বিশ্বকাপ কাঁপানো মার্করাম বাদ পড়েছিলেন যুব দল থেকে

বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই মাত্র ৪৯ বলে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন, পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো অর্ধশতক, সবশেষ বাংলাদেশের বিপক্ষে ৬০ রানের ইনিংস – সবমিলিয়ে স্বপ্নীল একটা টুর্নামেন্ট কাটাচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান এইডেন মার্করাম। টেম্বা বাভুমার অনুপস্থিতিতে দলকে নেতৃত্বও দিচ্ছেন তিনি।

অথচ, মার্করামের এই বিশ্বকাপে খেলতে আসারই কথা নয়। অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে বাদ পড়ার পর তীব্র হতাশা জেঁকে বসেছিল তাঁর মনে। তখনই ব্যাট-বলের প্রতি অদম্য আকর্ষণ পাশে সরিয়ে রেখে খেলা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু পিয়েরে ডি ব্রুইন নামের এক শুভাকাঙ্ক্ষী পাশে দাঁড়ান, নতুন পথ দেখান এই প্রোটিয়া তারকাকে। ডি ব্রুইন সেসময় স্থানীয় একটি ক্রিকেট একাডেমির কোচ, সেখানে চলে আসতে বলেন তরুণ মার্করামকে। মার্করাম সেটাই করেন, আর তাতেই দক্ষিণ আফ্রিকা পেয়ে যায় বর্তমান সময়ের অন্যতম এক বিধ্বংসী ব্যাটারকে।

অবশ্য এই ডানহাতির ঘুরে দাঁড়ানো শুরু হয়েছিল যুব দল দিয়েই। তিনিই এখন পর্যন্ত প্রথম ও একমাত্র প্রোটিয়া অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরেছিলেন – আর সেটা ছিল ২০১৪ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে।

২০১৮ সালের দিকে ফাফ ডু প্লেসিস ইনজুরিতে পড়েন, বাধ্য হয়ে ঘরের মাঠে ভারত সিরিজে অধিনায়ক হিসেবে নির্বাচিত করা হয় মার্করামকে। আর সেটাই তাঁর ক্যারিয়াকে খানিকটা পিছিয়ে দিয়েছে বলে বিশ্বাস ডি ব্রুইনের। কেননা তরুণ বয়সে নেতৃত্বের দায়িত্ব পেয়ে নিজেকে প্রমাণের জন্য বেশিই ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলেব এই ক্রিকেটার। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সেই সিরিজে ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি; ফলে তাঁর আত্মবিশ্বাস তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল।

তবে সব প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে এই ব্যাটার ফিরেছেন নিজের সেরা রূপেই। এবারের বিশ্বকাপে দলকে এগিয়ে নিচ্ছেন ইতিহাস গড়ার দিকে; ডি কক, ক্ল্যাসেনদের মত ইন ফর্ম তারকাদের সাথে থেকেও আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন তিনি।

ভারত বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ১১ থেকে ৪০ ওভার এই সময়টাতে প্রোটিয়াদের রান রেট ৭.২৮! আর কোন দলই মাঝের ওভারগুলোতে এত মারমুখী হতে পারেনি; প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার এই ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকার পিছনে বড় অবদান রয়েছে মার্করামের।

ক্রিকেট নিয়ে বারবার হতাশ হয়েছে দেশটির সমর্থকেরা। এবিডি ভিলিয়ার্স, জ্যাক ক্যালিস, গ্রায়েম স্মিথের মত কিংবদন্তিরা বিশ্ব মঞ্চে সাফল্য এনে দিতে পারেননি; তাই তো বর্তমান দলের প্রতিও কোন প্রত্যাশা ছিল না।

কিন্তু ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স আবারও স্বপ্নকে জাগিয়ে তুলেছে, প্রত্যাশা বেড়েছে কয়েক গুণ। তবে সেই প্রত্যাশার চাপ অন্তত এইডেন মার্করামকে কাবু করতে পারবে না এমনটাই বিশ্বাস ডি ব্রুইনের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link