন নির্ভর নয়। কাজেই, দেখা যাক আজ রাতে কী হয়। তবে একটা দুর্দান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখার অপেক্ষায়।