জিম্বাবুয়েতে জন্ম নেয়া সাবেক ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যান গ্যারি ব্যালান্স ৩৩ বছর বয়সে জন্মভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেছেন। ইয়র্কশায়ারের সাথে চুক্তি বাতিল করার পর জিম্বাবুয়ের হয়ে ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার জন্য দুই বছরের চুক্তিতে সম্মত হয়েছেন।
হারারেতে জন্ম হলেও ইংল্যান্ডেই পড়াশোনা করেন ব্যালান্স। দারুণ ক্রিকেটীয় নৈপুণ্যের সুবাদে স্কুলের গন্ডি পেরোনোর আগেই জিম্বাবুয়ের হয়ে মাঠে নামেন অনুর্ধব-১৯ বিশ্বকাপে। কিন্তু জাতীয় দলের প্রশ্নে বেছে নেন ইংল্যান্ডকেই। তাঁদের হয়ে ২৩ টেস্টের পাশাপাশি ১৬ একদিনের ম্যাচে প্রতিনিধিত্ব করেন। মূলত ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মাঝে ইংল্যান্ডের জার্সিতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। থ্রি লায়ন্সদের হয়ে ৩৭ গড়ের পাশাপাশি চারটি সেঞ্চুরিও করেন। তবে সর্বশেষ ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডের হয়ে মাঠে নামার পর পাঁচ বছর কেটে যাওয়ায় জিম্বাবুয়ের হয়ে মাঠে নামতে কোনো বাঁধা নেই ব্যালান্সের।
ব্যালান্স বলেন, ‘জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের সাথে যুক্ত হতে পেরে আমি ভীষণ আনন্দিত। অসাধারণ একজন কোচ এবং প্রতিভাবান সব ক্রিকেটারদের সাথে খেলার জন্য মুখিয়ে আছি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জিম্বাবুয়ের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ আমার ক্যারিয়ারে নতুন মাত্রা যোগ করবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘গত বছরখানেক ধরেই আমি জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের কর্তাব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ রাখছিলাম। তাঁদের দ্রুত পদক্ষেপের কারণেই সবকিছু খুব দ্রুত ঘটেছে।’
কয়েকদিন আগেই কাউন্টি ক্লাব ইয়র্কশায়ারের সাথে নিজের চুক্তির ইতি টানেন তিনি। ২০১৪ সাল পর্যন্ত মেয়াদ থাকলেও নতুন শুরুর আশায় এই সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তাছাড়া ইয়র্কশায়ারে তাঁর সময়টা মোটেও ভাল কাটছিলো না। সতীর্থ আজিম রফিকের প্রতি বৈষম্যমূলক মন্তব্যের অভিযোগ উঠে তাঁর বিরুদ্ধে। যদিও তাঁর দাবি ছিল বন্ধুর প্রতি স্রেফ মজা করেই ডাকতেন তিনি। অভিযোগের প্রক্ষিতে পরবর্তীতে আজিম রফিকের কাছে ক্ষমা চান তিনি।
এক বছরের বেশি সময় ধরেই মাঠের বাইরে ছিলেন তিনি। সেই ঘটনার পর মূলত মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। গত সপ্তাহে তাই দুইপক্ষ আলোচনা করেই চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। ব্যালান্স বলেন, ‘ব্যক্তিগত জীবনে আমি বেশ কঠিন সময় পার করেছি। অনেক চিন্তাভাবনা এবং পরিবারের সাথে আলোচনার পর মনে হয়েছে নতুন শুরুর জন্য এটাই সবচেয়ে ভালো সময়। মাঠ এবং মাঠের বাইরে ইয়র্কশায়ার আমাকে সমর্থন দিয়ে গেছে, তাঁদের প্রতি আআমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। আমি আশা করি ক্যারিয়ারের নতুন শুরুতে আমি সবার সমর্থন পাবো।’
নিজের ঘরের ছেলেকে ফিরে দারুণ উচ্ছ্বসিত জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটও। তাঁদের ডিরেক্টর অফ ক্রিকেট হ্যামিল্টন মাসাকাদজা মনে করেন দারুণ ফর্মে থাকা জিম্বাবুয়ের বর্তমান দলে দারুণ সংযোজন হবেন ব্যালান্স। তিনি বলেন, ‘গ্যারিকে পুনরায় নিজেদের মাঝে ফিরে পেয়ে আমরা ভীষণ আনন্দিত। দারুণ প্রতিভাবান এবং অভিজ্ঞ একজন ক্রিকেটার নিজের ক্রিকেট শিকড়ে ফিরে আসলেন। আমাদের ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক দলে দারুণ এক সংযোজন তিনি। আমরা আশা রাখি দলের পক্ষে ব্যবধান গড়ে দেবেন ব্যালান্স।’
আইসিসির বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী কোনো খেলোয়াড় চাইলে আন্তর্জাতিক দল পরিবর্তন করতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে দুই দেশের হয়ে মাঠে নামার মাঝে ব্যবধান থাকতে হবে কমপক্ষে তিন বছর। ব্যালান্স সর্বশেষ ২০১৭ সালে ট্রেন্টব্রিজ টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাঠে নেমেছিলেন থ্রি লায়ন্সদের হয়ে। পরের মাসেই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তাই জিম্বাবুয়ের হয়ে মাঠে নামতে কোনো বাঁধা নেই তাঁর।