শুরুটা হল জহুরুল ইসলামের ঝড়ো আর বড় ইনিংস নিয়ে। মাঝের সময়টা রাঙিয়ে দিলেন সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ – ছোট্ট কিন্তু কার্যকর দু’টি ক্যামিও দিয়ে। আর শেষটায় এসে মাশরাফি বিন মুর্তজা বললেন, ‘পিকচার আভিভি বাকি হ্যায় মেরি দোস্ত!’
সব মিলিয়ে জিতে গেল ‘বুড়ো’দের দল জেমকন খুলনা। আজকের দিনটা হল সিনিয়রদের। গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের বিপক্ষে প্রথম কোয়ালিফায়ারে জিতে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের ফাইনালে পৌঁছে গেল তাঁরা।
টুর্নামেন্টে গ্রুপ পর্বের দুই ম্যাচেই গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের কাছে হেরেছিলো মাহমুদউল্লাহ-সাকিবরা। আজ প্রথম কোয়ালিফায়ারে দলগত পারফরমেন্সে দারুণ জয় দিয়ে প্রথম দল হিসাবে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে তারা। গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম হারলেও তাদের সুযোগ থাকছে। এলিমেনিটরে জয় পাওয়া ঢাকার বিপক্ষে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে মাঠে নামবে তারা।
ফাইনালে যেতে ২১১ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে চট্টগ্রাম যাদের দিকে তাকিয়ে ছিলো সেই লিটন দাস ও সৌম্য সরকার দুজনই আজ ব্যর্থ হয়েছে। ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ বলে কোন রান না করেই মাশরাফির বলে শামিম হোসেনের হাতে ক্যাচ দেন সৌম্য সরকার। লিটন দাস বড় ইনিংস খেলার ইঙ্গিত দিলেও মাশরাফির ২য় শিকারে পরিণত হয়ে লিটন দাস ফিরে যান ১৩ বলে ২৪ রান করে।শুরুতেই ওপেনারদের হারানো চট্টগ্রামকে খেলায় ফিরিয়ে নিয়ে আসে অধিনায়ক মিঠুন ও মাহমুদুল হাসান জয়।
এই দুজন তৃতীয় উইকেট জুটিতে যোগ করেন ৪৭ বলে ৭৩ রান। ২৭ বলে ৩১ রান করে মাহমুদুল মাশরাফির ৩য় শিকারে পরিণত হলে ভাঙ্গে এই জুটি। দারুণ খেলতে থাকা চট্টগ্রামের অধিনায়ক টুর্নামেন্টে নিজের ১ম অর্ধশতক করার পর বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি। আরিফুলের বলে বোল্ড হয়ে মিঠুন ফিরে যান ৩৫ বলে ৫৩ রান করে।
এরপর দ্রুত মোসাদ্দেক ও সৈকত আলী ফিরে গেলে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় চট্টগ্রাম। মোসাদ্দেক ১৭ ও সৈকত করেন ৫ রান। শেষের দিকে শামসুর রহমানের ১০ বলে ১৮ রানে শুধু হারের ব্যাবধানই কমিয়েছে। জেমকন খুলনার হয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। দ্বিতীয় বোলার হিসাবে টুর্নামেন্টে ৫ উইকেট পেয়েছেন নড়াইল এক্সপ্রেস। এছাড়া হাসান মাহমুদ ও আরিফুল ইসলাম দুটি এবং সাকিব আল হাসান একটি উইকেট শিকার করেন।
এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নামা জেমকন খুলনাকে উড়ন্ত শুরু এনে দেন জহুরুল ইসলাম। জাকির হাসানকে সাথে নিয়ে উদ্বোধনী জুটিতে জহুরুল ইসলাম তুলে ফেলেন ৭১ রান। ২২ বলে ১৬ রানের ধীরগতির ইনিংস খেলে জাকির হাসান বিদায় নিলে ভাঙ্গে ওপেনিং জুটি। জাকিরের বিদায়ের পর ইমরুল কায়েস উইকেটে এসে ঝড়ো শুরু করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ১২ বলে ৩ টি চার ও ১ টি ছয়ে ২৫ রান করে মুস্তাফিজের বলে মাহমুদুল হাসান জয়ের হাতে ধরা পড়েন তিনি।
১১৯ রানে ২ উইকেট হারানো র পর ৩য় উইকেট জুটিতে জহুরুল ইসলাম ও সাকিব আল হাসান যোগ করেন ৫১ রান। ৫১ বলে পাঁচটি চার ও চারটি ছয়ে ৮০ রান করে জহুরুল আউট হয়ে গেলে ভাঙ্গে এই জুটি। জহুরুল আউট হওয়ার পর উইকেটে এসে শরিফুলের উপর দিয়ে ঝড় বইয়ে দেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। শরিফুলের ১ ওভারে টানা ৩ টি ছয় মারেন খুলনার অধিনায়ক। মাহমুদউল্লাহর ঝড় বেশীক্ষণ স্থায়ী না হলেও সময়ের চাহিদা মিটিয়ে খেলে যান ৯ বলে ৩০ রানের ইনিংস।
শেষ ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের বলে আউট হওয়ার আগে সাকিবের ব্যাট থেকে আসে ১৫ বলে ২ টি চার ও ২ টি ছয়ে ২৮ রান ও আরিফুলের ব্যাট থেকে আসে ৯ বলে ১৫ রান। মাশরাফি অপরাজিত থাকেন ২ বলে ৬ রান করে। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে সাত উইকেট হারিয়ে ২১০ রানের বড় সংগ্রহ পায় জেমকন খুলনা। মোস্তাফিজুর ২ টি এবং মোসাদ্দেক ও সঞ্জীত শাহ একটি করে উইকেট শিকার করেন।
- সংক্ষিপ্ত স্কোর
জেমকন খুলনা: ২১০/৭(২০) (জাকির- ১৬, জহুরুল- ৮০, ইমরুল- ২৫, সাকিব- ২৮, মাহমুদউল্লাহ- ৩০, আরিফুল- ১৫, শুভাগত- ০, শামিম- ১, মাশরাফি- ৬) (মোস্তাফিজুর- ২/৩১, মোসাদ্দেক- ১/২৭, সঞ্জীত- ১/৫০)
গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম: ১৬৩/১০(১৯.৪) (লিটন- ২৪, সৌম্য- ০, মিঠুন- ৫৩, মাহমুদুল- ৩১, মোসাদ্দেক- ১৭, শামসুর- ১৮, নাহিদুল- ৪, সৈকত- ৫, মুস্তাফিজ- ০, সঞ্জীত- ২*, শরিফুল- ০) (মাশরাফি- ৫/৩৫, হাসান মাহমুদ- ২/৩৫, সাকিব- ১/৩২, আরিফুল- ২/২৬)
ফলাফল: জেমকন খুলনা ৪৭ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: মাশরাফি বিন মুর্তজা (খুলনা)।