মাহমুদুল হাসান রানা – এই নাম নিয়ে বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার আন্তর্জাতিক ময়দানে নামেননি। তবে, সত্যিই তিনি একজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন সেই ২০০০ সালের অভিষেক টেস্ট খেলেন। যদিও, তখন নাম ছিল বিকাশ রঞ্জন দাস – এখন হয়তো পাঠকরা নামটা চিনতে পারছেন।
সেদিনের বিকাশ আর আজকের মাহমুদুল হাসানের মধ্যে এখন পার্থক্য অনেক। ধর্ম পাল্টে ফেলার প্রসঙ্গটা তিনি না চাইলেও আসবে। ক্রিকেট জীবনটাও তুলে রেখে তিনি এখন পুরোদস্তর ব্যাংকার। কর্মব্যস্ত জীবনের ফাঁকেই মুখোমুখি হয়েছিলেন খেলা ৭১-এর।
জোরে বোলিং করতে পারেন বলে সুনাম ছিল, অভিষেক টেস্টের আগে হঠাৎ করেই সুযোগ পান। গতি দিয়েই বোল্ড করেন সদাগোপন রমেশকে। বলটা এতই গতির ছিল যে, বেল ভেঙে যায়। স্মৃতি হিসেবে সেটা এখনও সযতনে রেখে দিয়েছেন বিকাশ।
তিনি বলেন, ‘ওই দিন আম্পায়ার ছিলেন স্টিভ বাকনার। উনি আমাকে ভাঙা বেলটা দেন। বলেন, এটা এক সময় তোমার স্মৃতি হয়ে থাকবে।’ কে জানতো, সেটাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একমাত্র স্মৃতি হয়ে থাকবে বিকাশের!
অভিষেক টেস্টের পরই হারিয়ে যান ইনজুরির ছোবলে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) তখন আজকের মত অবস্থা সম্পন্ন ছিল না। ইনজুরির ধকল সামলে আর তাই ফেরা হয়নি বিকাশের। ২০০৪ সালের পর আর ঘরোয়া ক্রিকেটও খেলেননি। বরং পড়াশোনায় মনোযোগী হয়ে নিজেকে কর্পোরেট জীবনের জন্য গড়ে তোলেন।
তিনি বলেন, ‘টেস্ট যখন খেলি, তখন আমার বয়স ১৮। ওই ম্যাচ খেলেই আমরা শ্রীলঙ্কায় যাই অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ খেলতে। ওই আসরে পেস বোলার হিসেবে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট আমার। আমাদের অধিনায়ক ছিল হান্নান সরকার।’
ওই সময়ই ইনজুরি দানা বাঁধে। রানা বলেন, ‘আমাদের সময় ওরকম গাইডলাইন ছিল না। বয়স কম ছিল, শক্তি ছিল, ছোট-খাটো ইনজুরি পাত্তা দিতাম না। আমার পিঠে ইনজুরি ছিল। তেমন কোনো গার্ডিয়ান ছিল না ক্রিকেটে। একজন ক্রিকেটার যখন ইনজুরিতে পড়েন, তখন একটা নির্দিষ্ট সময়জুড়ে তাঁর একটা পরিচর্যা দরকার, গাইডলাইন দরকার। সেটা আমি পাইনি।
আক্ষেপ হয়তো একটা সময় অবধি ছিল রানার। তবে, এখন সেসব ভুলে গেছেন প্রায়। বলেন, ‘না, আক্ষেপ ঠিক বলব না। বলব, পরিকল্পনার অভাব ছিল। একজন ক্রিকেটারের জীবনে ইনজুরি থাকবেই। ফলে, তাঁকে সময় দিতে হবে। তাঁর সঠিক পূনর্বাসন লাগবেই। ওই সাপোর্ট আমি পাইনি। ওই সময় যিনি প্রধান নির্বাচক, তাঁর সাথেও আমার কথা হয়েছিল ফোনে, কিন্তু সেভাবে কোনো ইতিবাচক সাড়া আসলে পাইনি।’
এরপরই আসলে পড়াশোনাকেই নিজের ধ্যানজ্ঞান মেনে নেন। তিনি বলেন, ‘ওই সময় রাগ বলেন, আর ক্ষোভ বলেন – সবই ছিল। আর আরেকটা ব্যাপারও মাথায় ছিল যে, আমি যেহেতু বাংলাদেশের স্বনামধন্য একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ি, তাহলে কেন পড়াশোনায় আরও বেশি সময় দিব না। আর একটা সময় পর তো ক্রিকেটের ভ্যালু না থাকেলেও পড়াশানাটা কাজে দেবে। তাই, এখন ক্রিকেটে না থাকলেও একটা প্রোফেশনাল লাইফে আছি।’
অবশ্য ক্রিকেট ছাড়লেও ক্রিকেট যেন ছেড়ে যায়নি মাহমুদুল হাসানকে। এখনও কর্পোরেট ক্রিকেট খেলেন তিনি। বললেন, ‘কর্পোরেট ক্রিকেটটা আমরা যারা খেলি, সেটা ক্রিকেটের জন্য ভালবাসা থেকেই খেলি। আমাদের ব্যাংকারদেরও আলাদা লিগ হয়। এখানে আমাদের ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনেক সাপোর্ট করেন। তাঁরাও ক্রিকেটটাকে ভালবাসেন।
সুযোগ পেলে আড্ডা দেন ক্রিকেটার বন্ধুদের সাথেও। তবে, নিয়মিত জীবনে একদম কেতাদুরস্ত মাহমুদুলকে দেখলে চট করে চেনা মুশকিল যে – এই সেই বিকাশ রঞ্জন দাস।
ধূমকেতুর মত এসেছিলেন। খুবই ক্ষণস্থায়ী ক্যারিয়ার শেষে ঝরেও গেছেন দ্রুত। জীবনের বাস্তবতা মেনে নিয়েছেন তিনি। এখন ব্যাংকের হিসাব-নিকাশে ব্যস্ত সময় কাটান তিনি। আর ছুটির অবসরে খুঁজে ফেরেন নিজের হারানো দিনের ক্রিকেট স্মৃতিকে!