১৯৫৮ সালে জিমি মার্ফির তত্ত্বাবধানে দলটা শেষবারের মতো ফুটবল বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিল। সদ্য তখন ঘটে গেছে মিউনিখ এয়ারক্র্যাশ, বিধ্বস্ত ম্যানচেস্টার ইউনাইটে। ১৯৫৮ তখন, আজকের ইন্টারনেট, গ্লোবাল ওয়ার্মিং, বার্লিন ওয়াল পতন কিচ্ছু তখন হয়নি। তাঁর ৬৪ বছর পরে ঐ দেশটা আবার বিশ্বকাপ খেলল। সৌজন্যে গ্যারেথ বেল।
২০১২ সালে টটেনহ্যাম হটস্পারে যখন প্রথম দেখি তখনই টাচটা সর্বোত্তম। বেল, ভারটংগ্যান, ক্লিন্ট ডেম্পসি, লিভারমোর, হার্ডলস্টোনে ভরা ভিয়াস-বোয়াসের সেই টিম থেকে তখন সদ্য বাজে মৌসুম কাটিয়ে রিয়াল মাদ্রিদে পাড়ি দিয়েছে লুকা মদ্রিচ। আর পরের মৌসুমে রেকর্ড ৮৫ মিলিয়নে বেল গেল মাদ্রিদে তরুণ সুপারস্টার হিসেবে।
তারপর আর কী, যা অদৃষ্টে ছিল তাই হল। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এল, লা লিগা তো এলো আর তার সাথে উপরি পাওনা হিসেবে বিবিসি জুটির শেষ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে কার্ডিফের মাঠে সেই অমর গোল। সেকেন্ড হাফে নেমে মার্সেলোর ক্রস থেকে বাইসাইকেল!
ডিপ থেকে সোজা বাঁ-দিক ধরে দৌড়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার বিপক্ষে চির অবিস্মরণীয় গোল। এই বেল রিয়ালে খোদ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর থেকে বড় সুপারস্টার কখনও ছিল না, কিন্তু যদ্দিন মাঠে থেকেছে, বিরুদ্ধপক্ষ জেরবার থেকেছে। ড্রিবলটা টটেনহ্যাম থেকেই এনেছিল, মাদ্রিদ সেটাকে আদর যত্নে শাইন করিয়েছিল শুধু।
কিন্তু দিনশেষে প্লেয়ারটাকে আমি অন্তত মনে রাখব একার হাতে দেশকে বিশ্বকাপে তোলা দিয়েই। ওটাই বেলের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব সোনায় মোড়া ক্যারিয়ারে। এবং সেটা গোটা বিশ্বের বড় বড় সব বিবর্তনের ইতিহাসকে সঙ্গী করে, চৌষট্টি বছর পর। ঐ একটাই লোক, যাকে নিয়ে গোটা ওয়েলশ বিশ্বকাপ জার্নির স্বপ্ন বুনেছিল।
সুইডেনের বিপক্ষে সেই ক্লাসিক ফ্রি-কিক, দেশ বিশ্বকাপে, শেষ প্রান্তে এসে বিশ্বকাপ খেলা, কাজ কমপ্লিট, মিশন সমাপ্ত হল – এবার চলো বুট তুলে রাখি। আসলে বেল নিজে একটা ইতিহাসেরই নাম। তাবড় তারকা ফুটবলারদের ভিড়ে যে মাঠে নামলে রিয়াল সমর্থকদের ঠোঁটে খেলে যেত মুচকি হাসির রেখা।
কেউ জানলই না, বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাইট উইঙ্গারটা নীরবে স্পাইকজোড়া তুলে রাখলেন এই ২০২৩ সালেই। পড়ে রইল স্যান্তিয়াগো বার্নাব্যুর অগুন্তি হার্ট সাইনের রোম্যান্টিক কিসসার দলিল।
গ্যারেথ বেল, উইশ এ ভেরি হ্যাপি রিটায়ারমেন্ট। এর বেশি আজ আর কিছুই তেমন বলতে পারছি না।